পণের জন্য জুলুম, পুড়ে মারা গেলেন অন্তঃসত্ত্বা

পণ বাবদ বাকি ছিল আট হাজার টাকা! বকেয়া সেই পণের টাকা না পেয়ে চরমে উঠেছিল শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার। শেষ পর্যন্ত আগুনে পুড়ে মরতে হল পাঁচ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বাকে। বুধবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পর জামাই-সহ মেয়ের শ্বশুরবাড়ির মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পণের জন্য অত্যাচার ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই তরুণীর বাবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

পণ বাবদ বাকি ছিল আট হাজার টাকা!

Advertisement

বকেয়া সেই পণের টাকা না পেয়ে চরমে উঠেছিল শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার। শেষ পর্যন্ত আগুনে পুড়ে মরতে হল পাঁচ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বাকে। বুধবার সন্ধ্যার ওই ঘটনার পর জামাই-সহ মেয়ের শ্বশুরবাড়ির মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পণের জন্য অত্যাচার ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই তরুণীর বাবা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম কাকলি দে (১৮)। তাঁর শ্বশুরবাড়ি পূর্বস্থলীর উত্তর শ্রীরামপুরের খাদিপাড়ায়। পুলিশের কাছে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করলেও কাকলির পরিবারের সন্দেহ, তাঁদের মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক।

নবদ্বীপের মালঞ্চপাড়ার বাসিন্দা কাকলির সঙ্গে বছরখানেক আগে বিয়ে হয়েছিল খাদিপাড়ার সুমন্ত দে-র। সুমন্ত নিজে বালুচরি শাড়ির কারিগর। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়েতে পণ বাবদ নগদ ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল সুমন্তকে। আরও আট হাজার টাকা বছর দুয়েকের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ, বিয়ের ছ’মাস কাটতে না কাটতেই ওই বকেয়া টাকার জন্য অত্যাচার শুরু হয় কাকলির উপর। বুধবার অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানোর কিছুক্ষণ পরেই কাকলির মৃত্যু হয়।

Advertisement

মৃতের বাবা খোকন ঘোষ বলেন, “মেয়েটা ভাল থাকবে বলেই তো ওই পরিবারে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই মিলে ওরা আমার মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারল!” কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, “পণের জন্য অত্যাচার, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা রুজু করা হয়েছে। তল্লাশি শুরু হয়েছে পলাতক অভিযুক্তদের খোঁজেও।” পণের জন্য ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে কি না তা-ও দেখা হবে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও।

নবদ্বীপের বাসিন্দা তথা সমবায় দফতরের আধিকারিক বনানী দাস মনে করেন, মেয়েকে ভাল রাখতে গিয়েই অনেক সময় অভিভাবকরা মেয়ের সর্বনাশ করে বসেন। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রেও নাবালিকার বিয়ে দিয়েছিল ওই পরিবার। তারপর মেয়ের শ্বশুরবাড়ির দাবি মতো ওই তরুণীর পরিবার পণের টাকাও দিয়ে যাচ্ছিলেন।”

রোজগারের জন্য কখনও রিকশা চালান, কখনও দিনমজুরের কাজ করেন কাকলির বাবা। কিন্তু মেয়ে ভাল থাকবে বলে কিছুটা নিজেদের সাধ্যের বাইরে গিয়েই সুমন্তর সঙ্গে বিয়ে দেয় কাকলির পরিবার। খোকনবাবু জানান, কাকলির বিয়েতে দু’ভরি গয়না, আসবাবপত্র ছাড়াও তিনি নগদ ৩৫ হাজার টাকা পণ দিয়েছিলেন। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে, বকেয়া আরও আট হাজার টাকা ও সোনার কানের দুল দু’বছরের মধ্যে তিনি দিয়ে দেবেন। ইতিমধ্যে সে দুলও তিনি দিয়েছেন। খোকনবাবু বলছেন, “ছ’মাস যেতে না যেতে ওরা মেয়েটার ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে দিল।” তাঁর দাবি, “মারধরের কথা যাতে আমাদের না বলতে পারে সেই জন্য ওর শাশুড়ি এবং এক বিবাহিত ননদ সব সময় মেয়েকে নজরবন্দি করে রাখত।”

শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দিন দশেক আগে কাকলি মালঞ্চপাড়ায় বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন। তাঁর দাদা তাপস ঘোষ বলেন, “বোন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। এই অবস্থায় মারধর করলে সন্তানের ক্ষতি হবে, এই ভয়ে বোন আমাদের বাড়ি চলে এসেছিল। কিন্তু গত সোমবার সুমন্ত এসে বোনকে নিয়ে যায়।”

বুধবার নবদ্বীপ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ছিলেন দেবরাজ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “যখন কাকলিদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে আনা হয় তখনও তাঁর সংজ্ঞা ছিল। আমি বার বার জানতে চেয়েছিলাম যে তাঁর গায়ে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কি না। উত্তরে শুধু ‘আমাকে সবাই মিলে খুব মারছে...’ বলতে পেরেছেন ওই তরুণী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন