ফুটবল লিগের একটি মুহূর্ত। —ফাইল চিত্র।
মাঠ আছে। ক্লাব আছে। আছে স্থানীয় পর্যায়ে লিগ থেকে ছোটবড় হাজারো টুর্নামেন্টও। কিন্তু খেলবে কে? অভাব খেলোয়াড়ের। মফস্বল শহর থেকে গ্রাম কিংবা শহরতলি থেকে জেলা সদর, ফাঁকা ফুটবল মাঠের এ বড় বন্ধ্যা সময়। দিনের বেলায় শুকোয় মরশুমি ফসল, তাঁতের সুতো অথবা ধোপা বাড়ির ধোয়া কাপড়। অবাধে চড়ে বেড়ায় গরুছাগল। সন্ধ্যা নামলেই বসে মদ জুয়ার আসর।
পাড়ার ক্লাবে যখন নিয়মিত এগারো জনের ফুটবল দল গড়তে হিমশিম খাচ্ছেন ক্লাব কর্তারা। তখন বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার জন্য টিভির সামনে মাসভর আট থেকে আশির রাত জেগে হামলে পড়া দাপাদাপি! ছোটদের ফুটবল খেলতে দিতে চান না বাবা মায়েরা আর একটু বড়দের সময় নেই খেলাধূলা করে সময় নষ্ট করবার। ফলে স্থানীয় ক্লাব ফুটবল লিগই হোক অথবা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ছোটবড় টুর্নামেন্ট, খেলোয়াড়ের অভাবে ধুঁকছে প্রত্যেকে। খেলাধূলার প্রতি ক্রমশ আগ্রহ কমছে সব বয়সের ছেলেদের। আর মেয়েদের তো এ দেশে খোলা মাঠে দাপাদাপি করে খেলতে দেখার দৃশ্য বিরল! তবে সবচেয়ে দুরূহ হয়ে উঠছে নতুন প্রজন্মের দশ বারো বছর বয়সীদের মাঠে পাওয়া। বিরাট কিট ঘাড়ে করে শীতকালে ক্রিকেট মাঠে যদিও বা এদের দেখা মেলে, ফুটবল মাঠে নৈব নৈব চ। আর ছোটদের মাঠে না আসার নিট ফল খেলোয়াড় পেতে ক্লাবগুলির কালঘাম।
এইসব মাঠ-বিমুখ ছোটদের ফুটবলে আগ্রহী করে তুলতে বড় মাপের উদ্যোগ নিয়েছে নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা। নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের নিয়ে এক ‘আন্তঃ কোচিং ক্যাম্প ফুটবল প্রতিযোগিতা’-র আয়োজন করা হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনায় এবং নদিয়া জেলা পরিষদের সহযোগিতায় সারা নদিয়া জুড়ে ১২ থেকে ১৫ বছরের ক্ষুদে ফুটবলারদের নিয়ে মোট ৫৩টি ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবির করা হয়েছে। প্রায় দেড়হাজার উৎসাহী ছোটরা ওই শিবিরগুলিতে প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। প্রতিটি শিবির থেকে বাছাই খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি করে দল গড়া হবে। এভাবে মোট ৫৩টি দল নিয়ে জেলাব্যাপী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। আগামী ৩০ জুলাই - ৯ আগষ্ট পর্যন্ত চলবে এই প্রতিযোগিতা।
এ বিষয়ে নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছেলেদের খেলার মাঠে আবার ফিরিয়ে আনতে গত কয়েক বছর ধরেই আমরা নানা ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এই ‘আন্তঃ কোচিং ক্যাম্প ফুটবল প্রতিযোগিতা’-র এটি চতুর্থ বর্ষ। ধারাবাহিক ভাবে জেলা জুড়ে অনুর্দ্ধ ১৫ বছরের শিশুদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করার সুফল এই বছর পাওয়া যাচ্ছে। দলের সংখ্যা এক লাফে এ বারে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যার অর্থ, জেলায় ওই ধরনের ছোটদের জন্য ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবিরের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে। এই শিবিরের সুফল সবচেয়ে বেশি পাবেন স্থানীয় ক্লাবগুলি। আগামী দিনে এই শিবিরগুলিই খেলোয়াড় সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠবে। সেজন্য আমরা ছোটদের এই শিবিরগুলি এবং আন্তঃ শিবির প্রতিযোগিতাটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।” ৫৩টি দলের মধ্যে থেকে চারটি করে দল নিয়ে তৈরি হবে একটি করে গ্রুপ। প্রাথমিক পর্বে গ্রুপের চারটি দল নিজেদের মধ্যে লিগ পদ্ধতিতে খেলবে। প্রতি গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন দল পৌঁছোবে পরবর্তী পর্যায়ে। এই পর্যায় থেকে খেলা হবে নক আউট পদ্ধতিতে। অন্যান্য খেলাগুলি সমস্ত জেলা জুড়ে হলেও দুটি সেমি ফাইনাল এবং ফাইনাল খেলা হবে আগামী ৭, ৮ এবং ৯ আগষ্ট কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে। নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে ন্যূনতম ২০ জন খেলোয়াড় নিয়ে প্রতিটি শিবির চলছে। তবে বেশির ভাগ শিবিরেই ৩০ থেকে ৪০ জন করে ক্ষুদে ফুটবলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এদের মধ্যে ১৮ জনকে বেছে নিয়ে গড়া হবে এক একটি ‘কোচিং ক্যাম্প টিম’। টিমের প্রত্যেক ফুটবলারকে দেওয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ ফুটবল কিট। খেলার দিন যাতায়াত ভাড়া এবং টিফিনের ব্যবস্থা থাকছে প্রতি দলের জন্য। রেফারিদেরও ম্যাচ পিছু দেওয়া হবে সাম্মানিক।
খেলাধূলা নিয়ে নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার নানা পরিকল্পনার সুফল ইতিমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। আইএফের ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট জুনিয়র ফুটবলে নদিয়া এবার রানার্স হয়েছে। কর্তাদের আশা ৫৩টি শিবিরের দেড় হাজার থেকে যদি ৫৩ জনও ফুটবলটা মন দিয়ে খেলে তা হলেই ঢের। আপাতত কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর, নবদ্বীপ থেকে হরিণঘাটা ব্যস্ত ছোটদের ফুটবল নিয়ে।