মূর্তি দেখতে ভিড় গ্রামবাসীর। —নিজস্ব চিত্র।
এর আগে সাগরদিঘির হাটপাড়ায় কুড়ি হাজার বছরের পুরনো জনবসতির সন্ধান মিলেছিল। রবিবার দুপুরে সেখান থেকে মাইল খানেক দূরে মনিগ্রামে বাড়ি তৈরির ভিত খুঁড়তে গিয়ে উদ্ধার হল ৪ ফুট উচ্চতার কষ্টি পাথরের একটি নারায়ণ মূর্তি।
শনিবার মনিগ্রামে ঈদগাহের পাশে কাজেম শেখ নিজের জায়গায় বাড়ি তৈরির জন্য ভিত কাটছিলেন। তখনই মাটির ৫ ফুট গভীরতা থেকে উদ্ধার হয় কষ্টি পাথরের মূর্তিটি। দু’ফুট চওড়া ওই মূর্তির পদতলে শোভা পাচ্ছে চারটি ছোট মূর্তি। দুপুর ২টো নাগাদ খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই সংখ্যালঘু পাড়াটিতে ভিড় জমাতে শুরু করেন আশপাশের লোকেরা। কেউ মূর্তির উদ্দেশে পয়সা ছোড়েন, কেউ ফুল, কেউ তেল-সিঁদুর মাখিয়ে দেন। খবর পেয়ে সাগরদিঘি থেকে আসে পুলিশ। গ্রামেরই একটি মন্দিরে মূর্তিটি রাখে তারা। এ দিন ঘটনাস্থলে একটি মন্দির বানানোর দাবি ওঠে ভিড় থেকে। স্থানীয় বাসিন্দা গফুর শেখ বলেন, “লোকজন যদি চায়, মন্দির বানাতে আপত্তি নেই আমাদের।”
লোকজন অবশ্য মন্দিরের চেয়েও মাটির তলায় লুকিয়ে থাকা পুরনো সভ্যতার কথা জানতে আগ্রহী বেশি। বছর ছ’য়েক আগে মনিগ্রাম থেকে মাইল খানেক দূরে হাটপাড়ায় রাজ্য প্রত্ন দফতর খনন কার্য চালিয়ে প্রায় ২৪০টি প্রস্তর আয়ুধ উদ্ধার করেছিল। পুনের ডেকান কলেজের দুই প্রত্ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শরদ রাজগুরু ও ভাস্কর দেওতার তখন হাটপাড়ায় এসে খননের বিভিন্ন মাটির স্তর ও উদ্ধার হওয়া প্রস্তর আয়ুধগুলি দেখে যান। পুনের দুই প্রত্ন বিশেষজ্ঞই জানান, প্রাপ্ত প্রস্তরগুলি প্রায় সবই চার্ট, এ্যাগেট ও চ্যালসেডোনি। ১৮ থেকে ২০ হাজার বছর আগে ওই এলাকায় জনবসতি ছিল।
সেই সময় রাজ্য প্রত্ন দফতর জানিয়েছিল, ওই এলাকায় নতুন করে খনন কাজ চালানো হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। হাটপাড়ায় যাঁর জমিতে ওই প্রত্নবস্তু উদ্ধার হয়েছিল, সেই তারক মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার প্রাচীন ইতিহাস জনসমক্ষে আনার জন্য জমিতে খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। মাস দু’য়েক কাজ চলেছিল। তারপর বন্ধ হয়ে যায়। এটা খুবই দুঃখের।”
এ দিকে, নজরদারি না থাকায় বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া বহু প্রত্ন সামগ্রী বেহাত হয়ে গিয়েছে সাগরদিঘি থেকে। মনিগ্রামের বাসিন্দা নির্মলকান্তি প্রামাণিক যেমন জানান, এ দিনের উদ্ধার হওয়া মূর্তির মতোই একটি মূর্তি এর আগে গ্রামের লোলাপুকুরে পাওয়া গিয়েছিল। তিনি বলেন, “মনিগ্রামে খোঁড়াখুঁড়ি করলে এই রকম আরও অনেক প্রত্নসামগ্রী পাওয়া যাবে। এগুলি নিয়ে গবেষণা হলে অতীতের অনেক কথা জানা যেত। প্রত্নতত্ত্বের ইতিহাসে সাগরদিঘি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত।”
সাগরদিঘির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাজ্য প্রত্ন বিভাগও আশাবাদী যে এখানে মাটির নিচে উন্নততর অতীত নগর জীবনের সন্ধান মিলবে। গত বছর ৩১ মে সুতির আহিরণে জাতীয় সড়ক তৈরির সময় বহু স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়। উদ্ধার করা ১১টি স্বর্ণমুদ্রা পরীক্ষার পর রাজ্য প্রত্ন দফতর জানায়, সেগুলি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলের। সেই সব স্বর্ণমুদ্রাগুলি পরে কলকাতার রাজ্য সংগ্রহালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
খুঁড়লেই খুলছে ইতিহাসের পাতা। খোঁজার আগ্রহেই যা অভাব।