কলেজের অফিস ঘরে দু’পক্ষের হাতাহাতি। —নিজস্ব চিত্র।
ফের উত্তাল হয়ে উঠল বহরমপুর কলেজ। সোমবার দুপুরে কলেজ শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা বাঁশ-কাঠ-লাঠি নিয়ে ছাত্র পরিষদের সদস্যদের উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। পরে বহরমপুর থানার টাউন সাব-ইন্সপেক্টর সন্দীপ পালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী কলেজে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বহরমপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শান্তনু ভাদুড়ি বলেন, “কলেজে ভর্তি হওয়া নতুন ছাত্রছাত্রীদের ঠিকানা ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করা নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোন পক্ষ-কখন ওই তথ্য সংগ্রহ করবে, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বহরমপুর কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ছাত্রছাত্রীদের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর-সহ যাবতীয় তথ্য কলেজের ‘গার্ড ফাইলে’ নথিবদ্ধ থাকে। প্রতি বছরই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে সমস্ত ছাত্র সংগঠন কলেজের অফিস ঘরে বসে ওই গার্ড ফাইল থেকে নব্য ছাত্রছাত্রীদের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর টুকে রাখে, যাতে ভোটে প্রার্থী হওয়া থেকে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য নতুনদের কাছে আবেদন জানানো যায় সহজে। গত কয়েক দিন ধরে কলেজের অফিস ঘরে বসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা গার্ড ফাইল থেকে ওই তথ্য লিখে রাখার কাজ করছিলেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, “৪৬১৯ জনের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছাত্রছাত্রীর তথ্য সংগ্রহ হয়ে গিয়েছে। এ দিন বাকি ছাত্রছাত্রীর তথ্য সংগ্রহের সময়ে ছাত্র পরিষদের সদস্যরা এসে তাদের লিখতে দিতে হবে বলে দাবি জানায়। আমাদের লেখা শেষ হলে লিখতে দেওয়া হবে জানানো হলে তারা মানেনি। তখন দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বেধে যায়। ছাত্র পরিষদের বহিরাগতরা আমাদের উপরে হামলা চালায়।”
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা ছাত্র পরিষদের সভাপতি সরফরাজ শেখ রুবেল বলেন, “আমাদের সদস্য-সমর্থকরা ওই তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা লাঠি-বাঁশ-কাঠ নিয়ে হামলা চালায়। আমাদের উপরে হামলার পূর্ব পরিকল্পনা ওদের ছিল। বচসা চলাকালীন ওরা লাঠি-বাঁশ-কাঠ জোগাড় করে নিয়ে অফিস ঘরের কাচের টেবিলের উপরে উঠে আমাদের সদস্যদের মারধর করে। গোটা ঘটনা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের উপস্থিতিতেই ঘটেছে।”
গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ বহরমপুর কলেজে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে বহরমপুর থানার আইসি অরুণাভ দাসের আচরণে ক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। কলেজে পৌঁছে উত্তেজিত দু’পক্ষকে যখন বহরমপুর টাউন সাব-ইন্সপেক্টর সন্দীপ পাল শান্ত করতে ব্যস্ত, তখন বহরমপুর থানার আইসি অরুণাভ দাস অবিলম্বে কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন ভারপ্তাপ্ত অধ্যক্ষকে। কলেজ অফিস ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “কলেজ বন্ধ করে দিন। এই ভাবে হয় না।” তার পরেই এ দিন অলিখিত ছুটি ঘোষণা করে দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা কলেজ ছেড়ে চলে যান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ বিষয়ে কোনও সদুত্তর দেননি।