সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ফাঁসির আদেশ পুনর্বহাল করলেন কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক(তৃতীয়)। বৃহস্পতিবার বিচারপতি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বিমল সর্দার নামে অভিযুক্ত যুবককে ফাঁসির নির্দেশ দেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী বিকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ই ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট মামলার কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পুর্নবিবেচনার জন্য পাঠিয়েছিল।” সেই নির্দেশ অনুযায়ী আবার ময়নাতদন্তের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এবং ৩১৩ ইআরপিসি অনুযায়ী আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু এবারেও দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক আগের রায়ই বহাল রেখেছেন।
২০১৩ সালের ১০ জুন দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় কৃষ্ণগঞ্জ থানার গেদে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রী। সারা রাত খুঁজেও সন্ধান মেলেনি। পরদিন সকালে বাড়ির কাছেই একটি বাঁশ বাগানের ভিতর তার মৃতদেহ পড়ে আছে বলে জানায় বিমল সর্দারই। এলাকার বাসিন্দারা সে সময়ই তাঁকে সন্দেহ করেন। চলে গণপিটুনি। বিমলবাবু দোষ স্বীকারও করে নেন।
পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে সে দিন স্কুল থেকে ফেরার সময় এই ছাত্রী বিমলবাবুর সঙ্গেই ছিল। তার পর থেকেই আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিমল সর্দার-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তিন জনকে গ্রেফতার করা হলেও পরে অন্য দু’জনকে মামলার বাইরে রাখে পুলিশ। ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল বিচারক বিমল সর্দারকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির নির্দেশ দেন। সেই রায় কার্যকরি করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে পাঠানো হয়। কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতি মামলায় বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে পুর্নবিবেচনার জন্য আবার কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে পাঠায়।
এ দিন আদালতে হাজির হয়েছিলেন বিমলবাবুর স্ত্রী-সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। রায় ঘোষণার পরেই জ্ঞান হারান বিমলের মা কাজলি সর্দার। এক বছরের পুত্র সন্তানকে বুকে জড়িয়ে স্ত্রী পিঙ্কি সর্দার বলেন, “আমার স্বামী নির্দোষ। উনি এমন কাজ করতেই পারেন না।” কিন্তু একেবারেই নির্বিকার থেকেছেন বিমল সর্দার নিজে। গতবারের মত এবারও তিনি নিরুত্তাপ থেকেছেন, আদালতের ভিতরে একটি কথাও বলেননি। এজলাসের বাইরে বেরিয়ে এসে অবশ্য বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” স্বাভাবিক নিয়মে মামলাটি আবারও পাঠানো হবে হাইকোর্টে।