বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে প্রহৃত হলেন বিদ্যুৎবণ্টন দফতরের কর্তা। মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে খড়গ্রাম থানার জয়পুর দিয়াড়া গ্রামে।
সাতটি বিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্পে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ করে ধান চাষের কাজে লাগাচ্ছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। সেই খবর পেয়েই অভিযানে গিয়েছিলেন বিদ্যুৎবণ্টন দফতরের আধিকারিক সজল মণ্ডল। একটি পাম্পের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করেও ফেলেন তিনি। তারপরই এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করেন। চোখের পাশে গুরুতর আঘাত পান তিনি। তারপর অন্য কয়েকজন বাসিন্দা তাঁকে উদ্ধার করে খড়গ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে পাঠান হয়। শুধু সজলবাবুই নন। গ্রামের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎবণ্টন দফতরের দুই গাড়ি চালককে মারধরের অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ উন্মত্ত জনতা বাজেয়াপ্ত করা বিদ্যুৎবাহী তারও ছিনিয়ে নেয়।
বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের কান্দি বিভাগের বিভাগীয় আধিকারিক হরনাথ ঘোষ বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে। খবর দেওয়া হয়েছে স্থানীয় মহকুমাশাসকেও। তিনি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন।” অন্য দিকে, মঙ্গলবার রাতেই খড়গ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সজলবাবুও।
তবে কান্দি এলাকায় হুকিং নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন স্থানীয় বাসিন্দারাও অভিযোগ জানিয়েছেন সব কিছু জেনেও নির্বিকার থাকে প্রশাসন। এমনকী বিদ্যুৎবণ্টন দফতরের কর্তারা কোনও পদক্ষেপ করেন না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ কান্দি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় সন্ধে নামলেই শুরু হয়ে যায় হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহার। এমনকী সরকারি কার্যালয়ের সামনেই ঝুলে থাকে হুকিং-এর তার। কোথাও কোথাও দিনের বেলা খুলে নেওয়া হয়, কোথাও দিন ভর রাস্তার উপরে থাকা বিদ্যুতের তারের সঙ্গে হুকিং লেগেই থাকে।
কোনও কোনও এলাকায় প্রায় সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেওয়া হয় হুকিং করে। কোনটি কার বাড়ির তার তা নির্দিষ্ট করার জন্য রয়েছে নানা রকম কৌটোর ব্যবস্থা। কারও দন্তমাজনের টিউব তো কারও নারকেল তেলের কৌটো। হুকিং করেই চলছে টিভি, রেফ্রিজারেটর থেকে জল তোলার পাম্প।
দিন কয়েক আগেই বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের এক কর্তা জানিয়েছিলেন মগরাহাট কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে রাতের হুকিং বন্ধ করার অভিযান কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছে। বছর দেড়েক আগে মগরাহাটে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল বিদ্যুৎ দফতরের কর্তা ও পুলিশকে। পরে পরিস্থিত এমন জটিল হয়ে ওঠে যে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। মৃত্যু হয় দু’জনের। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ দফতরকে ভর্ৎসনা করা হয়। তারপর থেকেই ওই কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্তা। যদিও বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের কান্দি বিভাগের বিভাগীয় আধিকারিক হরনাথ ঘোষ ওই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “হুকিং বন্ধের বিরুদ্ধে আমাদের লাগাতার অভিযান জারি আছে। গত এক বছরে আমাদের এলাকায় ২৭৩ জনের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পের সংখ্যা ২০৮টি।” জনরোষের ঘটনা যে এখনও ভয়াবহ তা প্রমাণ হল মঙ্গলবারের ঘটনায়।
এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, এরপর কি আর অভিযান হবে? হয়তো অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগই বৈধ হয়ে যাবে। এ দিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের বিল। ২০১২-২০১৩ আর্থিক বর্ষে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরে কান্দি বিভাগের ৩৪ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে ছিল। ২০১৩-২০১৪ আর্থিক বর্ষের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক ধাক্কায় ৭কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বকেয়া বেড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পের বকেয়া বিল আছে প্রায় ৪ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমান বকেয়া প্রায় ৪২ কোটি টাকা।