বৃদ্ধার মৃত্যু, আতঙ্কে চাকদহ

কংক্রিটের সুনসান রাস্তা। দু’ধারে বাড়ি। অনেক পরে এক জনের দেখা পাওয়া গেল। বেলা দে’র বাড়ি কোথায়? জানতে চাইতেই ওই মহিলা এ দিকে-ওদিকে তাকিয়ে বললেন, “সামনে খানিকটা গিয়ে ডান দিকের রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যান।” কথা শেষ হতে না হতেই সোজা ঢুকে গেলেন ঘরের মধ্যে। বেলাদেবীর বাড়িতে হামলার ঘটনার তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু নদিয়ার চাকদহ পুরসভার ১ নম্বর ঠাকুরনগর কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাটেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০০:৩০
Share:

চাকদহে সিপিএমের প্রতিবাদ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

কংক্রিটের সুনসান রাস্তা। দু’ধারে বাড়ি। অনেক পরে এক জনের দেখা পাওয়া গেল। বেলা দে’র বাড়ি কোথায়? জানতে চাইতেই ওই মহিলা এ দিকে-ওদিকে তাকিয়ে বললেন, “সামনে খানিকটা গিয়ে ডান দিকের রাস্তা দিয়ে সোজা চলে যান।” কথা শেষ হতে না হতেই সোজা ঢুকে গেলেন ঘরের মধ্যে। বেলাদেবীর বাড়িতে হামলার ঘটনার তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু নদিয়ার চাকদহ পুরসভার ১ নম্বর ঠাকুরনগর কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক কাটেনি। সেই কারণেই অচেনা কাউকে দেখলে তাঁরা কিছু বলতে চাইছেন না। শাসক দলের কেউ অচেনা কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখে ফেলল কিনা, সেটাও তাঁদের কাছে ভাবনার বিষয়।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে মারা গিয়েছেন বেলা দে (৫৮)। সোমবার সকালে কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে বাড়ির কাছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় তিনি অসুস্থ বোধ করেন। তাঁকে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে কল্যাণীর গাঁধী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

চাকদহ রেল স্টেশন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর ঠাকুরনগর কলোনিতে বেলাদেবীর বাড়ি। ওই পরিবারটি এলাকায় বামপন্থী বলে পরিচিত। অভিযোগ, রবিবার তাঁদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা।

Advertisement

বেলাদেবীর ছোট ছেলে বিজন দে জানিয়েছেন, রাত প্রায় এগারোটা নাগাদ কয়েক জন তৃণমূল কর্মী সিপিএমের পতাকা, ফেস্টুন সরিয়ে নিজেদের পতাকা টাঙাচ্ছিল। বিজন প্রতিবাদ করলে তাঁরা চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বিজন বলেন, “আমি ও মা রারান্দায় ছিলাম। গ্রিলের দরজায় তালা দিয়ে রেখেছিলাম। আমাকে বের করে দিতে বলে। গ্রিলের দরজা না খুললে ওরা লাথি মারে। আচমকা খুলে গিয়ে গ্রিলের একটা অংশ মায়ের গায়ে লাগে। ওরা হাত চালালে কয়েকটা ঘুসিও এসে মায়ের গায়ে লাগে।”

বিজনের অভিযোগ, “ওই ঘটনার পর থেকে মা আতঙ্কে ছিলেন। বুকের যন্ত্রণা অনুভব করছিলেন। একবার বমিও করেছিলেন। পর দিন সন্ধ্যায় মা আবার সেই ব্যথা অনুভব করেন। হাসপাতালে ভর্তি করলে মায়ের মৃত্যু হয়। আমার বিশ্বাস, মাকে আক্রমণ না করলে এ ঘটনা ঘটত না।”

ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যায় চাকদহে বিক্ষোভ মিছিল করে সিপিএম। জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “চোখের সামনে ছেলেদের উপর হামলার ঘটনায় বেলা দে অসুস্থ হয়ে পরেন। তাঁর মনের ওপর এই ঘটনার প্রভাব পড়ে। শেষে তাঁর মৃত্যু হয়।” সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। দলীয় কর্মীদের বাড়ীতে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। বয়স্ক মানুষও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। নির্বাচনের দিন ভোট লুট হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। হিংসা বন্ধের দাবি করে এই মিছিল করা হয়েছে বলে জানান সিপিএম নেতারা।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। তবে একটি স্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে ভাবে রাজনীতি হচ্ছে তা আরও দুর্ভাগ্যজনক।” চাকদহ শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দীপক চক্রবর্তী বলেন, “সুস্থ ছিলেন বলেই ভোটের দিন দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বেলাদেবী ভোট দিয়েছেন। পরে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ছেলে পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তাতে মাকে মারধোর করার কোনও বিষয় লেখা হয়নি। ওই রাতে তাদের বাড়িতে কেউ যায়নি।” চাকদহের বিডিও বিপ্লব সরকার বলেন, “হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে কেউ মারধর করেনি। অভিযোগও কেউ করেননি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন