রাত-দিন সব সময়ই পাখা ঘোরে ঢিমেতালে। কখনও বা একেবারেই থেমে যায় পাখার গতি। বাল্ব ও টিউবলাইটও ঠিক ভাবে জ্বলে না। প্রায় এক দশক ধরে নদিয়ার দেবগ্রামের সর্বমঙ্গলা পাড়ার প্রায় চল্লিশটি পরিবার এই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। শীত-গীষ্ম-বর্ষাবছরভর লো-ভোল্টেজ। এই নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বিদ্যুৎ দফতরের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের গরুর হাট থেকে স্থানীয় ডি কে গার্লস হাইস্কুল পর্যন্ত বিস্তৃত সর্বমঙ্গলা পাড়ার সিংহভাগ বাসিন্দার পেশা ছোট বা মাঝারি ব্যবসা। প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে বিদ্যুৎসংযোগ। কিন্তু তা থেকে বিদ্যুতের কোনও সুবিধা পান না এলাকায় কয়েকশো লোকজন। ভোরের দিকে ঘণ্টাখানেক বাদ দিলে রাত-দিন সব সময়ই লো-ভোল্টেজ থাকে পাড়ার প্রতিটা বাড়িতে। বেশি ওয়াটের লাইট জ্বলে না। একবার টিউবলাইট নিভে গেলে ভোল্টেজ কম থাকার দরুন তা আর জ্বলতেই চায় না। আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও বিদ্যুতের অবস্থা দেখে কেউ বাড়িতে ফ্রিজ রাখতে পারেন নাএমনকী মোমবাতি জ্বেলে পনাশোনা করতে হয়। স্থানীয় একটি গার্লস হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া পিয়ালী বর্মনের কথায়, ‘‘হ্যারিকেন বা মোমবাতির আলো না জ্বাললে বইয়ের অক্ষর দেখা যায় না। গরমকালে পাখা ঘোরে না। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকার পরেও এই কষ্ট সহ্য করা যায় না।’’ পরিষেবা ঠিকমতো না মিললেও মাসের শেষে বিল কিন্তু আসে ষোলো আনা। পেশায় গাড়ির চালক বিভাস সিংহের আক্ষেপ, ‘‘তিন ভাই একত্রে থাকি। গেল মাসেই প্রায় বারোশো টাকার বিল মেটালাম। কিন্তু কোনও পরিষেবা পাচ্ছি না।’’
কেন এই সমস্যা? বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, ওই পাড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছয় একটি মাত্র ২২০ ভোল্টের তারের মাধ্যমে। নিয়ম মতো একাধিক তার না থাকার কারণেই সমস্যা মিটছে না।
বছর দশেকের পুরনো এই সমস্যা নিয়ে এলাকার বাসিন্দা বার বার সরব হয়েছেন। মাস তিনেক আগেও দেবগ্রাম বিদ্যুৎ বণ্টন অফিসের স্টেশন ম্যানেজারকে এলাকার পঁচিশটি পরিবারের লোকজন লো-ভোল্টেজের সমস্যা নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারপরেও সুরাহা হয়নি। স্টেশন ম্যানেজার রজত বর্মনের দায়সারা জবাব, ‘‘এ বার আশা করি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’
এক দশক ধরে একই আশ্বাস শুনতে শুনতে ধৈর্য হারিয়েছেন সর্বমঙ্গলা পাড়ার বাসিন্দারা।