বিভিন্ন হোটেলে নজরদারি শুরু

মালদহে বেসরকারি হোটেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের এসি মেশিন বিপত্তির জেরে শুক্রবার সকালে জেলাপ্রশাসনিক কর্তাদের মোবাইলে একটি এসএমএস এসেছে। তাতে লেখা রয়েছেকোনও ‘পলিটিক্যাল ভিআইপি’ বেসরকারি হোটেলে থাকলেও পূর্ত দফতরের কর্মীদের (ইলেকট্রিক ও সিভিল) সেই হোটেলে পাঠিয়ে সমস্ত বিষয় সরজমিনে তদন্ত করে দেখতে হবে।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৮
Share:

মালদহে বেসরকারি হোটেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরের এসি মেশিন বিপত্তির জেরে শুক্রবার সকালে জেলাপ্রশাসনিক কর্তাদের মোবাইলে একটি এসএমএস এসেছে। তাতে লেখা রয়েছেকোনও ‘পলিটিক্যাল ভিআইপি’ বেসরকারি হোটেলে থাকলেও পূর্ত দফতরের কর্মীদের (ইলেকট্রিক ও সিভিল) সেই হোটেলে পাঠিয়ে সমস্ত বিষয় সরজমিনে তদন্ত করে দেখতে হবে। পূর্ত দফতরের সচিব ইন্দিবর পাণ্ডের মোবাইল থেকে ওই এসএমএস এসেছে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী এখন নির্বাচনী প্রচারে মালদহে রয়েছেন। সেখানে তিনি একটি বেসরকারি হোটেলে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মালদহ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র রায়ের সমর্থনে সভা করে ফিরে আসার পরে হোটেলের ঘরের এসি মেশিন ফেটে অল্পের জন্য রক্ষা পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই এসি মেশিন বিভ্রাটের ১২ ঘন্টার মধ্যেই মোবাইল মারফত ওই মেসেজ পেয়ে জেলাপ্রশাসনিক কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন।

বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, “বেসরকারি হোটেল বা অতিথি আবাস তো পূর্ত দফতরের অধীনে নয়। তাই ওই মেসেজ জেলা পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বা নির্বাচনের কাজে জড়িত আধিকারিক যাঁরা বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি অতিথি আবাসে রয়েছেন, সেই সব জায়গাগুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।”

Advertisement

এসি-কাণ্ডের পরে এদিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের সমর্থনে ফরাক্কায় সভা করেন। ওই সভা শেষে মালদহ ফিরে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী এনটিপিসি অতিথি আবাসে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নেন। ওই অতিথি আবাসের বিদ্যুতের সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার জন্য এদিন সকালেই বহরমপুর থেকে পূর্ত দফতরের (ইলেকিট্রক্যাল) একটি দল ফরাক্কা পৌঁছয়। ওই দলে ছিলেন জেলা পূর্ত দফতরের (বহরমপুর ডিভিশন) দু’জন সহকারী বাস্তুকার, এক জন উপ-সহকারী বাস্তুকার, দু’জন এসি মেশিনের মেকানিক ও দু’জন ইলেকট্রিশিয়ান।

পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার (ইলেকট্রিক্যাল) বিশ্বনাথ মল্লিক বলেন, “আমরা এনটিপিসি গেস্ট হাউসের সমস্ত এসি মেশিন পরীক্ষা করে দেখি। তবে এসি মেশিনের কোনও ত্রুটি পাইনি। তবে ১টি এসি মেশিনে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা কম হচ্ছিল। গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষকে ওই এসি মেশিনে গ্যাস ভরে নেওয়ার কথা মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে।” এদিকে মালদহের বেসরকারি হোটেলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের এসি মেশিন বিভ্রাটের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্কতামূলক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলাপ্রশাসন। জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের ওই ঘটনা জানার পরে ওই রাতেই জেলাপ্রশাসনের এক কর্তা শিলিগুড়িতে পূর্ত দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিমাদ্রী দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি টেলিফোনে বেশ কিছু নির্দেশও দেন তাঁকে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জেড ক্যাটেগরি নিরাপত্তা পান। ফলে মুর্শিদাবাদে এসে তিনি যেখানে থাকবেন, সেই বেসরকারি অতিথি আবাস বা বেসরকারি হোটেলের লিফট থেকে এসি মেশিন-সহ বিদ্যুতের সমস্ত খুঁটিনাটি দিক সরজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”

মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনটে লোকসভা আসন। তার মধ্যে জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদে আগামী ২৪ এপ্রিল ভোট। আগামী ১২ মে বহরমপুরে ভোটগ্রহণ হবে। ফলে শেষ মুহূর্তে জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছে যেমন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ, তেমনই ভোটগ্রহণপর্ব নিষ্কণ্টক করতে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। গণমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের লোকজনও রয়েছে। তাঁরা সকলেই কিন্তু বহরমপুরকে কেন্দ্র করে ঘুরছেন। ফলে বেসরকারি হোটেল ও আবাসের পাশাপাশি সরকারি আবাসগুলিও অতিথিদের ভিড়ে ভরা। বহরমপুরের মহকুমাশাসক বলেন, “কোনও রাজনৈতিক দল যখন সভার অনুমতিপত্র জমা দিতে আসবেন, তখনই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কে আসছেন, তিনি সভার আগে ও পরে কোথায় এবং কতক্ষণ থাকবেন, তাও জেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে তখনই বিস্তারিত জেনে নিয়ে পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দিলে তারাও সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।” জেলাপ্রশাসনের ওই নির্দেশে খুশি মুর্শিদাবাদ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠন। ওই সংস্থার সভাপতি মনোজ সরকার বলেন, “পূর্ত দফতরের লোকজন হোটেলের এসে সমস্ত দিক সরজমিনে খতিয়ে দেখলে আমাদেরই ভাল হবে। প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তে কোনও হোটেল মালিকের অখুশি হওয়ার কথা নয়। আমরা তাঁদের কাজে সহযোগিতা করব। তবে আমরা ভিআইপি বা সাধারণ অতিথি সকলের নিরাপত্তার দিকটিই গুরুত্ব দিয়ে থাকি।”

একটি হোটেলের মালিক চন্দন সরকার বলেন, “৪৯ কেভিএ পর্যন্ত একটা ক্যাটেগরি, যা এলটি কনজিউমার লো-টেনশন গ্রাহক বলা হয়ে থাকে। ৫০ কেভিএ থেকে বাল্ক ক্যাটাগরি বলা হয়ে থাকে। বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা সত্ত্বেও অর্থাৎ ৫০কেভিএ-র কোনও গ্রাহক যদি বিদ্যুতের শুল্ক কম দেওয়ার জন্য ৪৯ কেভিএ পর্যন্ত নিয়ে থাকে। সরকারি পরিভাষায় বিদ্যুৎ চুরি বলা হয়। কিন্তু তার সঙ্গে এসি মেশিন ফেটে যাওয়া বা লিফট্ ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। দুর্ঘটনা তো বলে আসে না। তেমনই সাবধানতাও অবলম্বন করা উচিত। এমনও হতে পারে পূর্ত দফতর সরজমিনে তদন্ত করে দেখে যাওয়ার পরেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”

আর একটি হোটেলের মালিক রানা ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের হোটেলে আগাগোড়া বিদ্যুৎ সারাইয়ের এবং এসি দেখভালের ব্যবস্থা রয়েছে। এসি মেশিনে যে পুরু বা মোটা তার দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া উচিত, অনেক সময়ে তা নেওয়া না হলে ওই ধরনের বিভ্রাট দেখা দিতে পারে। তবে শর্ট সার্কিট থেকে কোনও বিপত্তি না হয়, এ জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন