ব্রজেন্দ্রনাথ শীল স্মরণ

প্রায় ১৩১ বছর আগের কথা। ১৮৮৪ সাল। অঙ্কে এমএ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বছর কুড়ির ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। এমনই এক সময়ে তাঁর শিক্ষক হেস্টিং সাহেব আদেশ করলেন, ‘‘অঙ্ক নয়! তুমি দর্শনে এমএ দাও!’’ শিক্ষাগুরুর কথা শিরোধার্য করলেন অনুগত শিষ্য। পরীক্ষার ফল বের হলে দেখা গেল তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন। দর্শনের মতো অঙ্ক, সাহিত্য থেকে বিজ্ঞান শুরু করে জ্ঞানের সব পরিসরে, সব শাখায় তাঁর বিচরণ ছিল অবাধ ও অনায়াস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৫৮
Share:

প্রায় ১৩১ বছর আগের কথা। ১৮৮৪ সাল। অঙ্কে এমএ পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বছর কুড়ির ব্রজেন্দ্রনাথ শীল। এমনই এক সময়ে তাঁর শিক্ষক হেস্টিং সাহেব আদেশ করলেন, ‘‘অঙ্ক নয়! তুমি দর্শনে এমএ দাও!’’ শিক্ষাগুরুর কথা শিরোধার্য করলেন অনুগত শিষ্য। পরীক্ষার ফল বের হলে দেখা গেল তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন।

Advertisement

দর্শনের মতো অঙ্ক, সাহিত্য থেকে বিজ্ঞান শুরু করে জ্ঞানের সব পরিসরে, সব শাখায় তাঁর বিচরণ ছিল অবাধ ও অনায়াস। দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার ৩ বছর পর মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি বহরমপুরে কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ হন। সেখানেও দক্ষ প্রশাসকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। কলেজকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল ১৮৮৭ সাল থেকে টানা ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত এক দশক লড়ে গিয়েছিলেন। সেই মহামতী আচার্যের জন্মের দেড়শো বছর উপলক্ষে বুধবার কৃষ্ণনাথ কলেজে তাঁকে স্মরণে অনুষ্ঠান হল।

ব্রজেন্দ্রনাথকে বিশ্বভারতীর প্রথম আচার্যের আসনে আসীন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর লেখা ‘পজিটভ সাইন্সেস অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট হিন্দুজ’ পণ্ডিতদের মতে ‘দর্শনের এনসাইক্লোপিডিয়া’। বুধবার এমন মণীষীর জন্মের দেড়শো বছর উপলক্ষে কৃষ্ণনাথ কলেজে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র অধ্যাপক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এমিরেটস অধ্যাপক রঘুনাথ ঘোষদের মতো রাজ্যের শিক্ষা-সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টেরা উপস্থিত ছিলেন। অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রোডেনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ, গীতাঞ্জলির অনুবাদ ও নোবোল প্রাপ্তির বিষয়ে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।’’

Advertisement

ব্রজেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই-এর ভূমিকাও লিখিছেন বলে জানান অমিত্রসূদনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ইংরাজি শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরাজি সোপান নামে দু’খণ্ডের দু’টি বই লিখেছিলেন। তার প্রথমটি এখন পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় খণ্ড পড়ে ভূয়সী প্রশংসা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিঠি লিখেছিলেন আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই পত্রটি ভূমিকার বদলে বই-এ ছাপিয়ে দেন।’’ ‘পজিটভ সাইন্সেস অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট হিন্দুজ’-নামের মূল্যবান গ্রন্থের বিষয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসপ্রাপ্ত এমিরেটস অধ্যাপক রঘুনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘জানালাহীন দর্শন নয়, বাইরের আলো বাতাস ঢুকবে, চিন্তার জানালা খোলা থাকবে এমন চিন্তার তিনি ছিলেন পথিকৃৎ।’’

রঘুনাথবাবু বলেন, ‘‘অনুমান নির্ভর নয়, বাস্তবের সঙ্গে মিললে তাকে ‘পজিটভ সাইন্সেস’ বলেছেন ব্রজেন্দ্রনাথ। সত্যে পৌঁছতে সংশয়ের উপর তিনি জোর দিয়েছেন। সংশয়ই দর্শনের বীজ।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের পূর্বতন অধ্যাপক তপনকুমার চক্রবর্তীর আক্ষেপ, ‘‘জীবত অবস্থায় ইংরেজ পণ্ডিতরাও গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের সঙ্গে, ভারতের নাগার্জুনের সঙ্গে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের তুলনা করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন, ‘সক্রেটিসের পরিবারের শেষ প্রদীপ নিভে গেল!’’ আলোচনা সভার আক্ষেপ, এমন মণীষীর মৃত্যুর পর আর তাঁকে নিয়ে চর্চা হয় না।
এটা বেদনার!

বুধবারের সারা দিনের ওই অনুষ্ঠানে ব্রজেন্দ্রনাখ শীলের মণীষার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সঞ্জীবকুমার দত্ত, অধ্যাপক কুহেলি বিশ্বাস, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজকুমার মোদক ও কৃষ্ণনাথ কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী ও কলেজের অধ্যক্ষ সুজাতা বাগচি বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন