বেহাল রাস্তায় বন্ধ বাস চলাচল

একসময় ছিল ব্যস্ত রাস্তা, যাতায়াত করত বাস, ছোট গাড়ি থেকে পাথর বোঝাই ট্রাকসবই। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ব্লকের আন্দির মোড় থেকে বীরভূমের হাজীপুর হয়ে বহরমপুর পর্যন্ত সোজা চলে গিয়েছে এই রাস্তা। জাতীয় বা রাজ্য সড়ক না হলেও দুই জেলার সংযোগকারী এই পথটিকে ‘শর্ট কাট’ হিসেবে ব্যবহার করতেন পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আন্দির মোড় থেকে মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী সনকপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার হাল এখন দুর্বিষহ, যান চলাচলের অযোগ্য। গত পাঁচ বছর ধরে এমনই অবস্থায় পড়ে রয়েছে রাস্তাটি। হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের। মার খাচ্ছে জেলার পরিবহন ব্যবসা। বহরমপুর যেতে হচ্ছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ঘুরপথে।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০১:০৮
Share:

আন্দি থেকে মল্লারপুর যাওয়ার বেহাল রাস্তা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

একসময় ছিল ব্যস্ত রাস্তা, যাতায়াত করত বাস, ছোট গাড়ি থেকে পাথর বোঝাই ট্রাকসবই। মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ব্লকের আন্দির মোড় থেকে বীরভূমের হাজীপুর হয়ে বহরমপুর পর্যন্ত সোজা চলে গিয়েছে এই রাস্তা। জাতীয় বা রাজ্য সড়ক না হলেও দুই জেলার সংযোগকারী এই পথটিকে ‘শর্ট কাট’ হিসেবে ব্যবহার করতেন পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আন্দির মোড় থেকে মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী সনকপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার হাল এখন দুর্বিষহ, যান চলাচলের অযোগ্য। গত পাঁচ বছর ধরে এমনই অবস্থায় পড়ে রয়েছে রাস্তাটি। হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের। মার খাচ্ছে জেলার পরিবহন ব্যবসা। বহরমপুর যেতে হচ্ছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ঘুরপথে।

Advertisement

রাস্তাটির মাঝখানে প্রায়ই চোখে পড়ে উঁচু নিচু ঢিবি। আসলে পিচের মোরাম উড়ে গিয়ে রাস্তার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই খানাখন্দ। কোথাও কোথাও সেই খন্দ এমন চেহারা নিয়েছে যে দেখলে মনে হল ঢিবি। ফলে যান চলাচল একেবারেই বন্ধ। একটি সাইকেল পর্যন্ত চলতে পারে না। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বহু বার রাস্তা মেরামতির বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অধীনেই ২০০৩ সালে তৈরি হয়েছিল এই রাস্তা। তারপর থেকে মাত্র একবার মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই ফের পিচের চাদর উড়ে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে জীর্ণ চেহারা। সেটা প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। তারপর থেকে এমনই হাল।

বেহাল রাস্তার কারণে সমস্যায় পড়ছেন মূলত কল্যাণপুর১ ও ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা আসরাফুল আলম বলেন, “রাস্তার জন্য এলাকার উন্নয়ন ঘটছে না। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা পাঁচথুপির কলেজে পড়তে যেতে পারছে না।” সব থেকে বেশি অসুবিধা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে। বাস ধরতে হলে কুণ্ডল, বাজেকুণ্ডল, হাতিয়া, সনকপুর, ঝিকরহাটির মতো প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দাদের যেতে হয় দশ কিলোমিটার দূরে আন্দিতে। আর এক বাসিন্দা রাহুল দাস বলেন, “২০ কিলোমিটার দূরে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে হলে গাড়ি ভাড়া পড়ে এক হাজার টাকা। শুধুমাত্র বেহাল রাস্তার কারণে এত বেশি ভাড়া চায় গাড়ি চালকরা। না হলে ওই গাড়ির ভাড়া হত ৬০০ টাকা।”

Advertisement

কিন্তু এই রাস্তায় গাড়ি চালানো যথেষ্ট বিপজ্জনক। বছর পাঁচেক আগে ওই রাস্তা দিয়েই সাতটি বাস যাতায়াত করত কান্দি-রামপুরহাট, ভরতপুর- রামপুরহাট, কাটোয়া-রামপুরহাট, বহরমপুর-রামপুরহাট রুটে। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হয় অসুবিধা। কান্দি বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, “এমন বেহাল রাস্তায় গাড়ি চালালে, যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। লাভের থেকে ক্ষতি হয় বেশি। তাই বাধ্য হয়েই পরিবহন ব্যবসায়ীরা এই রাস্তায় গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন।”

শুধু যাত্রীবাহী বাস নয়। বীরভূমের পাহাড় থেকে পাথর আর মুর্শিদাবাদ থেকে বালি বোঝাই হয়ে লরিও যাতায়াত করত এই রাস্তায়। বর্তমানে সে গুলি ২৫ কিলোমিটার ঘুরে কোটাশুর হয়ে যাতায়াত করছে। কান্দি ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ফুলু মিঞা বলেন, “ঘুরপথে যাতায়াত করায় আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা নিজেরাই একবার উদ্যোগী হয়ে মাটি দিয়ে গর্ত ভরাটের কাজ করে ছিলাম। কিন্তু তাতে বিশেষ সুবিধা হয়নি।” এবার জেলা পরিষদে নতুন বোর্ড বসেছে। ফুলু মিঞা আশা করছেন এবার কিছু সুরাহা হলেও হতে পারে। কিন্তু এলাকাবাসী আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। পাপ্পু মণ্ডল, বাহাদুর মল্লিকরা বলেন, “বীরভূম জেলা পরিষদ বছর দু’য়েক আগেই তাদের অংশের রাস্তা মেরামত করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের জেলায় কোনও কাজ হচ্ছে না। এবারেও কাজ শুরু না হলে আমরা আন্দোলনে নামছি।” মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাপতি কংগ্রেসের শিলাদিত্য হালদার বলেন, “ভোটের প্রচারে গিয়ে আমি ওই রাস্তার অবস্থা দেখে এসেছি। এলাকাবাসীও রাস্তা সংস্কারের আবেদন করেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তা মেরামতির কাজে হাত দেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন