ফাটল ক্রমেই আরও চওড়া হচ্ছে। জলুবাবুর সঙ্গে বিজেপির নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দীর সম্পর্কের ফাটল।
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে দলের শক্তিশালী প্রার্থী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবুর পরাজয়ের পর বিজেপি-র নদিয়া জেলা নেতৃত্বের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, সংগঠনকে ব্যবহার না করার মাসুল গুণতে হয়েছে। কৃষ্ণনগরের এই প্রাক্তন বিজেপি সাংসদকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তিন নম্বর স্থান (তৃণমূল, সিপিএমের পরে) নিয়েই। ফল প্রকাশের পরে জলুবাবুর কৃষ্ণনগরে এসে ‘মানুষের পাশে থাকার বার্তা’কেও দলের একাংশ ভাল চোখে নেয়নি। ওই অংশের অভিযোগ, দলের বর্তমান নেতৃত্বকে ‘উপেক্ষা’ করে নিজের মতো করে ভোটে লড়েছেন জলুবাবু।
কিন্তু, বুধবার কৃষ্ণনগরে জলুবাবুর ডাকা সভায় গরহাজির থেকে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আনলেন দলের জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী ও তাঁর অনুগামীরা। কেন আসেননি জেলা সভাপতি? প্রশ্নের জবাবে এ দিনের সভা শেষে বিজেপি-র রাজ্য কমিটির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে জলুবাবু বললেন, “আমি সকলকে নিয়েই কাজ করতে চাই। সেই মতো জেলা নেতাদের ডেকেছিলাম। কেউ এসেছেন, কেউ আসেননি।” বিষয়টি নিয়ে দলীয় কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে বিব্রত অমলেন্দুবাবুও বলেন, “জেলা সভাপতির অন্যত্র কর্মসূচি ছিল। ওঁর বাবার শরীর খারাপ।”
কল্যাণবাবুর নিজের দাবি, ‘পারিবারিক সমস্যার কারণে’ তিনি আসতে পারেননি। যদিও মঙ্গলবারই নবদ্বীপে দলীয় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জলুবাবুকে কটাক্ষ করে কল্যাণবাবু বলেছিলেন, “২০০৯-এর লোকসভা ভোটে হেরে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে চলে গিয়েছিলেন জলুবাবু। সন্ন্যাস ভেঙে ফিরে এলেও দল নিয়ে পাঁচ বছর আগের ধ্যান-ধারণাতেই আটকে ছিলেন তিনি। যাওয়ার সময় যাঁদের নিয়ে চলতেন, তাঁদের নিয়েই ময়দানে নামেন এ বার!” কল্যাণবাবুর মতে, “তিন-চার বছর ধরে জেলার নতুন নেতৃত্ব যে ভাবে দলকে সাজিয়ে ছিলেন, তা ব্যবহার করা হয়নি। সেখানে রানাঘাটের প্রার্থী সুপ্রভাত বিশ্বাস দলের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে আশাতিরিক্ত ভাল ফল করেছেন।”
নদিয়া জেলায় সিপিএম, কংগ্রেস থেকে দলে-দলে কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। এই অবস্থায় প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য কি সংগঠনেরই ক্ষতি করছে না? এর উত্তরে কল্যাণবাবু চুপ থেকেছেন। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “বিষয়টা জানা নেই। এই নিয়ে দলীয় ভাবে রিপোর্ট আনাচ্ছি। জেনে মন্তব্য করব।”
রাজ্যে যখন বিজেপি ঘর গোছাতে নেমে পড়েছে রইরই করে, তখন নদিয়ায় কেন ‘অন্য সুর’? বস্তুত, জেলা বিজেপি-র সংগঠনে এখন স্পষ্টতই দু’টো ভাগ এখন। কল্যাণবাবুর বদলে জলুবাবুকে এ বারও যখন প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছিল বিজেপি, বিভাজনের শুরু তখনই। ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, গতবারের তুলনায় জলুবাবুর ভোট বেড়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার। যেখানে রানাঘাটের প্রার্থী গত বারের থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার বেশি ভোট টেনেছেন। জলুবাবুর ঘনিষ্ঠরা এ জন্য সংখ্যালঘু ভোট বেশি তৃণমূলের দিকে চলে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট ৩০ শতাংশেরও বেশি। রানাঘাট কেন্দ্রে সেই ভোট ১৫ শতাংশও নয়। ফলে, জলুবাবুকে তৃতীয় হতে হয়েছে। পাশাপাশি, জলুবাবুর ময়দান না ছাড়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দলের ওই অংশের আরও দাবি, শীঘ্রই জেলা নেতৃত্বে রদবদল হবে। গুঞ্জন উড়িয়ে কল্যাণবাবুর অনুগামী এক নেতা বলেন, “কৃষ্ণনগরে জনগণের মধ্যে জলুবাবুর গ্রহনযোগ্যতা থাকলেও সংগঠনে প্রভাব বেশি কল্যাণবাবুর। দায়িত্ব নিয়ে রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি-র পক্ষে বিপুল ভোট টেনেছেন তিনি। রাজ্য নেতৃত্ব সেটা জানেন। তা ছাড়া, জলুবাবুর বয়সও হয়েছে।”