বলদ নিয়ে জেরবার ডিহিগ্রামের হকতুল

বলদ নিয়ে যে এমন গলদঘর্ম অবস্থা হবে কে জানত! গরু হলেও না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু হাড় জিরজিরে তিন তিনটে বলদ নিয়ে মহা আতান্তরে পড়েছেন ডিহিগ্রামের হকতুল শেখ। থানা আর বাড়ি করতে করতে হয়রান ওই বৃদ্ধ বলছেন, “এখন ঘর সামলাব না খোঁয়াড় তাই তো বুঝে উঠতে পারছি না। এতদিন শুনেছিলাম, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছত্রিশ। কিন্তু বলদে ছুঁলে কী হয়, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।”

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০২:০৪
Share:

বলদ নিয়ে যে এমন গলদঘর্ম অবস্থা হবে কে জানত!

Advertisement

গরু হলেও না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু হাড় জিরজিরে তিন তিনটে বলদ নিয়ে মহা আতান্তরে পড়েছেন ডিহিগ্রামের হকতুল শেখ। থানা আর বাড়ি করতে করতে হয়রান ওই বৃদ্ধ বলছেন, “এখন ঘর সামলাব না খোঁয়াড় তাই তো বুঝে উঠতে পারছি না। এতদিন শুনেছিলাম, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছত্রিশ। কিন্তু বলদে ছুঁলে কী হয়, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।”

সুতির জগতাই ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে একটি খোঁয়াড় চালান হকতুল। জায়গাটা নিজের। স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে এক বছরের জন্য খোঁয়াড় চালানোর অনুমতি পেয়েছেন ওই বৃদ্ধ। খেতে ঢুকে গরু, ছাগল ফসল খেয়ে ফেললে খেত মালিকরা সেই গবাদি পশু ধরে ওই খোঁয়াড়ে দিয়ে আসেন। তারপর গরু কিংবা ছাগলের মালিক পঞ্চায়েত থেকে বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিয়ে সেই পশু নিয়ে যান। তাতে হকতুলেরও দু’পয়সা আয় হয়। কিন্তু যে ক’দিন ওই পশু খোঁয়াড়ে থাকবে ততদিন তাদের খাওয়া-দাওয়া, দেখভালের যাবতীয় দায়িত্ব নিতে হয় হকতুলকেই। এছাড়াও আছে আটকে পড়া পাচারের গরু। পুলিশ কিংবা বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে তাদেরও ঠাঁই হয় হকতুলের খোঁয়াড়ে। সেক্ষেত্রেও নিয়ম একই। তবে কোনও পুলিশ ‘সদয়’ হলে ‘পাচার কেসের’ গরু-মোষের সৌজন্যে হকতুলের আয়ও কিঞ্চিৎ বেড়ে যায়।

Advertisement

এবারেও এই তিনটি বলদও ছিল সেই পাচার কেসের মধ্যেই। একসঙ্গে তিনটে বলদ দেখে প্রথমে খুশিই হয়েছিলেন হকতুল। কিন্তু মাস তিনেক আগে সেই যে পুলিশের লোকজন খোঁয়াড়ে বলদ তিনটে রেখে গিয়েছে, তারপর থেকে বলদ নিয়ে যাওয়ার নাম নেই কারও। পুলিশও কোনও গতি করছে না বলদ তিনটের। সমস্যার শুরু তারপর থেকেই। হকতুল বলছেন, “প্রতিদিন ওই বলদ তিনটির পিছনে বিস্তর টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ বলছে আর ক’টা দিন পরেই নাকি নিলাম করে ওই আপদ তিনটে বিক্রি করে আমার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বলদের যা চেহারা তাতে কত টাকাতে ওগুলো বিকোবে আর কত টাকা যে আমি পাব, কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে বলদের বিক্রির দিন এগিয়ে আসতে আসতে আমার ঘটি-বাটি না বিক্রি করতে হয়!”

ওই বৃদ্ধ বলছেন, “গরু হলেও একটা কথা ছিল। দু’বেলা দুধটুকু অন্তত পেতাম। নিজের জমি-জিরেত থাকলেও না হয় ব্যাটাদের দিয়ে হাল টেনে নিতাম। কিন্তু এই বলদ নিয়ে এখন সংসারেও অশান্তি শুরু হয়েছে। ওদের খাবার কেনার কথা উঠলেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছে বিবি। থানার বাবুদেরও জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছি না। এখন বুঝতে পারছি এই বলদ নিয়ে গলদটা হয়ে গিয়েছে গোঁড়াতেই।”

থানার পাশাপাশি ওই বৃদ্ধ সমস্যার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকেও। পঞ্চায়েত প্রধানের আশ্বাস, “হকতুলের সমস্যার কথা শুনেছি। ওর মতো গরিব মানুষের পক্ষে দিনের পর দিন এভাবে তিনটে বলদকে টানা খুব মুশকিল। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে যাতে দ্রুত বলদ তিনটির নিলামের ব্যবস্থা করা হয়।” আর সুতি থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলছেন, “জঙ্গিপুর আদালতে নিলামের জন্য অনুমতি চেয়েছি। নিলামটা হয়ে গেলেই হকতুলের হকের টাকাও আমরা মিটিয়ে দেব।” কিন্তু সেটা কবে নাগাদ হতে পারে? ওই আধিকারিকের গম্ভীর জবাব, “আইন-আদালতের ব্যাপার। একটু সময় তো লাগবেই।”

মাথায় হাত দিয়ে দাওয়ায় বসে পড়েন হকতুল। বলদ তিনটির অবশ্য সেদিকে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। দিব্যি চিবিয়ে যাচ্ছে সদ্য জমি থেকে তুলে আনা কচি ঘাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন