বস্তাবন্দি দেহ মিলল অপহৃত তৃণমূল নেতার

অপহৃত তৃণমূল নেতা মফিজুল শেখের (৩৮) বস্তাবন্দি দেহ মিলল দ্বারকা নদীতে। টানা ছ’দিন নিখোঁজ থাকার পরে বৃহস্পতিবার রাতে কুমারসণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতনাগাড়ি এলাকা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে কান্দি থানার পুলিশ।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

মফিজুল শেখ। —নিজস্ব চিত্র

অপহৃত তৃণমূল নেতা মফিজুল শেখের (৩৮) বস্তাবন্দি দেহ মিলল দ্বারকা নদীতে। টানা ছ’দিন নিখোঁজ থাকার পরে বৃহস্পতিবার রাতে কুমারসণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতনাগাড়ি এলাকা থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে কান্দি থানার পুলিশ।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান শ্বাসরোধ করে খুন করে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বুকে ধারাল অস্ত্রের আঘাতও করা হয়েছিল। জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “মৃতদেহের গলায় গামছার ফাঁস রয়েছে। বুকেও ধারাল অস্ত্রের ক্ষত রয়েছে। বস্তাটির সঙ্গে বোল্ডার বেঁধে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যু সুনিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না এলে সব কিছু স্পষ্ট হবে না।”

১১ অক্টোবর মোটরবাইক নিয়ে কান্দি শহরে গিয়েছিলেন মফিজুল। রাতে রামেশ্বরপুর গ্রামে নিজের বাড়ি ফেরার পথে অপহৃত হন বলে অভিযোগ করে তাঁর পরিবারের। জানা গিয়েছে, ন’পাড়া গ্রামের মাঠ সংলগ্ন রাস্তা থেকেই তাঁকে অপহরণ করা হয়। পরের দিন সকালে পুলিশ গিয়ে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে তৃণমূল নেতার মোটর বাইক এবং জুতো। পাশের মাঠে ধস্তাধস্তির চিহ্নও পাওয়া গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ওই দিনই মফিজুল শেখের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকার কংগ্রেস নেতা আইনাল হক ও সাবি শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও চার অভিযুক্ত পলাতক।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বালক দ্বারকা নদীর জলে একটি বস্তা ভাসতে দেখে। মাদারহাটী গ্রামে ওই কথা বলতেই খবর পৌঁছে যায় রামেশ্বরপুরে। পরে পুলিশ গিয়ে ওই বস্তা উদ্ধার করে। তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমান, নদীতে তেমন জল না থাকায় মৃতদেহ ভেসে যেতে পারেনি।

আইনাল হক-সহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন ওই যুবকের দাদা সফিকুল শেখ। প্রথম থেকেই তিনি অভিযোগ করে আসছিলেন, অপহরণ করে তাঁর ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবারেও তিনি দাবি করেন, “আমার ভাইকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করে মৃতদেহ লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। আমার ভাইকে জীবিত বা মৃত কোনও ভাবেই উদ্ধার করতে পারছে না পুলিশ।” বৃহস্পতিবার তিনি অভিযোগ করেন, এলাকায় মফিজুলের নেতৃত্বে তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী হচ্ছিল। সেই ভয়েই কংগ্রেস তাঁকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে। তিনি বলেন, “আইনালদের শাস্তি চাই।”

আইনাল হক কুমারসণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতে পাঁচবারের নির্বাচিত প্রধান। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ওই অঞ্চলের প্রধান। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইয়ের হয়ে লড়ে হেরে যান তিনি। তারপরই যোগ দেন কংগ্রেসে। বামপন্থী রাজনীতি করার সময় মফিজুল ছিলেন আইনাল ঘনিষ্ঠ। কিন্তু দলবদল করার সময় মফিজুল যোগ দেন তৃণমূলে। তারপর থেকেই বিরোধীতার শুরু। ছোটখাটো অশান্তি লেগেই থাকত দুই দলে।

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই খুনের পিছনে কংগ্রেসের বড় মাথার যোগ আছে। কান্দি ব্লক তৃণমূল সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ বলেন, “আইনাল হক বরাবর সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি করতে অভ্যস্ত। তার প্রমাণ পুলিশ আগেও পেয়েছে। এবার আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী খুনের পিছনে আইনাল সরাসরি যুক্ত আছে। শুধু আইনাল নয় কংগ্রেসের আরও অনেক নেতাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।”

কংগ্রেস অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকে আইনালকে পাঁচবার মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে তৃণমূল। এ বারেও তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম সরকার বলেন, “ওই যুবক তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই খুন হয়েছেন। কিন্তু পুলিশ সরাসরি তৃণমূলের নেতাদের কথায় কাজ করছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই প্রমাণিত হবে প্রকৃত দোষী কারা!” কংগ্রেস নেতা আইনাল হকের গ্রেফতারের প্রতিবাদে কংগ্রেস আন্দোলনে নামবে বলেও জানান তিনি।

এ দিকে তৃণমূল নেতার খুনের পরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হলেও পুলিশ জানিয়েছে, খুনের কারণ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন