রাজ্য বিজেপি-র শিক্ষক সেলের মুর্শিদাবাদ শাখার সূচনা হল রবিবার। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে অনুষ্ঠিত সূচনা বৈঠকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রায় দু’শো জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই তাঁরা বিজেপি শিক্ষা সেলের সদস্য পদ গ্রহণ করেন। জেলা আহ্বায়ক মলয় মহাজন বলেন, “এত দিন মুর্শিদাবাদ জেলায় বিজেপি-র কোনও শিক্ষক সংগঠন ছিল না। ফলে বিজেপি-র ভাবধারায় অনুপ্রাণিত শিক্ষকরাও বাধ্য হয়ে সিপিএম, কংগ্রেস বা তৃণমূলের সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ওই সব সংগঠনের কর্মপদ্ধতিতে তাঁরা তিতিবিরক্ত।” তাঁর মতে দীর্ঘদিনের একটা দাবি ছিল, বিজেপি এমন কোনও সংগঠন করুক, যাতে তাঁরা যোগ দিতে পারেন। তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়েই বিজেপি’র শিক্ষক সেল খোলার সিদ্ধান্ত বলেও দাবি করেন।
এ দিনের সূচনা বৈঠকের চার মাস আগে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকদের নিয়ে একটি বৈঠকও হয়। গত জুন মাসের ওই বৈঠকে শিক্ষা সেল গঠনের বিষয়ে বিজেপি-র জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের কাছে মতামত চাওয়া হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত শিক্ষকই অবিলম্বে ওই শিক্ষা সেল খোলার দাবি তোলেন। তারই ফলশ্রুতি রবিবাসরীয় দুপুরের সূচনা বৈঠক। এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি’র শিক্ষা সেলের যুগ্ম আহ্বায়ক যাদবেন্দ্র পাণ্ডে ও ত্রিদীপ মণ্ডল। যাদবেন্দ্রবাবু বলেন, “প্রায় ২০ দিন আগে রাজ্য বিজেপি-র শিক্ষা সেল খোলা হয়েছে। সে খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন জেলায় শিক্ষা সেল গঠনের খবর পাচ্ছি। ইতিমধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, নদিয়া, মালদহ, শিলিগুড়ি, বীরভূম, বর্ধমান, দুর্গাপুর, জলপাইগুড়িতে শিক্ষা সেল গঠন হয়ে গিয়েছে।”
যে সমস্ত শিক্ষকের বিজেপি সদস্য পদ রয়েছে, শুধু মাত্র তাঁরাই শিক্ষক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন। ওই শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হতে চাইলে আগে বিজেপি-র সদস্য পদ গ্রহণ করতে হবে।
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি ও তৃণমূল শিক্ষক সেলের বাইরে অনেক শিক্ষকও আছেন যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষক সংগঠন খোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিজেপি শিক্ষা সেলের দাবি তেমন মানুষরাই এ দিন কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে হাজির ছিলেন। যাঁরা শিক্ষক সংগঠনের সদস্য পদ গ্রহণ করেছেন তাঁদের অধিকাংশই সিপিএম ও কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যেমন গত ১০ বছর ধরে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বেণীপুর হাইস্কুলের শিক্ষক এনতাজ আলি বলেন, “সিপিএমের শিক্ষক সংগঠনের কথার সঙ্গে কাজের মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গত তিন বছর আমি তাদের সংস্পর্শ ত্যাগ করেছি। এখন রাজ্য জুড়ে যে দুর্নীতি চলছে, তাও মেনে নেওয়া যায় না। এই রকম এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিজেপি শিক্ষা সেলে যোগ দেওয়ার।”
সাদিখাঁরদিয়াড় উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমিও প্রায় ১০ বছর ধরে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কিন্তু শিক্ষককে তার সামাজিক দায়ও পালন করতে হয়। ওই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই বিজেপি শিক্ষা সেলের হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।” কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলের শিক্ষক রসময় মণ্ডল বলেন, “শাসক দলের দুর্নীতির হাত থেকে রাজ্যের মানুষকে রেহাই দিতে বিজেপি-র হাত শক্ত করতেই ওই শিক্ষক সংগঠনে জড়িত হওয়া।” কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠন ছেড়ে এ দিন বিজেপি-র শিক্ষা সেলে যোগ দেওয়া কুশাবেড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে বিজেপি পারবে সুশাসন দিতে। তাই শিক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতেই শিক্ষা সেলে যোগ দেওয়া।”
এ দিন অবশ্য ওই শিক্ষা সেলের পক্ষ থেকে দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মলয়বাবু বলেন, “স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে জেলা পরিদর্শক দফতর সাফাইয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের পাওনা ডিএ দেওয়ার দাবিতে অবস্থান-বিক্ষোভ করার কথাও বলা হয়েছে। তবে সদস্য-শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই কর্মসূচি পালনের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।”