ভাঙন রোধের আশ্বাসেও কাটছে না ভয়

গঙ্গার গ্রাস থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁচাতে হাত মিলিয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য। তাতে মুখে চাওড়া হাসি ফুটেছে ময়া, ধুলিয়ানের বাসিন্দাদের। কিন্তু তাতেও আশঙ্কার চোরাস্রোত থামছে না। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, বর্ষার আগে যদি ওই কাজ শেষ না করা যায় তাহলে সব চেষ্টাই জলে যাবে।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৫ ০১:১৭
Share:

ময়ার সাধকপাড়ায় নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙন। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যয়ের তোলা ছবি।

গঙ্গার গ্রাস থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁচাতে হাত মিলিয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য। তাতে মুখে চাওড়া হাসি ফুটেছে ময়া, ধুলিয়ানের বাসিন্দাদের। কিন্তু তাতেও আশঙ্কার চোরাস্রোত থামছে না। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, বর্ষার আগে যদি ওই কাজ শেষ না করা যায় তাহলে সব চেষ্টাই জলে যাবে।

Advertisement

রাজ্য সেচ দফতর জানিয়েছে, গঙ্গার বুকে চর গজিয়ে ওঠায় অদূর ভবিষ্যতে ফরাক্কার কাছে ধুলিয়ান ও ময়ার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। ইতিমধ্যেই ওই দুই এলাকাতে গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে রাজ্য সেচ দফতর ধুলিয়ানকে ও ময়াকে বাঁচাতে যথাক্রমে ১৬০ কোটি ও ২০ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে। কিন্তু আর্থিক কারণে ওই প্রকল্প দু’টি রূপায়ণের কাজ আটকে রয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ফরাক্কায় কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতীর সঙ্গে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে ধুলিয়ান, ময়া ছাড়াও ফরাক্কার আপ ও ডাউন স্ট্রিমে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ভাঙ্গন রোধের দায়ভার কেন্দ্রীয় সরকার নিতে রাজি হয়। সেই খবরে উচ্ছ্বসিত হন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু ঠিক পর মুহূর্তে আশঙ্কার কালোমেঘ ঘিরে ধরে তাঁদের। তাঁদের আশঙ্কা কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্প রূপায়ণের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলেও ঠিক সময়ে তা রূপায়িত হবে তো। কারণ বর্ষাকালের আগে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ না করে ফেলতে পারলে কোনও প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না।

রঘুনাথগঞ্জ ভাঙন প্রতিরোধ দফতরের এক বাস্তুকার জানান, ময়া ও ধুলিয়ানের সমস্যা হল মাঝ নদীর গজিয়ে ওঠা চর। চরে বাধা পেয়ে নদীর স্রোত তীর ঘেঁসে যাওয়ায় ময়ার দক্ষিণ পাড় এবং ধুলিয়ানের পশ্চিম পাড় দ্রুত ভাঙছে। তিনি জানান, পাড়ের উপরের দু’মিটার কাদামাটির স্তর যথেষ্ঠ জমাটবদ্ধ হলেও ঠিক তার নিচে ভঙ্গুর সাদা বালির স্তর রয়েছে। ঢেউয়ের ধাক্কায় সহজেই তা ভেঙে পড়ছে। এই ভাবে পাড় ভাঙতে থাকলে ধুলিয়ান ও ময়ার অস্তিত্ব খুব বেশি দিন থাকবে না বলে তিনি জানান।

Advertisement

রাজীববাবু জানান, ভাঙন রোধে ময়ার জন্য ২০ কোটি, ধুলিয়ানের জন্য ১৬০ কোটি ও ফরাক্কার জন্য ৩০০ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে উমাদেবীর কাছে। সেই মতো উমাদেবী ফরাক্কা ব্যারাজকে একটি প্যাকেজ তৈরির নির্দেশ দেন বলে তিনি জানান। সেগুলি নিয়ে দিল্লিতে খুব শীঘ্রই একটি বৈঠক ডাকারও আশ্বাস দেওয়া হয়। ফরাক্কা ব্যারাজের অফিসাররা ছাড়াও রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের অফিসাররাও ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে রাজীববাবু জানান। বৈঠকে ঠিক করা হবে কবে নাগাদ ওই প্রকল্পগুলির কাজ শুরু হবে।

চোখের সামনে নারুখাকির বিএসএফ আউটপোস্টকে পদ্মায় তলিয়ে যেতে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ধুলিয়ানে গঙ্গা পাড়েই কার্যত ঝুলেই রয়েছে শতবর্ষ প্রাচীন কাঞ্চনতলা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। তাই যতক্ষণ না সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তত ক্ষণ মনে শান্তি নেই গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দাদের। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পদ্মা বাড়ির কাছে এসে পড়ায় নিজের হাতে গড়া বাড়ি ভেঙে দিয়েছেন ময়ার সাধকপাড়ার বাসিন্দা নকিমুদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, “সেই কবে থেকে শুনে আসছি ময়ায় ভাঙন রোধের কাজ হবে। কিন্তু কাজের কাজ তো কিছু দেখতে পেলাম না।” ময়ার পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের দীপিকা সাহা জানান, ময়ার ভাঙন রোধে সরকার যে উদ্যোগী হয়েছে তাতে স্বস্তি মিললেও শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রকল্প রূপায়ণে দুই সরকার পরস্পরের সাহায্যে কতটা এগিয়ে আসবে তা নিয়ে আমরা চিন্তায় রয়েছি।” ধুলিয়ানের তৃণমূল সভাপতি কাওসার আলি অবশ্য চোখ রাখছেন দিল্লির বৈঠকের দিকে। তাঁর কথায়, “পূর্বতন কেন্দ্রীয় সরকার ভাঙনকে জাতীয় সমস্যা ঘোষণা করে তো রোধের জন্য দায়িত্ব নেয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” “তাই প্রকল্প জমা দিলেও তা যতক্ষণ না অনুমোদন পাচ্ছে তত দিন কোনও ভরসা পাচ্ছি না” মত তাঁর।

তবে ফরাক্কার ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক আসিফ ইকবাল এ ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমরাও সেদিন দুই মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দাবিপত্র দিয়েছিলাম। দুই মন্ত্রীই ভাঙন রোধে সদর্থক মনোভাব দেখিয়েছেন। তাই সকলেই চেয়ে আছি দিল্লির বৈঠকের দিকে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন