মাছের নেশা পথ দেখাচ্ছে বাড়তি আয়ের

৬-৭ ইঞ্চির একটি গোল্ড ফিসের দাম ১৫০-২০০ টাকা। কলকাতা থেকে কিনে এনে বহরমপুরের বাজারে বিক্রি করা হয় ৩০০-৩৫০ টাকায়। জিয়াগঞ্জের সাধকবাগের যুবক বিজয় বিশ্বাস বাড়িতে ওই গোল্ড ফিস চাষ করার ফলে ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। বিজয়বাবু পেশায় সরকারি কর্মী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০০:১৬
Share:

মাছের পরিচর্যায় বিজয় বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র।

৬-৭ ইঞ্চির একটি গোল্ড ফিসের দাম ১৫০-২০০ টাকা। কলকাতা থেকে কিনে এনে বহরমপুরের বাজারে বিক্রি করা হয় ৩০০-৩৫০ টাকায়। জিয়াগঞ্জের সাধকবাগের যুবক বিজয় বিশ্বাস বাড়িতে ওই গোল্ড ফিস চাষ করার ফলে ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

Advertisement

বিজয়বাবু পেশায় সরকারি কর্মী। তিনি সাগরদিঘি গোবর্ধনডাঙা পঞ্চায়েতে ‘নির্মাণ সহায়ক’ পদে কর্মরত। তাঁর নেশা রঙিন মাছ পোষা। সেই নেশা থেকেই তিনি কৃত্রিম পদ্ধতিতে রঙিন মাছের প্রজনন ঘটিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে বিজয়বাবুর চৌবাচ্চায় বিভিন্ন প্রজাতির ১৫ রকমের মাছ রয়েছে। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি থাকায় তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে। সরকারি সাহায্য ছাড়াই রঙিন মাছের চাষ করে বিজয়বাবু বর্তমানে প্রতি মাসে ১২-১৪ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন।

বিজয়বাবু বলেন, “জেলায় রঙিন মাছের চাহিদা রয়েছে। এখন অধিকাংশ বাড়িতেই ছোট-বড় আকারের অ্যাকোরিয়ামের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছ দেখা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কলকাতা থেকে ওই মাছ কিনে নিয়ে এসে বিক্রি করেন। ফলে মুর্শিদাবাদের বাজারে মাছের দামও বেশি পড়ে।”

Advertisement

কোন ছেলেবেলায় রঙিন মাছের নেশা মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, বিজয়বাবু ঠিক মনে করতে পারেন না। তবে ওই নেশা বাড়তি রোজগারের পথ খুলে দিয়েছে। তাঁর কাছ থেকে রঙিন মাছ কিনে নিয়ে গিয়ে বাজারে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের মুনাফাও করেন জিয়াগঞ্জের বেশ কয়েক জন বেকার যুবক। কিন্তু রঙিন মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে অর্থ তাঁদের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে! বিজয়বাবুর কথায়, “মুর্শিদাবাদে জেলার বেকার যুবকদের সরকারি স্তরে বিজ্ঞান সম্মত প্রশিক্ষণ দিয়ে রঙিন মাছ চাষে উৎসাহিত করলে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি লাভবান হবেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরাও।”

জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় মহিলাদের নিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে রঙিন মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেন তৎকালিন মৎস্য দফতরের মন্ত্রী কিরণময় নন্দ। ওই রঙিন মাছ চাষের যে প্রকল্পও গড়ে তোলেন তিনি। পরে মাছ চাষ করে পরিশোধ করে দেওয়ার শর্তে স্বনির্ভর গোষ্ঠীপিছু প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা অনুদানও দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। তার মধ্যে অবশ্য এক লক্ষ টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হয়। সেই মত মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লকে বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীও গড়ে ওঠে।

এ প্রসঙ্গে ভগবানগোলা-২ মৎষ্য চাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সঞ্জয় কুমার মিশ্র বলেন, “ভগবানগোলা-২ ব্লকে ১টি এবং মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকে ৪টে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব ছাড়াও বিভিন্ন কারণেই ওই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। উৎসাহ হারিয়ে ফেলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিও।”

মৎস্য দফতরের জেলা আধিকারিক মলয় সাহু বলেন, “রঙিন মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে কেউ আগ্রহী হলে সরকারের তরফে ভর্তুকি দেওয়া হয়। কেউ যদি আগ্রহী হন এবং সেই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের জন্য ব্যাঙ্ক যদি ঋণ দিতে রাজি থাকে, তাহলে সেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত আকারে নিয়ে এসে আমাদের দফতরে আবেদনপত্র জমা দিলেই হবে। ন্যাশনাল ফিসারিজ ডেভলপমেন্ট বোর্ডের অধীনে ওই প্রকল্পের জন্য ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেয় সরকার। কিন্তু আশ্চর্যের! ওই রঙিন মাছ চাষ করার জন্য মুর্শিদাবাদের ২৬টি ব্লক থেকে এখড় পর্যন্ত কোনও আবেদনপত্র জমা পড়েনি।” সরকারি প্রচারের অভাবও কী এর জন্য দায়ী? বিষয়টি মানতে চাননি মলয়বাবু। তিনি বলেন, “প্রতি মাসে জেলার প্রতিটি ব্লকে ওই ব্যাপারে প্রচার চালানো হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন