রাত পাহারা হঠাতে বেপরোয়া গুলি দুষ্কৃতীদের

নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগরের নিরাপত্তা নিয়ে গত ক’দিন ধরেই তোলপাড় চলছে। আনন্দবাজারে প্রকাশিত নিরাপত্তাহীনতার সংবাদকে ‘ভুল ও অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে পুলিশ-প্রশাসন ও শাসকদলের নেতারা ধারাবাহিক ভাবে দাবি করছেন, শহর নিরাপদ। অথচ, সেই শহর থেকেই মাত্র কিলোমিটার ছ’য়েক দূরে দুর্গাপুরে বুধবার রাতে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে জখম হলেন গ্রামের এক নৈশপ্রহরী। এলাকাটা কোতোয়ালি থানার মধ্যেই পড়ে। মৃন্ময় সাহা নামে ও নৈশপ্রহরীর ডান পায়ে গুলি লেগেছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি তিনি। এছাড়াও মাথায় দুষ্কৃতীদের লাঠির বাড়ি খেয়ে ওই এলাকারই সুনীল মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা একই হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪০
Share:

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম মৃন্ময় সাহা। (ডানদিকে) দুর্গাপুরে ফেলে যাওয়া গুলি।নিজস্ব চিত্র।

নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগরের নিরাপত্তা নিয়ে গত ক’দিন ধরেই তোলপাড় চলছে। আনন্দবাজারে প্রকাশিত নিরাপত্তাহীনতার সংবাদকে ‘ভুল ও অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে পুলিশ-প্রশাসন ও শাসকদলের নেতারা ধারাবাহিক ভাবে দাবি করছেন, শহর নিরাপদ। অথচ, সেই শহর থেকেই মাত্র কিলোমিটার ছ’য়েক দূরে দুর্গাপুরে বুধবার রাতে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে জখম হলেন গ্রামের এক নৈশপ্রহরী। এলাকাটা কোতোয়ালি থানার মধ্যেই পড়ে।

Advertisement

মৃন্ময় সাহা নামে ও নৈশপ্রহরীর ডান পায়ে গুলি লেগেছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি তিনি। এছাড়াও মাথায় দুষ্কৃতীদের লাঠির বাড়ি খেয়ে ওই এলাকারই সুনীল মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা একই হাসপাতালে ভর্তি। বুধবার গভীর রাতের ওই ঘটনার পরে এলাকায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, দুষ্কৃতীরা চার রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকেও চার রাউন্ড অব্যবহৃত গুলি উদ্ধার হয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে এদিন রাতে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল তা পুলিশের কাছে এখনও পরিষ্কার নয়। নৈশপ্রহরীদের দাবি, নিছক ডাকাতি নয়, দুষ্কৃতীরা এদিন রাতে জড়ো হয়েছিল তাঁদের উপরেই হামলা চালানোর জন্য। তাঁদের দাবি, প্রতিদিন রাতে গ্রামের পুরুষরা পালা করে দলবদ্ধ ভাবে পাহারা দেওয়ায় দুষ্কৃতীরা এলাকায় ঢুকতে পারছে না। সেই রাগেই হামলা চালিয়ে রাতের পাহারা বন্ধ করে দিতে চাইছে দুষ্কৃতীরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই বাড়ি কাঠের মিস্ত্রী সুনীল মণ্ডলের। এদিন রাত প্রায় দু’টো নাগাদ সুনীলবাবু ও তাঁর স্ত্রী বাড়ির সামনে দু’জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। কিছুটা দূরে আরও কয়েকজন। সন্দেহ হওয়ায় সুনীলবাবু টর্চের আলো ফেলতেই দুষ্কৃতীরা তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুনীলবাবু তাদের মধ্যে দু’জনকে ধরে ফেলেন। দুষ্কৃতীরা তাঁর মাথায় লাঠির বাড়ি মেরে সঙ্গীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এর মধ্যে শব্দ শুনে সুনীলবাবুর পরিবারের অন্যরা বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার জুড়ে দেন।

Advertisement

সেই সময় রাস্তার ঠিক উল্টো দিকেই ছিলেন গ্রামের নৈশপ্রহরীরা। চিৎকার শুনে তাঁরা ছুটে এলে গুলি ছুড়তে থাকে দুষ্কৃতীরা। সেই গুলিই পায়ে লাগে মৃন্ময়বাবুর।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সুনীলবাবু বলেন, ‘‘ওরা কিন্তু আমার ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেনি। মনে হয় না ডাকাতি করতে এসেছিল। সম্ভবত ওদের অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল।” তিনি জানান যে দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় প্রায় ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও ওই এলাকায় নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু নানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। মাস খানেক আগে ওই এলাকায় এক বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে আবার নতুন করে রাতের পাহারা দেওয়া শুরু হয়। গ্রামের পুরুষরা পালা করে পাহারা দিতে থাকেন। সেই মতো এদিনও প্রায় ১৫ জন তিনটি দলে ভাগ হয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে গুলিবিদ্ধ মৃন্ময় সাহা বলেন, ‘‘ঘটনার প্রায় আধঘণ্টা আগে ওই এলাকা থেকে ঘুরে গিয়েছেন কোতোয়ালি থানার আইসি। আমরা হঠাৎ হইচই শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে দুষ্কৃতীরা আমাদের দিকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। সেই সময়ই আমার পায়ে গুলি লাগে।’’ শুধুমাত্র লাঠি সম্বল করে আগ্নেয়াস্ত্রধারী দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করবে কী ভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছে নৈশপ্রহরীদের মধ্যে।

জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ এ দিন আশ্বাস দেন, ‘‘আমরা ওই নৈশপ্রহরীদের সঙ্গে পুলিশকর্মী থাকার ব্যবস্থা করব।’’

যদিও পুলিশের সেই আশ্বাসে মোটেই আশান্বিত নন এলাকাবাসী। সদ্যই আনন্দবাজার পত্রিকায় কৃষ্ণনগর শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিবেদনেও পুলিশ সুপার ‘শহর নিরাপদ’ বলে দাবি করেছিলেন। বুধবার রাতে আবার শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে তৃণমূলের একটি সভায় স্থানীয় নেতৃত্ব আনন্দবাজারের সংবাদকে ‘ভুল ও অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে দাবি করেছিলেন শহর সম্পূর্ণ নিরাপদ। তারই কয়েক ঘণ্টা পরে শহর থেকে সামান্য দূরে দুষ্কৃতীদের এই হামলাকে কী ভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের প্রতিক্রিয়া, “ওটা পঞ্চায়েত এলাকা। কৃষ্ণনগর শহরের সঙ্গে গুলিয়ে দিলে চলবে না। তাছাড়া যে কোনও এলাকায় বছরে দু’-একটা ছোটখাটো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনিতে আগের জমানার তুলনায় কৃষ্ণনগরে অপরাধ কমেছে। অন্তত ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর রিপোর্ট তাই বলেছে।”

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে কৃষ্ণনগর শহরেই লালদিঘির কাছে একটি মদের দোকানে চুরি হয়। দোকানের পিছন দিকে লোহার দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢোকে। বেশ কয়েক হাজার টাকা তারা লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে বলে দোকানের মালিকের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন