রাস্তা ভয়ঙ্কর, বাড়িতেই প্রসব মায়েদের

জেলার নানা পর্যটনস্থলে পৌঁছনোর স্বল্পতম দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি বহরমপুর শহর লাগোয়া নওদাপাড়া রেলগেট থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ থানার খোসবাগ ও পিরতলা হয়ে জিয়াগঞ্জের বড়নগর পর্যন্ত গিয়েছে। ওই তল্লাটের মানুষের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা ছাড়াও পর্যটনশিল্পের কারণেও ওই পথটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই রাস্তাটি গত ৫ বছর ধরে চরম বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:১৪
Share:

জেলার নানা পর্যটনস্থলে পৌঁছনোর স্বল্পতম দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি বহরমপুর শহর লাগোয়া নওদাপাড়া রেলগেট থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ থানার খোসবাগ ও পিরতলা হয়ে জিয়াগঞ্জের বড়নগর পর্যন্ত গিয়েছে। ওই তল্লাটের মানুষের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা ছাড়াও পর্যটনশিল্পের কারণেও ওই পথটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই রাস্তাটি গত ৫ বছর ধরে চরম বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

Advertisement

মুর্শিদাবাদ থানা এলাকায় ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে খোসবাগে রয়েছে সপরিবার নবাব সিরাজউদ্দোলা ও নবাব আলিবর্দির সমাধি। সেখান থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে নদীর ওই পাড়েই এলাহিগঞ্জে রয়েছে নবাব সরফরাজ খাঁয়ের সমাধি। প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে জিয়াগঞ্জের বড়নগরে ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ে রয়েছে রানি ভবানী প্রতিষ্ঠিত টেরাকোটার কাজ সমৃদ্ধ বেশ কয়েকটি মন্দির। ঐতিহাসিক ওই সব মন্দির ও সমাধিক্ষেত্রের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ। এছাড়াও ওই তল্লাটে রয়েছে রাজ্য সরকারে অধীনে কয়েকটি ঐতিহাসিক নির্দশন। বেসরকারি ট্রাস্টির অধীনে নবগ্রামের দুর্গার অন্যতম উপপীঠ কীরিটেশ্বরী মন্দির। ওই দর্শনীয় স্থানগুলির সংযোগকারী ও বহরমপুর, নবগ্রাম, মুর্শিদাবাদ ও জিয়াগঞ্জ এই ৪টি থানার সীমানা দিয়ে চলে যাওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পথটি এতটাই বেহাল যে, একান্ত বাধ্য না হলে কেউই ওই পথ মাড়ান না। বেহাল সড়ক পথের কারণে ওই তল্লাটের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৫-২০টি গ্রামের প্রসূতিরা হাসপাতালের বদলে বাড়িতেই প্রসব করতে বাধ্য হন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বহুবার প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিবাদের পথে নেমেছেন তাঁরা। বুধবার তাঁরা রাস্তাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে, অবরোধ করে প্রতিবাদ জানান। সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে পুলিশ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ঘণ্টা চারেক পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

বড়নগর থেকে নওদাপাড়া রেলগেট লাগোয়া উত্তরপাড়া মোড় পর্যন্ত ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দাদের চিকিৎসা পরিষেবা ও উচ্চশিক্ষা পেতে হলে ভাগীরথী পার হতেই হবে। কিন্তু ওই ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় একমাত্র বহরমপুরের উত্তরপাড়া লাগোয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ভাগীরথীর উপর একটি সেতু রয়েছে। নাম রামেন্দ্রসুন্দ্রর ত্রিবেদী সেতু। ফলে কলেজ যেতে হলে, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল যেতে হলে, প্রশাসনিক পরিষেবা পেতে হলে, বাজার হাট করতে হলে ১৫ কিলোমিটার পথ পার হয়ে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতু অতিক্রম করে বহরমপুর শহরে পৌঁছতে হয়। কিন্তু কি করে তা সম্ভব? প্রশ্ন তুললেন এ দিন অবরোধে যোগ দেন জীবন বিমা নিগমের এজেন্ট প্রভাষ ঘোষ।

Advertisement

তিনি বলেন, “বছর পাঁচেক আগে নামকে ওয়াস্তে এমন ভাবে রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে যে তার বছর খানেক পরই সব পিচ পাথর উধাও হয়ে গিয়ে পুরোটাই ছোট, বড়, মাঝারি আকারের পুকুর হয়ে গিয়েছে। দিন যত যায় পুকুরের আকার আয়তন ও সংখ্যা বাড়ে।” তাই ওই এলাকার চাষিরা বাজারে কৃষি পণ্য নিয়ে যেতে পারেন না। তার ফলে এলাকার আর্থিক অবস্থা মুখ থুবনে পড়েছে বলে দাবি তাঁর।

কৃষির মতোই ওই এলাকার শিক্ষার দশাও করুণ। লালবাগ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুরদীপ সরকার বলেন, “খানাখন্দে ভরা রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে কলেজে যেতে হয় প্রাণ হাতে করে। অধিকাংশ দিন কলেজ যেতে দেরি হয়ে যায়। তাছাড়া বর্ষার সময় খানাখন্দ জলে সমতল হয়ে যায়। তখন কোনটা গর্ত, কোনটা পথ বোঝা যায় না। ফলে দুর্ঘটনা যেন আমাদের নিত্য সঙ্গী।”

প্রতি মাসে কত প্রসূতির প্রসব হয়েছে হালপাতালে আর বাড়িতে কয়জনের তা নিয়ে প্রতি মাসের বৈঠকে তিরস্কৃত হতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের। এ কথা জানিয়ে ডাহাপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সি পি এমের দিলসাদ শেখ বলেন, “হাজার মাথা কুটলেও বেহাল পথের কারণে হাসপাতালে প্রসূতি নিয়ে যেতে রাজি হয়না মাতৃযান। আবার মাতৃযান জুটলেও পথে প্রাণ হারানোর ভয়ে বাড়িতেই মায়েরা প্রসব করেন। আর বকুনি খান মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা।”

বেহাল রাস্তার জন্য পর্যটন শিল্প মার খাচ্ছে বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা সমীর ঘোষ। তিনি বলেন, “বেহাল রাস্তার কারণে বিকল্প পথের আশ্রয় নেওয়ায় পর্যটকদের সময় ও অর্থ দ্বিগুণেরও বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে মার খাচ্ছে পর্যটন শিল্প।”

রাস্তা খারাপ মানছেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার। তিনি বলেন, “বেহাল রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরে জমা দিয়েছি। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে কাজ হবে নওদাপাড়া রেলগেট থেকে পিরতলা পর্যন্ত। প্রায় ৮ কিলোমিটার পথের জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা।”

গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে রাজ্য সরকার ওই টাকা দিলেই রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হবে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন