লালবাগে সারদার জমি দখল নিল ইডি

সারদার প্রায় সাত একর জমির দখল নিল ইডি। বছর তিনেক আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় আবাসন, হোটেল, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, কমিউনিটি হল তৈরির জন্য লালবাগের নাকুড়তলা এলাকায় প্রায় সাত একর জমি কিনেছিলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। আদালতের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার দুপুরে লালবাগের সব্জি-কাটরা মৌজার ওই জমিতে ফ্লেক্স টাঙিয়ে দেয় ইডি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লালবাগ শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৮
Share:

সারদার কেনা বাগানে ইডি। বৃহস্পতিবার বহরমপুরে।

সারদার প্রায় সাত একর জমির দখল নিল ইডি। বছর তিনেক আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় আবাসন, হোটেল, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, কমিউনিটি হল তৈরির জন্য লালবাগের নাকুড়তলা এলাকায় প্রায় সাত একর জমি কিনেছিলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। আদালতের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার দুপুরে লালবাগের সব্জি-কাটরা মৌজার ওই জমিতে ফ্লেক্স টাঙিয়ে দেয় ইডি। তাতে ‘আজ থেকে ওই জমি ইডি’র হেফাজতে থাকবে’ বলে উল্লেখ রয়েছে। ইডি’র পক্ষে এ দিন অ্যাসিস্ট্যান্ট এনফোর্সমেন্ট অফিসার অরুণগোপাল পাণ্ডে এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর বি দত্ত মুর্শিদাবাদে আসেন। ইডি’র পক্ষে বি দত্ত বলেন, “আদালতের নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। ওই জমি এখন থেকে ইডি’র দখলে থাকবে বলে ফ্লেক্স টাঙিয়েও দেওয়া হয়েছে।” ওই জমির ভবিষ্যৎ কী হবে? বি দত্ত বলেন, “আদালতের পরবর্তী নির্দেশের উপরেই ওই জমির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।”

Advertisement

জমির মালিক অমলকৃষ্ণ দাস অবশ্য বলেন, “সারদা গোষ্ঠীকে ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকায় ওই জমি বিক্রি করার কথা হয়। সেই মতো ২০১০ সালে ৪ মার্চ দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তিও হয়। কিন্তু চুক্তির বছর খানেক পরে ২০১১ সালের মার্চে ৭৫ লক্ষ টাকা দেয় ওই গোষ্ঠী। কিছু দিনের মধ্যেই বাকি টাকা পরিশোধ করে দিলে ওই বছরই মে মাসে পুরো জমি রেজিষ্ট্রি করে দিই।” অমলবাবুর দাবি, “ওই জমি কেনার জন্য তিন থেকে পাঁচ জন দালাল ও সারদার ম্যানেজার নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ওই জমির দাম ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা হতে পারে না। বাজারের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে সারদা আমার কাছ থেকে ওই জমি কিনেছিল। চুক্তি হওয়ার বেশ কিছু দিন পরে বাড়িতে এসে সারদার ওই লোকজন ৩০-৪০টি চেক দিয়ে যায়। ওই চেক ভাঙাবার পরেই টাকার জন্য আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। পরে ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা তাদের দিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে ছ’লক্ষ টাকা এমআইএস করে রাখাও আছে। সেই টাকা আমি সারদার কাছ থেকে পাব।”

তবে রেজিষ্ট্রির পরেও সারদা ওই জমি অধিগ্রহণে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। ফলে গত তিন বছর ধরে ওই জমিতে চাষাবাদ করছেন অমলবাবু। এখন ওই জমিতে লেবু বাগান, লিচু গাছ রয়েছে। সব্জিরও চাষ হচ্ছে সেখানে। তা দেখে জমির মালিকের উদ্দেশ্যে মজা করে ইডি’র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর বলেন, “সরকারি ভাবে আমাদের বোধহয় আর কখনও এখানে আসার প্রয়োজন হবে না। তবে বেসরকারি ভাবে এলে আমাদের তখন লিচু খাওয়াবেন তো?” তিনি আরও বলেন, “আপনি তো মশাই লাভবান হলেন! জমি বেচে সারদার কাছ থেকে টাকাও পেলেন আবার জমি ভোগও করছেন।”

Advertisement

মূল জমিতে ঢোকার মুখেই রয়েছে বিঘা খানেক জমির উপরে অমলবাবুর নিজস্ব কাঠের মিল। ওই মিলের ভবন-সহ জমি কিনতেও চেয়েছিল সারদা গোষ্ঠী। অমলবাবু বলেন, “ওই জমি ও মিলের ভবন বাবদ আমি ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করি। সারদার লোকজন মেনেও নেয়। সারদার যে প্রজেক্ট তৈরির কথা ছিল, সেখানে মিলের মিস্ত্রিদের কাজ দেওয়ারও কথা বলেছিল। কিন্তু পরে আর কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়নি তারা।”

সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে জমির মালিকের যে বায়নানামা হয়, তাতে জমি বিক্রি বাবদ ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা দেওয়ার উল্লেখ রয়েছে। অমলবাবু বলেন, “সারদা গোষ্ঠীর পক্ষে কয়েক জন এজেন্ট জমি বিক্রির ব্যাপারে মধ্যস্থতা করে। শুরুতে ওই জমিতে হাসপাতাল নির্মাণের কথাও বলা হয়। হাসপাতাল নির্মাণ হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন বলে জমি বিক্রি করতে রাজি হই। জমি রেজিষ্ট্রির পরে অবশ্য জানতে পারি‘বহরমপুর প্রজেক্ট’ নামে ওই জমিতে আবাসন, হোটেল, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, কমিউনিটি হল তৈরির কথা।” যদিও সারদার ওই জমি কেনার বিষয়টি শুরুতে প্রকাশ্যে আসেনি। ওই অর্থলগ্নি সংস্থায় বিপর্যয়ের পরেই জমি সংক্রান্ত বিষয়টি জানা যায়। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে ডোমকল থানার পুলিশ। গত ২০১৩ সালের ১ মে লালবাগের বাড়িতে এসে ওই জমির মালিক অমলকৃষ্ণ দাস ও তাঁর এক জামাই অশোককুমার সিংহ রায়কে জিজ্ঞাসাবাদও করে তারা। তার আগে ডোমকলে সারদা অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ সারদার কয়েক জন কর্মীকে গ্রেফতারও করে। এর পরেই জেলায় সারদা গোষ্ঠীর নামে সম্পত্তি কেনাবেচা বিষয়ক কোনও অভিযোগ পেলে ডোমকল থানার পুলিশ তদন্ত করবে বলেও জেলা পুলিশ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মত লালবাগের জমি বিষয়ক মামলাটিও ডোমকল থানার পুলিশই তদন্ত শুরু করে। সারদা গোষ্ঠীকে জমি বিক্রির ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ওই সংস্থার দুজন এজেন্টকে পুলিশ খুঁজছে। সারদা বিপর্যয়ের পরে তারা অবশ্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

অমলবাবুর জামাই অশোকবাবু বলেন, “২০১১ সালের মে মাসে পাওনা টাকার জন্য কলকাতায় সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে দেখা করি। তৎকালীন সারদার ম্যানেজার মনোজ নেগেল আমাকে সুদীপ্তবাবুর ডায়মণ্ড হারবারের অফিসে নিয়ে যান। রাত ১১টায় আমার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ওই এলাকায় আমার এক বিঘে জমি রয়েছে। সেই জমিটিও সারদার নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। ওই জমির দাম হিসেবে ৩০ লক্ষ টাকা দেবেন বলেও জানান।”

২০১৩ সালের জুন-জুলাইয়ে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথাও সারদা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। কিন্তু তার আগে ওই সংস্থায় বিপর্যয় ঘটে যায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সারদা গোষ্ঠীর ওই জমির এখন পর্যন্ত কোনও মিউটেশন হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন