শিক্ষক নেই, সভা করে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত সাগরদিঘিতে

রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির দৈন্য দশা নিয়ে দিনকয়েক আগেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন তৃণমূলেরই শিল্পী সাংসদ যোগেন চৌধুরী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছিল রাজ্যের শাসক দল। সেই ঘটনার দিনকয়েক পরেই শিক্ষকের অভাবে রীতিমতো সভা ডেকে সাগরদিঘির দিয়ার বালাগাছির বাসিন্দারা গ্রামের একমাত্র আপার প্রাইমারি স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন। সোমবার ওই ঘটনার পরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ২৩২ জন পড়ুয়ারা আতান্তরে পড়ল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৩
Share:

রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলির দৈন্য দশা নিয়ে দিনকয়েক আগেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন তৃণমূলেরই শিল্পী সাংসদ যোগেন চৌধুরী। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছিল রাজ্যের শাসক দল। সেই ঘটনার দিনকয়েক পরেই শিক্ষকের অভাবে রীতিমতো সভা ডেকে সাগরদিঘির দিয়ার বালাগাছির বাসিন্দারা গ্রামের একমাত্র আপার প্রাইমারি স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন। সোমবার ওই ঘটনার পরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ২৩২ জন পড়ুয়ারা আতান্তরে পড়ল।

Advertisement

সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কিনার হোসেন জানান, সবচেয়ে কাছের গৌরীপুর হাই স্কুল গ্রাম থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে। সেই কথা মাথায় রেখেই ২০০৯ সালে গ্রামে এই আপার প্রাইমারি স্কুলটি চালু করা হয়। এতদিন অবসরপ্রাপ্ত ৩ জন হাই স্কুল শিক্ষককে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে স্কুলটি চলছিল। তাঁদের মধ্যে ২ জন শিক্ষক অবসর নিয়েছেন এ বছর জানুয়ারিতে। তারপর থেকেই একজন শিক্ষক স্কুলের ৪টি ক্লাস চালাচ্ছিলেন। তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন, একা একা তিনি আর স্কুল চালাতে পারবেন না। কিনার বলেন, “এই অচলাবস্থার কথা বহু বার শিক্ষা দফতরের কর্তাদের জানিয়েছি। কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া গ্রামবাসীদের আর কিছুই করার ছিল না। শাসক দলের লোক হলেও এই বাস্তব অবস্থাকে অস্বীকার করি কী করে!”

ঝাঁ চকচকে দ্বিতল স্কুল ভবনে ৬ টি ঘর, চেয়ার, বেঞ্চ, টেবিল অভাব নেই কোনও কিছুরই। অথচ নেই শুধু শিক্ষক। স্কুলের একমাত্র শিক্ষক মহম্মদ আসাদুল্লা বলেন, “৬৪ বছর বয়সে বাড়ি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরের এই স্কুলে এসে শিক্ষকতা করা এমনিতেই কষ্টকর। তার উপরে একাই পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৪টি ক্লাসের প্রায় আড়াইশো পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুল চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষা দফতর ও গ্রামের লোকজনকেও সে কথা জানিয়ে দিয়েছি।” তারপরেই সোমবারের সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Advertisement

একসময় এই স্কুলেই শিক্ষকতা করে অবসর নিয়েছেন কড়াইয়ার কাজেম আলি। তিনি বলেন, “সব কিছুরই একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা না করে স্কুল চালু করে দেওয়াটাই উচিত হয়নি। স্কুলের পড়ুয়ারা এখন কী করবে?”

তবে জঙ্গিপুর মহকুমায় শুধু এই একটি স্কুলই নয়, একই অবস্থায় পড়ে কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে রমাকান্তপুর আপার প্রাইমারিতেও। ৩৫২ জন ছাত্রছাত্রীর ওই স্কুল চলছে এক জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে। দস্তামারাতেও ৩০০ পড়ুয়ার স্কুল চালাচ্ছেন একজন শিক্ষক। প্রদীপ পাঠশালা আপার প্রাইমারিতে ৩১১ জন ছাত্রের জন্য রয়েছেন মাত্র দু’জন শিক্ষক। যাঁদের মধ্যে একজন অবসর নেবেন জুন মাসে।

মুর্শিদাবাদের সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক পঙ্কজ পাল এই সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলেন, “আগামী কিছুদিনের মধ্যেই শিক্ষকের অভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে জেলার বহু আপার প্রাইমারি স্কুল।

১০ ডিসেম্বর এই বিষয়ে জঙ্গিপুরে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভাও হয়েছে। সেখানে উপস্থিত জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে সব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিনি সোমবার রাজ্য শিক্ষা দফতরে গিয়ে জেলার স্কুলগুলির এই অবস্থার কথা জানাবেন। তারপর সরকার যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন