সেতুর স্তম্ভ ভরেছে আগাছায়। সুদীপ ভট্ট্াচার্যের ছবি।
চূর্ণীর স্রোতের মতো বয়ে গিয়েছে সময়। নদীর দু’পাশে গুটিকয়েক কংক্রিটের স্তম্ভ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বছরের পর বছর। আজও গড়ে উঠেনি একটা পূর্ণাঙ্গ সেতু। তবে এ বার মিলেছে আশ্বাস। পূর্ত দফতর জানিয়েছে, ওই সেতু তৈরির কাজ আবার শুরু হতে চলেছে। নতুন করে টাকাও অনুমোদন করা হয়েছে।
চূর্ণী নদীর ওপারে শিবনিবাস পঞ্চায়েত। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের হলেও গোটা শিবনিবাস পঞ্চায়েতটি বাকি ব্লকগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে হাঁসখালি ব্লক সংযোগকারী কংক্রিটের সেতুটি তৈরি না হওয়ায় শিবনিবাস গ্রাম পঞ্চায়েতের তারকনগর, শিবনিবাস, পার-চন্দননগর, পাবাখালি, কৃষ্ণপুর, খাটুরা, রাধাগোবিন্দপাড়া এলাকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পাশেই চূর্ণী নদীর উপরে কাঠ-বাঁশের অস্থায়ী সাঁকোর উপরে নিভর্রশীল। গুরুতর অসুস্থ রোগীকেও ভ্যানে করে নিয়ে আসা হয়। তারপর সাঁকোর উপর দিয়ে নদী পার। তবেই মিলতে পারে অ্যাম্বুলেন্স। সেখান থেকে কৃ ষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতাল কিংবা শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল।
বর্ষার মাসগুলিতে আবার খুলে দেওয়া হয় বাঁশ-কাঠের সাঁকো। তখন নৌকাই একমাত্র সম্বল। আর হাঁসখালি হয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে আসতে গেলে ১৫ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ যেতে হবে। কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের কাকলি হালদার বলেন, ‘‘গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতটাই আমাদের ব্লক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সেতু যোগাযোগ গড়ে উঠলে মাজদিয়া থেকে হাঁসখালি বাস পরিষেবা চালু হতে পারে।” কাকলিদেবীই জানালেন প্রস্তাবিত সেতুর মুখে তৈরি হচ্ছে কিষাণ মান্ডি। সেক্ষেত্রে চাষিরাও সরাসরি তাদের ক্ষেতের ফসল কিষান মান্ডিতে নিয়ে আসতে পারবেন সহজে। তবে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও জানেন না কবে কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি সেতু তৈরির জন্য নতুন করে টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। কাজও নাকি দ্রুত শুরু হবে।’’
এক সময় এই শিবনিবাসেই রাজধানী গড়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। চূর্ণী নদীর পাড়েই আছে তিনটি মন্দির, সুবৃহৎ শিবলিঙ্গ। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার বিশেষ পুজো উপলক্ষে কয়েক হাজার ভক্তের ভিড় হয়। মাঘ মাসের ভৈমী একাদশী থেকে শিবরাত্রি পর্যন্ত টানা ১৮ দিন মেলা বসে। আর এই ক’দিন হাজার হাজার মানুষের ভিড় হয়। উৎসবের উপচে পড়া জনসমাগম ওই অস্থায়ী বাঁশ-কাঠের সাঁকো পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। শিবনিবাস মন্দিরের পুরোহিত স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উৎসবের দিনগুলোতে প্রতি মুহূর্তে ভয়ে থাকি। বড়সড় দুর্ঘটনা যে কোনও দিন ঘটে যেতে পারে।’’
২০০৫ সালের নভেম্বরে মাসে এই সেতুটি অনুমোদন পায়। বরাদ্দ হয় ৩ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু হয়। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছে পূর্ত দফতর। পূর্ত দফতর (রাস্তা) এর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত ধল বলেন, ‘‘সেতু তৈরির কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে হচ্ছিল। বাধ্য হয়েই আমরা ওই ঠিকাদার সংস্থাকে বাদ দিয়ে দিই।’’ তিনি জানান, ওই ঠিকাদার সংস্থা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ‘আর্বিট্রেশন কোর্টে’ মামলা করেছে। ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাল্টা মামলা করেছে পূর্ত দফতরও।
ঠিকাদার সংস্থার মালিক মধুসূদন গড়াই অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় যে নকশায় ভুল আছে। সেই নকশা সংশোধিত হয়ে আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ইতিমধ্যে খরচও অনেক বেড়ে যায়। সেই কারণেই আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আমরা আর কাজ করতে পারব না।’’ ২০১১ সালে ফের ওই সেতু প্রকল্পের খরচ নতুন করে বানানো হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তা সরকার অনুমোদন করে। দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘চিফ ইঞ্জিনিয়ার জুন মাসের ১০ তারিখে টেন্ডার ডাকার অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা খুব শীঘ্রই টেন্ডার ডাকতে চলেছি।’’