জখম সঞ্জয়। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক
২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসে তিনি সীমান্ত পেরিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলেন বিএসএফের শুভেচ্ছাবার্তা ও মিষ্টি নিয়ে। ফেরার পথে হোগলবেড়িয়ার কাছারিপাড়ার সঞ্জয় মণ্ডল নামে ওই যুবককে হাঁসুয়া দিয়ে কোপাল বাংলাদেশের চার জন দুষ্কৃতী। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ও পরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ওই যুবক বলছেন, “কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছি মশাই। বিএসএফ যতই বলুক আর ওমুখো হচ্ছি না। সৌজন্য দেখাতে গিয়ে এমন পরিণাম হবে জানলে কিছুতেই যেতাম না।”
এমন ঘটনায় বিএসএফ তো বটেই, বিস্মিত গোটা গ্রাম। ওই ঘটনায় আজ, বুধবার সকাল দশটা নাগাদ চরের মাঠে বিএসএফ ও বিজিবি-র ফ্ল্যাগ মিটিং হওয়ার কথা। বিএসএফের ৪৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের এক কর্তা বলছেন, “এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। আমরা এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিজিবির সঙ্গে কথা বলব।” কাছাড়িপাড়ার বাসিন্দা তথা মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, “বছরের অন্যান্য দিন বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হতে হয়। এই দিনটাকেও ওরা বাদ দিল না! বিএসএফকে অনুরোধ করেছি এই বিষয়ে যেন কড়া পদক্ষেপ করা হয়।” করিমপুরের বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এমন ঘটনার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না করলে তা দুই দেশের পক্ষেই ক্ষতিকারক। এতে দুই দেশের সীমান্তের মানুষ তো বটেই, সীমান্তরক্ষীদেরও আন্তরিক সম্পর্ক বিঘ্নিত হবে।”
বিএসএফ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাছারিপাড়া সীমান্তে বিএসএফের নৌকা চালান সঞ্জয়। পাশাপাশি দিনের বেলা চরের মাঠের ফসল পাহারাও দেন। সোমবার সকাল ন’টা নাগাদ তিনি মিষ্টি ও শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে বিএসএফের ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার রামকৃষ্ণপুর বিজিবি ক্যাম্পের উদ্দেশে। ঘণ্টা দুয়েক পরে বিজিবি ক্যাম্প থেকে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। আচমকা সঞ্জয়কে চার জন বাংলাদেশি দুষ্কৃতী পিছন থেকে থামতে বলে। প্রথমে অবশ্য বিপদ আঁচ করতে পারেননি ওই যুবক। কিন্তু যখনই ওই দুষ্কৃতীরা তাঁর দিকে দৌড়তে শুরু করে তখনই সঞ্জয় বুঝতে পারেন কিছু একটা অঘটন ঘটতে চলেছে। প্রাণপণ তিনিও ছুটতে শুরু করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারতীয় সীমান্তের চরের মাঠে ঢুকে ওই দুষ্কৃতীরা তাঁকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে চম্পট দেয়। তাঁর চিৎকারে বিএসএফও ছুটে যায়। কিন্তু ততক্ষণে ওই দুষ্কৃতীরা নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে।
ওই যুবকের বাঁ পায়ের হাঁটুতে হাঁসুয়ার কোপ লাগে। সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফের গাড়িতেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। বাড়ির বিছানায় শুয়ে সঞ্জয় বলছেন, “এমন কাজ তো আর আজ থেকে করছি না। বিএসএফের হয়ে কতবার ১৫ অগস্ট, ২৬ জানুয়ারি, ১ ডিসেম্বর (বিএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবস) বিজিবির ক্যাম্পে মিষ্টি ও শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে এসেছি। সঙ্গে করে ওদেরও শুভেচ্ছাবার্তা বয়ে এনেছি। ফ্ল্যাগ মিটিং-এর চিঠিও এই বান্দাই বয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু কোনওবার তো এমনটা ঘটেনি। এ বার যে ওরা কেন আমার উপর আক্রমণ করল তাও বুঝতে পারছি না।”
তবে গ্রামবাসী ও বিএসএফের একাংশের অনুমান, সঞ্জয় চরের মাঠের ফসল পাহারা দেওয়ায় বাংলাদেশের দুষ্কৃতীরা আর আগের মতো ওই এলাকায় ফসল চুরি করতে পারে না। সেই রাগ থেকেও এমনটা ওরা করতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ সিপিএমের শঙ্কর মণ্ডল মনে করছেন, এর পিছনে অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে। কী রকম? শঙ্করবাবু বলেন, “ওপার বাংলার কিছু দুষ্কৃতী চায় না যে, বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে একটা সুসম্পর্ক বজায় থাক। তাতে ওদের দুষ্কর্মে বাধা পড়ে। সেই কারণেও কেউ এমনটা করে থাকতে পারে বলে আমরা বিএসএফকেও জানিয়েছি।”