সাধারণ মানুষকে বাস ধরতে হলে আসতেই হয় বাইপাসে। সুদীপ ভট্টাচার্যের ছবি।
শহর এড়িয়ে বাইপাস দিয়ে চলে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস। ফলে প্রতিদিন চরম হয়রান হতে হচ্ছে শান্তিপুরের বাসিন্দাদের। শহরের বাইরে বাইপাসের মোড়ে নেমে কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে তারপর শহরে ঢুকতে হচ্ছে। বাইপাস থেকে শহরে যাওয়ার একমাত্র উপায় ভ্যানরিকশা। সন্ধ্যার পর তার জন্যও আবার হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়। সুযোগ বুঝে রিকশা চালকরা অনেক বেশি ভাড়া দাবি করেন বলেও অভিযোগ। বাইপাসের মোড় কিংবা বাইপাস থেকে শহরে ঢোকা পর্যন্ত এই নির্জন রাস্তা কতটা নিরাপদ তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, বাস যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যের পর থেকে ওই দু’টি বাইপাস মোড়ে পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়।
কলকাতা কিংবা উত্তরবঙ্গগামী বাসগুলি শান্তিপুর শহরের ভিতর দিয়েই যাতায়াত করত। কিন্তু শহরের পাশ দিয়ে বাইপাস রাস্তা তৈরি হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ বাস শহর এড়িয়ে বাইপাস দিয়ে যাতায়াত করতে শুরু করেছে। ফলে যাঁরা বাসে চেপে শান্তিপুরে আসেন তাঁদের নামিয়ে দেওয়া হয় শহরের বাইরে গোবিন্দপুর কিংবা ঘোড়ালিয়া বাইপাস মোড়ে। এর ফলে শহরের বাসিন্দাদের ভোগান্তি বেড়েছে। তবে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন তাঁতের শাড়ির ব্যবসায়ীরা। শান্তিপুর তাঁত ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক দাস বলেন, “শহরের ভিতরে দূরপাল্লার বাস ঢোকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাইরে থেকে কাপড় কিনতে আসা পাইকার ব্যবসায়ীদের প্রচণ্ড সমস্যা হয়। অথচ শান্তিপুরের মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি হল শাড়ির ব্যবসা। আমরা চাই শান্তিপুরের অর্থনীতির স্বার্থে আবার শহরের ভিতর দিয়ে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হোক।”
শহরের তাঁত ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহে বৃহস্পতি ও রবিবার দু’দিন কাপড়ের হাট বসে। সেই হাটে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। শুধু এই রাজ্য থেকেই নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ব্যবসায়ী আসেন এই হাটে। ভোর সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যেই হাট বসে। ব্যবসায়ীদেরও তাই ভোর থাকতেই হাটে ঢুকে যেতে হয়। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী কলকাতা বা উত্তরবঙ্গের বাসে আসেন শান্তিপুরের হাটে। কিন্তু বাইপাসে নেমে চরম সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। কারণ ভোরে ভ্যানরিকশা মেলে না। অগত্যা পায়ে হেঁটে শহরে ঢুকতে তাঁদের। তারকবাবু বলেন, “এ ভাবে ওই নির্জন রাস্তা দিয়ে শহরে ঢোকা রীতিমতো বিপজ্জনক। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়েও একটা প্রশ্ন থেকে যায়।”
ব্যবসায়ীরা একা নন, এই একই সমস্যার কারণে হয়রান হচ্ছেন সকলেই। বাইপাসের মোড়ে নেমে প্রতিদিন মোটা টাকা দিয়ে ভ্যানরিকশা ভাড়া করে যাতায়াত করতে গিয়ে সময় ও অর্থ দুই-ই বেশি খরচ হচ্ছে। আবার যাঁরা ট্রেনে যাতায়াত করেন তাঁদের সমস্যাও কম নয়। শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “শহরের ভিতরে দূরপাল্লার বাস না ঢোকায় আমাদের মতো অনেকেই বাধ্য হন ট্রেনে যাতায়াত করতে। কিন্তু তাতে সময় অনেক বেশি লেগে যায়। ওই দূরপাল্লার বাসগুলি শহরে ঢুকলে এই সমস্যা হত না।”
শান্তিপুরের মানুষের ক্ষোভ, শহরে না ঢুকে বাইপাস মোড়ে বাসগুলো যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। অথচ সেখানে কোনও প্রতীক্ষালয় তো দূরের কথা, সামান্য ছাউনিটুকুও নেই। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনও গতি নেই। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত দেবনাথ বলেন, “দিনের পর দিন এই হয়রানি আর সহ্য হচ্ছে না। বিধায়ক থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আবেদন-নিবেদন করেও কোনও কাজ হয়নি। শহরবাসীরা কিন্তু ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।” নদিয়া জেলা নিত্য বাসযাত্রী সমিতির সম্পাদক প্রশান্ত দে বলেন, “সমস্যাটা দীর্ঘ দিনের। এর সমাধান না হলে ভোগান্তি থেকেই যাবে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে শান্তিপুরের পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের বিধায়ক অজয় দে বলেন, “শহরের ভিতরে দূরপাল্লার বাস না ঢোকায় মানুষের খুবই সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি জানিয়ে আমি নানা জায়গায় লেখালিখি করেছি। বিধানসভাতেও এই সমস্যার কথা একাধিকবার তুলেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” তিনি জানান, অনেক চেষ্টা করে বালুরঘাট ও মালদহের দু’টি সরকারি বাস শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই বাস দু’টিও নিয়মিত শহরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে না। তবে পুরসভার তরফে বাইপাসের মোড় দু’টিতে যাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রতীক্ষালয় করে দেওয়া হবে। নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “ওই বাসগুলির শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়ার রুট পারমিট যদি থাকে তাহলে বাসগুলি যাতে শহরের ভিতর দিয়েই যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”
(চলবে)