স্কুলে গরমের ছুটি বাড়ায় খুশি দুই জেলা

অসহনীয় গরমের মধ্যে স্কুলের পড়ুয়ারা দিন কয়েক ধরেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। অবশেষে সরকার চলতি মাসের ১৬ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত স্কুলে পুনরায় গরমের ছুটি ঘোষণা করায় স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন পড়ুয়া, অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলেই। তবে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে এবং স্কুলে শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের উপস্থিত থাকতে হবে বলে সরকারি ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি অমিয় স্মৃতি বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র।

অসহনীয় গরমের মধ্যে স্কুলের পড়ুয়ারা দিন কয়েক ধরেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। অবশেষে সরকার চলতি মাসের ১৬ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত স্কুলে পুনরায় গরমের ছুটি ঘোষণা করায় স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন পড়ুয়া, অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলেই। তবে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে এবং স্কুলে শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের উপস্থিত থাকতে হবে বলে সরকারি ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে। লালবাগ এমএমসি গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সোমালী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রতি দিনই জেলার কোনও না কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে। সেই দিক থেকে দেখলে ছুটি ঘোষণা করে সরকার ভালই করেছে।”

Advertisement

নিমতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অজয় রায়চৌধুরী বলেন, “গরমে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করতে অসুবিধে হচ্ছিল ঠিকই। সে ক্ষেত্রে ছুটি ঘোষণা না করে সকালের দিকে ক্লাস চালু করলে ভাল হত। কেননা, বোর্ড নির্দ্ধারিত সূচি অনুযায়ী নবম শ্রেণির দ্বিতীয় ইউনিট টেস্ট এবং দশম শ্রেণির প্রথম ইউনিট টেস্ট এ মাসে হওয়ার কথা ছিল। এই ছুটি হওয়ার ফলে ওই ইউনিট টেস্ট যেমন পিছিয়ে গেল, তেমনই অন্য সময়ে নেওয়ার অসুবিধে তৈরি হল।” তাঁর কথায়, “যেখানে শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের স্কুলে আসতেই হচ্ছে, সকালে ক্লাস করলে ভালই হত।”

শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর বর্ধিত গরমের ছুিৃট ঘোষণার সময়ই থানারপাড়ার নতিডাঙ্গা অমিয় স্মৃতি বিদ্যালয়ের জনা ছ’য়েক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ অসুস্থ পড়ুয়াদের নতিডাঙা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানোর পাশাপাশি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এই স্কুলেরই মিড-ডে মিলের কাজের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন মহিলা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বারান্দায় পাশাপাশি শুয়ে আছে অষ্টম শ্রেণীর তিন ছাত্রী-আর্জিনা খাতুন, রুবিনা খাতুন ও শিল্পা খাতুন। তাদের হাতে লাগানো স্যালাইনের ছুঁচ। স্থান সঙ্কুলানের জন্য পুরুষ বিভাগে ভর্তি রয়েছে অষ্টম শ্রেণীর আরেক ছাত্রী সিরিনা আখতার মণ্ডল। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী তাঞ্জিলা খাতুনের চিকিৎসাচলছে বারান্দায়।

Advertisement

কী ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ল ওই পড়ুয়ারা? তাঞ্জিলার কথায়, “ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই খুব গরম লাগছিল। হঠাৎ মাথা ঘুরতে শুরু করলে স্যারকে বলি। তারপর আর কিছুই মনে নেই।” আর্জিনা ও সিরিনা আখতার মণ্ডল বলে, “‘সি’ সেকশনের আমাদের ক্লাসরুমটা অন্য ঘরের তুলনায় ছোট। গাদাগাদি করে বসতে হয়। ঘরের তিনটে ফ্যানই চলছিল ঢিমে তালে। আচমকা শুরু হল মাথাঘোরা ও বমি। সঙ্গে সঙ্গে মেঝেয় পড়ি যাই।” আর্জিনার দাদা রহিদুল হালসানার উদ্বেগ, “এই গরমে বোনকে স্কুলে পাঠাতেই ভয় করছে।” গরমে মেয়েকে স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাঞ্জিলা খাতুনের মা মর্জিনা বিবিও। অভিভাবকদের মতো চিন্তিত স্কুলের শিক্ষিকা বেলা সরকারও। তিনি জানান, “এই গরমে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি।” তবে অসুস্থ ছাত্রীদের কারও অবস্থা জটিল নয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শুধু করিমপুরই নয়, কৃষ্ণনগর মহকুমারও প্রতিদিনই কোনও না কোনও স্কুলের পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। বিশেষ করে প্রাথমিক স্কুলের কচিকাচারা গরমে কাহিল হয়ে পড়ছিল। স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হারও উল্লেখযোগ্য ভাবে নামছিল। এ নিয়ে সকলের মধ্যেই উদ্বেগের পারদ চড়ছিল। কিছু কিছু স্কুল আবার স্বতঃপ্রনোদিতভাবেই ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছিল। তবে এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর পুনরায় গরমের ছুটি ঘোষণায় খুশি হাওয়া বইছে সদর মহকুমার বিভিন্ন স্কুলে।

কৃষ্ণনগর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গরমে ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। বিশেষ করে উপর তলার ঘরে ক্লাস করার মতো পরিস্থিতিই নেই। সংরক্ষিত ছুটি থেকে বাধ্য হয়ে আমরা এক দিন ছুটি দিয়েছিলাম।” বৃহস্পতিবার টিফিনের পরে এবং শুক্রবার ছয় পিরিয়ডের পরে স্কুল বন্ধ করে দেন হাট চাপড়ার কিং এডওয়ার্ড হাই স্কুল কর্তৃপক্ষও। ধর্মদা এলাকার এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীবাস দাস বলেন, ‘‘এই ভ্যাপসা গরমে প্রতিদিনই কোনও না কোনও বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। আমরা চাইছিলাম সকালে স্কুল হোক। সরকার ছুটি দিয়ে দেওয়াতে আমরা একটু নিশ্চিন্ত হলাম।”

সরকার ছুটি ঘোষণার আগেই শুক্রবার ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জেলার প্রতিটি স্কুল সকালে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের সভাপতি অর্চনা ঘোষ সরকার বলেন, “গরমে বহু স্কুলেই ছেলে-মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। সেই কারণেই আমরা সকালে স্কুল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সরকার ছুটি দিয়ে দেওয়ায় আরও সুবিধা হল।” তবে ছুটি নিয়ে নদিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। চলতি মাসের ১৬ তারিখে স্কুলে-স্কুলে কণ্যাশ্রী প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে যাওয়ার কথা প্রশাসনিক কর্তাদের। কিন্তু সরকার তো ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে! জেলা শাসক পি বি সালিম বলেন, ‘‘কণ্যাশ্রী প্রকল্পকে একশো শতাংশ সফল করতে স্কুলগুলিতে আধিকারিকরা যাবেন। কোনও যোগ্য ছাত্রী আবেদন করতে বাকি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। তাই ক্লাস না হলেও স্কুল খোলা থাকবে।”

মুর্শিদাবাদে গরমে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। বাধ্য হয়ে অনেক জায়গাতে অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে পুনরায় গরমের ছুটি পড়ায় উৎফুল্ল অভিভাবকেরা। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাগির হোসেন বলেন, “রাজ্য সরকারের মানবিক সিদ্ধান্তের ফলে দাবদাহের হাত থেকে স্বস্তি পেল প্রাথমিকের শিশুরা।” এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক তরুণ দাস অবশ্য বলেন, “এতে শিশুরা স্বস্তি পেলেও স্কুলগুলি কিছুটা বেকায়দায় পড়বে। কারণ, বছরে ৬৫ দিনের বেশি ছুটি দেওয়া যাবে না। ছুটির পরিবর্তে সরকার সকালে স্কুল করার সিদ্ধান্ত নিলেই ভাল হত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন