সাকুল্যে ১৩ পড়ুয়া, স্কুল বাঁচাতে মরিয়া গ্রামবাসীরা

রান্না ঘর বাদ দিলে ঘর রয়েছে ১৩টি। একজন শিক্ষাকর্মী-সহ শিক্ষকের সংখ্যাও ১৩ জন। আর কাকতালীয় হলেও স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাটাও ১৩। তেরোর গেরোয় আটকে গিয়েছে জলঙ্গির উদয়নগর তফসিলি জুনিয়র হাইস্কুল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একসময় গমগম করে চলত পড়াশোনা। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের নানা দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে স্কুলে। এখন প্রায় বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৭
Share:

রান্না ঘর বাদ দিলে ঘর রয়েছে ১৩টি। একজন শিক্ষাকর্মী-সহ শিক্ষকের সংখ্যাও ১৩ জন। আর কাকতালীয় হলেও স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাটাও ১৩। তেরোর গেরোয় আটকে গিয়েছে জলঙ্গির উদয়নগর তফসিলি জুনিয়র হাইস্কুল।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একসময় গমগম করে চলত পড়াশোনা। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের নানা দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে স্কুলে। এখন প্রায় বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা-সহ শিক্ষক ও প্রশাসনিক কতার্রা আলোচনায় বসেন। সেখানেই ঠিক হয় স্কুলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে ভর্তির আবেদনও জানানো হবে। পাশাপাশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক গিরিন্দ্রনাথ দাসের অপসারণ ও শাস্তির দাবিও জানান তাঁরা। প্রধান শিক্ষক একটি গণ্ডগোলে জড়িয়ে বর্তমানে জেল হেফাজতে।

Advertisement

জলঙ্গির অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক তাজউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। স্কুলবাড়ি নির্মাণের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা না দেওয়া, মিড-ডে মিল থেকে স্কুলের সরঞ্জাম কেনার কোনও হিসেবই দেননি গিরীন্দ্রনাথবাবু। এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে স্কুলের নামে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার ভুয়ো শংসাপত্র বিক্রির অভিযোগও উঠেছে।” তাঁর কথায়, “দুর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উনি এখন স্কুলটা বন্ধ করে দিতে চাইছেন। গোটা বিষয়টি আমরা জেলা শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি।”

১৯৮৩ সালে উদয়নগর চরে তৈরি হয় উদয়নগর তফসিলি জুনিয়র হাইস্কুল। পদ্মার গ্রাসে গ্রামের একাংশ তলিয়ে যাওয়ায় স্কুলটি জলঙ্গির সাহেবরামপুর এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৯১ সালে প্রথম বছরেই প্রায় ৫০০ ছাত্রছাত্রী ওই স্কুলে ভর্তি হয়। এলাকার বাসিন্দা মোহিত দেবনাথের কথায়, “দিনে দিনে প্রধান শিক্ষক স্কুলের শৃঙ্খলা থেকে পঠনপাঠন সব শিকেয় তুলে দেন। ফলে অভিভাবকেরা এখন আর ওই স্কুলে ছাত্র ভর্তি করতে চান না।” চোখের সামনে স্কুলটাকে এভাবে হারিয়ে যেতে দিতে চান না তাঁরা কেউই। অভিভাবক আমিনুল ইসলাম বলেন, “বাড়ির কাছে এই স্কুলটি চললে খুব ভালো হয়। ছেলেমেয়েরা তাহলে হেঁটেই স্কুলে যেতে পারবে।”

স্কুলের শিক্ষকদেরও অভিযোগ, তাঁরা বার বার স্কুলের অবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নানা ভাবে তাঁদের বাধা দিয়েছেন। এমনকী ছাত্র ভর্তির জন্য এলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও তিনি বলছেন। শিক্ষক দীপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “প্রধান শিক্ষক আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। তাই তিনি চাইছেন স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাক। কিন্তু আমরা স্কুলটি বাঁচাতে চাই।”

মাস খানেক আগে গিরীন্দ্রনাথবাবু একদল যুবকের সঙ্গে ভুয়ো শংসাপত্র নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে নিজের বন্দুক থেকে গুলি চালান। ওই ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর থেকে এলাকার বাসিন্দা, স্কুলের শিক্ষকেরা নড়েচড়ে বসেন। সুজিত মুর্মু নামের এক শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করে বুধবার স্কুলে আলোচনা সভা ডাকা হয়। এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন জলঙ্গির বিডিও সাধন দেবনাথ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাইফুল মোল্লা, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কাজিমুদ্দিন শেখ ও এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। সুজিতবাবুর কথায়, “আমরা সকলে চাই স্কুলটি ভালভাবে চলুক। প্রশাসনের কর্তারা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।’’

শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কাজিমুদ্দিন শেখ বলেন, “স্কুলের গৃহনির্মাণ থেকে মিড-ডে মিলের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দেননি প্রধান শিক্ষক। শৌচাগারের অবস্থাও বেহাল। দু’বছর স্কুলে কোনও শিক্ষক নিয়োগ করেননি।” তিনি বলেন “স্কুলের জন্য অর্থ মঞ্জুর করতে আমরা শিক্ষা দফতরকে

অনুরোধ করব।” জলঙ্গির বিডিও সাধন দেবনাথ বলেন, “প্রধান শিক্ষক স্কুলটিকে প্রায় বন্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। স্কুলটিকে আবার বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।”

কিন্তু সত্যিই কী বাঁচবে প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুলটি। আশঙ্কার ছায়া ছোট ছোট মুখ গুলোতে। এ দিনের আলোচনা তাদের আশ্বস্ত করতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন