সাগরদিঘির অসহায় বৃদ্ধার পাশে পুলিশ

স্বামী ছেলেকে একে একে খুন করেছিল প্রতিবেশীরা। আদালতে দোষীদের যাবজ্জীবন শাস্তি হয়েছে। তবুও দাপট কমেনি। তাদের কারাদণ্ডের পর এখন পরিবারের লোকেদের হুমকিতে বাড়ির বাইরে পা দেওয়া কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাগরদিঘির গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের দস্তুরহাট গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির কদবানু বেওয়ার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
Share:

স্বামী ছেলেকে একে একে খুন করেছিল প্রতিবেশীরা। আদালতে দোষীদের যাবজ্জীবন শাস্তি হয়েছে। তবুও দাপট কমেনি। তাদের কারাদণ্ডের পর এখন পরিবারের লোকেদের হুমকিতে বাড়ির বাইরে পা দেওয়া কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাগরদিঘির গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের দস্তুরহাট গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির কদবানু বেওয়ার। যদিও মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর নির্দেশে সাগরদিঘির পুলিশকর্তারা বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধাকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের বলা হয় বৃদ্ধার উপরে নজর রাখার জন্য। সেই সঙ্গে দুষ্কৃতীদের পরিবারের লোকেদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় যদি কোনও রকমভাবে বৃদ্ধাকে ভয় দেখানো হয় তাহলে তাঁদের সমুচিত শাস্তি পেতে হবে।

Advertisement

জমি নিয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে বিবাদের জেরে ১৯৯০ সালে বৃদ্ধার স্বামী নুরমান আলি খুন হন। আদালতে সেই খুনের মামলা চলাকালীন দুষ্কৃতীদের কথা না মেনে আদালতে সাক্ষী দিতে যাওয়ার অপরাধে ১৯৯৫ সালে ১৬ মে বৃদ্ধার ছেলে কামাল ও তাঁর এক বন্ধু বাবলুকে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যার মধ্যে ৬ জনই ছিল নুরমান খুনে অভিযুক্ত। দুই খুনের ঘটনায় মোট ১৮ জনের যাবজ্জীবন হয়।

চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর কামাল ও বাবলু খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তদের মধ্যে ৬ জনের ফের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন জঙ্গিপুরের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্রাক আদালতের বিচারক সোমেশ প্রসাদ সিংহ। বৃদ্ধা জানান, একই অপরাধীদের দু-দু’বার এ ভাবে শাস্তি হওয়ায় প্রতিবেশীদের কোপ গিয়ে পড়ে তাঁর উপর। রায় দানের পর কোনও মতে বাড়ি ফিরতে পারলেও এখন বাড়ির বাইরে পা রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না তিনি। প্রতিনিয়ত তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

বৃদ্ধা বলেন, “বাড়ির মধ্যেই নলকূপ বসিয়েছি। রাতে একা থাকতে ভয় হয় বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েকে এনে রেখেছি। থানায় পুলিশের কাছে যে যাব তারও কোনও উপায় নেই।” অন্য গ্রামে গিয়ে থাকার কথা বলেছিলেন অনেকে। কিন্তু সর্বহারা বৃদ্ধার মন চায় না স্বামী-শ্বশুরের ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে। বিপদ আছে জেনেও বাড়িতে পড়ে থাকেন।

জঙ্গিপুরের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্রাক আদালতের সরকারি আইনজীবী বামনদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছেলেকে খুনের মামলায় ৭ অভিযুক্তের সাজা ঘোষণার দিনই ওই বৃদ্ধা বিপদের আঁচ করেছিলেন। এজলাসে সেই কথাও জানিয়েছিলেন। বিচারক বলেছিলেন পুলিশের কাছে যেতে। কিন্তু বৃদ্ধাই জানান পুলিশ আর কত দিন তাকে রক্ষা করবেন। তাই বৃদ্ধাকে বলেছি অন্য গ্রামে গিয়ে থাকতে।”

গোবর্ধনডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফরওয়ার্ড ব্লকের আসিফুর রহমান বলেন, “ওই বৃদ্ধার বিপদের কথা জানি। অভিযুক্তরা খুব ভাল লোক নয়। তাই সবাই ওদের এড়িয়ে চলে। তবু ওই সব খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের পরিবারের লোকেদের ডেকে বলেছি যাতে ওই বৃদ্ধার উপর কোনও অত্যাচার না হয় তা দেখতে। তাঁরা কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও এমনটা কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখছি।”

জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই বৃদ্ধার সমস্যার কথা শোনার পর বৃদ্ধার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তারা বৃদ্ধার কাছ থেকে সব কথা শুনে এসেছে।”

তিনি জানান, প্রতিবেশীদের উপর নজর রাখতে বলা হয়েছে পুলিশকে। তারপরেও সমস্যায় পড়লে বৃদ্ধাকে বলা হয়েছে যেন থানায় খবর দেন। পুলিশ সব সময় বৃদ্ধার পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার। পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন