বহরমপুরে হুমায়ুন।—নিজস্ব চিত্র।
প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের ইফতার পার্টিতে অতিথি তালিকায় নাম নেই তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক ইন্দ্রনীল সেনের। বহরমপুর স্টেশন লাগোয়া সিরাজবাগে আগামী ১৯ জুলাই ওই ইফতার পার্টি হবে। তারই প্রস্তুতির কাজ সরেজমিন খতিয়ে দেখতে বুধবার সকালে বহরমপুরে এসেছিলেন হুমায়ুন। স্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেন, “গায়ক ইন্দ্রনীল সেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাই আমার ইফতার পার্টিতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানাইনি।”
‘সৌজন্যতা’ বজায় রেখে ইন্দ্রনীল সেন অবশ্য বলেন, “হুমায়ুন দলকে যখন জানিয়েছে, তখন আলাদা করে আমাকে জানানোর প্রয়োজন কোথায়? ১৭ জুলাইয়ের ইফতার পার্টিতে আমাকে উপস্থিত থাকার জন্য হুমায়ুন জানিয়েছিল। পরে কোনও কারণে ১৯ জুলাই ইফতার পার্টির দিন বদল হয়েছে। কোনও কাজ না থাকলে ওই পার্টিতে আমি অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করব।”
২০১২ সালের নভেম্বরে কংগ্রেস দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হন হুমায়ুন কবীর। পরে বিধানসভা উপনির্বাচনে হেরে যান এবং পরে মন্ত্রী পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। গত ৩০ মে জেলা কার্যকরী সভাপতি পদ থেকে তাঁকে হঠিয়ে দিয়ে জেলার তিনটে লোকসভা কেন্দ্রের জন্য তিন জন সভাপতি ও জেলা পর্যবেক্ষক হিসেবে ইন্দ্রনীল সেনকে মনোনীত করেন দলীয় নেতৃত্ব। ইন্দ্রনীল সেন গত ১১ জুলাই বহরমপুরের সিরাজবাগে রুদ্ধদ্বার সভায় জেলা কমিটি থেকে বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন করেন। নতুন ওই কমিটি থেকে হুমায়ুন কবীর, সুব্রত সাহা, সাগির হোসেন, মহম্মদ আলি, উত্পল পালকে ছেঁটে ফেলা হয়। বাকিরা ‘নীরব’ থাকলেও ‘অপমান হজম করতে’ পারেননি হুমায়ুন। গত সোমবার ইন্দ্রনীলের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়ের কাছে অভিযোগও করেন হুমায়ুন।
এই অবস্থায় তাঁর ইফতার পার্টি আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। হুমায়ুন বলছেন, “আগামী ২১ জুলাই কলকাতায় তৃণমূলের সভা রয়েছে। ওই সভায় কর্মী-সমর্থকরা কীভাবে পৌঁছবেন, সেই সব ব্যাপারে আলোচনার জন্য আমাদের জেলায় দলীয় কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। ইফতার পার্টিতে ওই বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।”
তৃণমূলের একাংশ অবশ্য মনে করছে, ইফতার পার্টিতে অনুগামীদের উপস্থিতির সংখ্যা বিচার করে হুমায়ুন ভবিষ্যত্ রাজনীতির রূপরেখা তৈরি করবেন। তাঁর ওই ইফতার পার্টিতে প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত সাহা, তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি, যুব তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি উত্পল পাল, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন সভাপতি সাগির হোসেন-সহ ২৬টি ব্লকের সভাপতিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে হুমায়ুন জানান। তিনি বলেন, “তৃণমূলের সকলকেই আমি নিমন্ত্রণ জানাবো। তৃণমূলের জঙ্গিপুর লোকসভা ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি ইমানি বিশ্বাস ও চাঁদ মহম্মদকে ইফতার পার্টিতে আসার জন্য অনুরোধ করেছি। তবে তৃণমূলের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি সুবোধ দাসকে আমি আমন্ত্রণ জানাবো না। রাজ্য নেতৃত্বের অনুমতি নিয়ে তবেই ইফতার পার্টি করতে হবে বলে সুবোধবাবু বলেছেন। তাই আমি তাঁকে আমন্ত্রণ জানাবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” সুবোধবাবু বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না।” ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূলের সঙ্গে থাকা বর্ষীয়ান নেতা সাগির হোসেন বলেন, “আমি ওই ইফতার পার্টি সম্বন্ধে এখনও কিছুই জানি না।” ইফতার পার্টি প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি মহম্মদ আলি, সুব্রত সাহারা।