হেরোইন আসক্তের মৃত্যু

‘হেরোইন’ জোগাড় করতে না পেরে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বহরমপুরের মনোজ দাস (২২) নামে এক যুবক। এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া আম্বেদকর কলোনিতে ওই ঘটনার পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০১:১৯
Share:

‘হেরোইন’ জোগাড় করতে না পেরে গলায় গামছার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বহরমপুরের মনোজ দাস (২২) নামে এক যুবক। এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া আম্বেদকর কলোনিতে ওই ঘটনার পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, এলাকায় হেরোইন কোথায় বিক্রি হচ্ছে পুলিশ সব জানে। কিন্তু যারা হেরোইন কারবারের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়ায় পুলিশ উদাসীন থাকে। হেরোইন কারবারিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করে না। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য ভাবলেশহীন গলায় বলেন, “ওই কলোনি এলাকায় হেরোইনের কারবারের বিষয়টি আমার নজরে ছিল না। গোটা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুর পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগীরথীর পাড় বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে আম্বেদকর কলোনি। ওই কলোনির উপরপাড়া, যা জগন্নাথ ঘাট থেকে রাধারঘাটের দিকে যেতে পড়ে। ওই উপরপাড়া এলাকার কয়েক জন হেরোইনের কারবার চালায় বলে অভিযোগ। মনোজের মা শীলা দাস পরিচারিকার কাজ করেন। তিনি বলেন, “বাবুদের বাড়ি থেকে কাজ সেরে বাড়িতে ঢুকতেই মনোজ আমার কাছ থেকে ২০ টাকা চেয়ে নেয়। ওই টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এর পরে আমি রাস্তার কল থেকে জল আনতে গিয়েছি। সেই সময়ে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে জল আনতে গিয়ে আটকে পড়ি।”

Advertisement

তিনি বলেন, “ছেলে গত দু’বছর ধরে হেরোইনের নেশা করে। নিষেধ করা সত্ত্বেও আমার কথা শোনেনি। এ দিন ওই ২০ টাকায় তাকে কেউ হেরোইন দেয়নি বলে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তার আগে চিৎকার করে ওই কথা বলতে বলতেই গলির ভেতর দিয়ে দৌড়ে এসে বাড়িতে ঢোকে। আমি বালতিতে জল নিয়ে বাড়িতে ঢোকার আগেই সব শেষ!”

শীলাদেবীর আর্ত চিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশী কয়েক জন যুবক বেরিয়ে এসে গলা থেকে গামছার ফাঁস খুলে বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব সদর হাসপাতালে মনোজকে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ তদন্তে এলাকায় পৌঁছায়। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনার পরে এলাকায় হেরোইন কারবারের সঙ্গে জড়িত তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

জগন্নাথ ঘাট থেকে কাজি নজরুল সরণী রাস্তা ধরে কয়েক পা এগিয়ে গেলেই ডান দিকে দু’ফুটের সরু একটা গলি নেমে গিয়েছে। ওই গলি ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলেই মনোজের বাড়ি। বাড়ি বলতে টালির ছাউনি দেওয়া মাটির দেওয়ালের ঘুপচি একটি ঘর আর ঘর লাগোয়া এক চিলতে ঘেরা বারান্দা। ওই বারান্দায়গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন ওই যুবক।

ওই বাড়ির সামনে ঢালাই রাস্তার উপরে মনোজের মৃতদেহের অপেক্ষায় মা শীলাদেবী। তাঁকে ঘিরে রয়েছেন এলাকার মহিলারা। এলাকার বয়স্ক ব্যক্তি প্রহ্লাদ দাসের অভিযোগ, “সন্ধ্যার পর থেকে গোটা কলোনি এলাকা মদ্যপ ও হেরোইনখোরদের দখলে চলে যায়। বাড়ির মেয়ে-বৌমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। পুলিশ ও প্রশাসন সব জেনেও নির্বাকার। পুলিশের সঙ্গে মাসোহারা নিয়ে গণ্ডগোল হলেই তখন লোক দেখানোর মত করে ধরে নিয়ে যায় আবার ছেড়েও দেয়।” এলাকার মহিলা রিতা দাসের কথায়, “সন্ধ্যার পর থেকে ঘরের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটু গল্প-গুজব করব, মদ্যপ ও হেরোইনখোরদের জন্য তারও উপায় থাকে না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে তাদের পাশ দিয়ে কোনও মহিলা চলে গেলে তার শ্লীলতাহানি করতেও তাদের হাত কাঁপে না।”

ছোট ছোট বাড়ি দিয়ে গোটা ওই কলোনি এলাকা ঘেরা। দুটো বাড়ির মাঝখান দিয়ে হয়তো চলে গিয়েছে সরু ঢালাই করা রাস্তা। কিন্তু কলোনি এলাকার ওই রাস্তায় সব জায়গায় আলোও জ্বলে না। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে ওই ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে।

ওই নেশাগ্রস্তদের অত্যাচারে অনেকে কলোনি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। এলাকার যুবক লক্ষ্মণ দাস যেমন বলেন, “আমার ছেলে এখনও ছোট আছে। কিন্তু এলাকার যা পরিবেশ, একটু বড় হলেই নেশা করতে শিখে যাবে। তাই ছেলেকে মানুষ করার জন্য অন্য কোথাও বাড়ি করে চলে যাওয়ার কথা ভাবছি।” ওই যুবক বলেন, “আমাদের এলাকায় লালবাগ, হরিদাসমাটি, কৃষ্ণমাটি-সহ বহরমপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে মোটরবাইকে করে এসে হেরোইন কিনে নিয়ে যায়। স্কুলের ছাত্রী থেকে বাড়ির মহিলারাও আসে হেরোইন কিনতে।”

বহরমপুর পুরসভার ওই এলাকার কাউন্সিলর সমর হাজরা বলেন, “গত দু’বছরে হেরোইনের কবলে পড়ে ১৮-২২ বছরের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা গোটা বিষয়টি জানিয়ে বহরমপুর থানায় স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। ওই হেরোইন কারবারের সঙ্গে বড় একটা চক্র জড়িত রয়েছে। প্রতিবাদ করলেই প্রাণে মেরে ফেলা থেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশকে দিয়ে গ্রেফতারেরও হুমকি দেয় তারা। ফলে অনেকে ভয়ে মুখও খুলতে পারে না। তবে পুলিশের উচিত অবিলম্বে এলাকা থেকে ওই হেরোইন চক্র নির্মূল করা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন