হেঁসেল সামলে নাচের মহড়া

পশ্চিমী রক থেকে ধ্রুপদী ভারতীয় — সব রকমের গানের সঙ্গে এ বার পা মেলাবেন মায়েরাও। তার জন্য চলছে জোরদার অনুশীলনও। তাই সূর্য পশ্চিমে ঢলতে না ঢলতেই ছুটছেন নাচের অনুশীলনে। কেউ মেয়েকে কাঁখে নিয়ে, কেউ বা স্বামীর কাছে ছেলেকে রেখে। আগামী ২ অগস্ট সেই নাচের স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে নিজেদের মেলে ধরবেন তাঁরা। সেখানে কত্থক, রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে শুরু করে হিন্দি, রক গানেও নাচবেন তাঁদের আট জন। ছোটবেলায় নাচ শিখতেন কেউ কেউ। পাড়ার ফাংশানে দু’একবার মুখও দেখিয়েছেন।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০০:১৫
Share:

অনুশীলনের একটি মুহূর্ত।— নিজস্ব চিত্র

পশ্চিমী রক থেকে ধ্রুপদী ভারতীয় — সব রকমের গানের সঙ্গে এ বার পা মেলাবেন মায়েরাও।
তার জন্য চলছে জোরদার অনুশীলনও। তাই সূর্য পশ্চিমে ঢলতে না ঢলতেই ছুটছেন নাচের অনুশীলনে। কেউ মেয়েকে কাঁখে নিয়ে, কেউ বা স্বামীর কাছে ছেলেকে রেখে।
আগামী ২ অগস্ট সেই নাচের স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে নিজেদের মেলে ধরবেন তাঁরা। সেখানে কত্থক, রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে শুরু করে হিন্দি, রক গানেও নাচবেন তাঁদের আট জন।
ছোটবেলায় নাচ শিখতেন কেউ কেউ। পাড়ার ফাংশানে দু’একবার মুখও দেখিয়েছেন। কিন্তু বিয়ের পর সে সব বেবাক হাওয়া। ছেলেমেয়ে, হেঁসেল, সংসার সামলাতেই দিন কাবার হয়ে যায়। তবু ইচ্ছেটা মনের কোণে লুকিয়ে ছিল। সুযোগ আসতেই তাই দ্বিরুক্তি করেননি।
মেয়েদের নাচের স্কুলে দিতে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে আলাপ। সেই শুরু। মেয়েদের পাশাপশি নিজেরাও ঢুকলেন নাচের স্কুলে। গড়ে তুললেন আট জনের ওই দল।
কিন্তু সারাদিনের কাজের পর নাচের অনুশীলন করতে ক্লান্তি আসে না? প্রশ্নটা করতেই হেসে গড়িয়ে পড়েন নবনীতা, ঈশিতা, স্বাতী, অদিতি, শর্মিষ্ঠারা। জানালেন, ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতেই তো নাচের অনুশীলন করতে আসা। কথায় কথায় তাঁরা জানান, সারাদিন সংসার ঠেলতে ঠেলতে নিজেকে আর সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। মনটা ভারি হয়ে ওঠে। সেসব থেকে একটু মুক্তি পেতে নাচের ভাবনা মাথায় আসে।
ঈশিতা শীল বলেন, ‘‘যেটুকু ফুরসৎ মেলে সেই সময়ে যদি নাচের অনুশীলন করা যায় তাহলে শরীরও যেমন ফিট থাকবে সারাদিনের কাজের পর মনটাও চনমনে হয়ে উঠবে। সেই ভাবনা থেকে নাচের অনুশীলন শুরু।’’

Advertisement

পেশায় স্কুল শিক্ষিকা স্বাতী সাহা বলেন, ‘‘স্কুল থেকে ফিরে মুখে কিছু দিয়ে নাচের অনুশীলনে চলে আসি।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘নাচের অনুশীলনে গান কানে এলেই নিজের অজান্তে তালে তালে পা ঠুকতে থাকি। সারাদিনের ক্লান্তি কোথায় যে হারিয়ে যায় বুঝতে পারি না।’’

Advertisement

স্ত্রীর এমন কাজে বেশ গর্বিত স্বামীরাও। ঈশিতার স্বামী অমিত বলেন, ‘‘ও যখন নাচের অনুশীলনে যায়, তখন বাড়িতে আমি মেয়েকে সামলাই। এটুকু তো করতেই হবে।’’ একই প্রতিক্রিয়া নন্দিতা, অদিতির স্বামীদেরও।

আর নাচের প্রশিক্ষক দেবাশিস বসু কী বলছেন? ‘‘সাধারণত বিয়ের পর মেয়েরা নাচ ছেড়ে দেয়। কিন্তু এরা যে ভাবে বিয়ের পর নাচের জন্য এগিয়ে এসেছে তাতে আমি গর্বিত’’— বলছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘‘এদের এই আগ্রহ অনেককে উৎসাহ যোগাবে। তাই হাজার অসুবিধা থাকলেও সেই সোদপুর থেকে ঠিক চলে আসি। কোনও দিন ক্লাস বন্ধ হতে দিই না। ২ তারিখের অনুষ্ঠানটি নিয়ে ওদের মধ্যে বেশ উন্মাদনাও রয়েছে।’’

তা হলে কি ২ তারিখের অনুষ্ঠানের পর নাচ ছেড়ে দেবেন। প্রশ্নটা শুনেই আঁতকে ওঠেন ঈশিতা। প্রায় ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেন, ‘‘বালাই ষাট, ছাড়ব কেন? যতদিন পারব, অনুশীলন করে যাব।’’ তারপর সশব্দে হেসে ওঠেন। সেই হাসিতে যোগ দেন বাকিরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন