ঘরে এ বার রবি, গৌতমের জন্য খোঁজ

একজনের নাম লেখা হচ্ছে ঘরের দরজায়। অন্যজন উত্তরবঙ্গে এলে কোথায় দফতর খুলবেন তা নিয়ে চলছে অনিশ্চয়তা। এর মধ্যেই শপথ গ্রহণের পরের দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন এবং বর্তমান দুই মন্ত্রীই নিজের মতো করে কাজের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০১:৪৩
Share:

মন্ত্রিত্ব বদলের পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ঘরে গৌতম দেবের নামের ফলক বদলে সাঁটানো হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নাম। ছবি: সন্দীপ পাল।

একজনের নাম লেখা হচ্ছে ঘরের দরজায়। অন্যজন উত্তরবঙ্গে এলে কোথায় দফতর খুলবেন তা নিয়ে চলছে অনিশ্চয়তা। এর মধ্যেই শপথ গ্রহণের পরের দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রাক্তন এবং বর্তমান দুই মন্ত্রীই নিজের মতো করে কাজের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন।

Advertisement

শনিবার দুপুরে হঠাৎই একটি জরুরি ‘মেসেজে’ ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় উত্তরকন্যা’য়। পেতলের নামফলক তৈরি করতে সময় লাগবে, তাই সিদ্ধান্ত হয় আপাতত কম্পিউটারে প্রিন্ট করা হবে নাম। প্রিন্টার থেকে বেরিয়ে আসে ‘রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর’ ছাপা কাগজ। সেই কাগজ হাতে নিয়ে উত্তরকন্যা থেকে সরকারি কর্মীরা পৌঁছে যান হিলকার্ট রোডের বিবেকানন্দ ভবনে। এই ভবনই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মূল প্রশাসনিক ভবন। মন্ত্রীর ঘরের দরজা থেকে গৌতম দেবের নাম লেখা পেতলের ফলক খুলে ফেলা হয়। সেলোটেপ দিয়ে পরপর দু’টি দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথ ঘোষের নাম ছাপা কাগজ।

প্রথমে ঠিক ছিল আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে আসবেন নতুন মন্ত্রী। কিন্তু শনিবার দুপুরে ‘মেসেজ’ আসে আগামী সোমবার বা মঙ্গলবারই নতুন মন্ত্রী শিলিগুড়িতে আসতে পারেন। তাতেই সাজো সাজো রব পড়ে। সাফসুতরো শুরু হয়ে যায় মন্ত্রীর ঘর।

Advertisement

উত্তরকন্যা এবং বিবেকানন্দ ভবন দু’জায়গাতেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অফিস রয়েছে। এ দিন দুপুরের পরে দুই অফিসের দরজাতেই লাগানো হয় নতুন মন্ত্রীর নাম। টেবিলে বসেছে নতুন মন্ত্রীর নাম লেখা স্ট্যান্ড।

অন্যদিকে শিলিগুড়িতে পর্যটন দফতরের যে অফিস রয়েছে, সেখানে বসেন দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা। সেই অফিসেই রাজ্যের নতুন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের চেম্বার তৈরি হবে নাকি অন্য কোনও অফিস তৈরি হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। গৌতমবাবু অবশ্য এ দিন কলকাতায় নিউ সেক্রেটারিয়েটে পর্যটন দফতরের অফিসে বসেই আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। জানা গিয়েছে, আপাতত কিছুদিন কলকাতায় থাকবেন তিনি। উত্তরকন্যায় নিজের দফতরের জন্য একটি অফিস চাওয়ার পরিকল্পনাও করেছেন গৌতমবাবু।

বছর তিনেক আগে উত্তরকন্যা ভবন উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে সময় জানানো হয়েছিল রাজ্যের সব দফতরের অফিস থাকবে, মন্ত্রীরাও নিয়মিত বসবেন উত্তরকন্যায়। যদিও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন ছাড়া অন্য কোনও দফতরের পূর্ণাঙ্গ অফিসই তৈরি হয়নি সেখানে। যে ১৯টি দফতরকে উত্তরকন্যায় জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে মন্ত্রীদের বসার চেম্বার করা সম্ভব হয়নি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরই উত্তরকন্যার রক্ষণাবেক্ষণ করে। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সব দফতরের জায়গা সঙ্কুলানের জন্য ভবন সম্প্রসারিত করার কাজ চলছে। এ দিন এক সরকারি কর্তার মন্তব্য, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর যদি আগে থেকে সব দফতর এবং মন্ত্রীর চেম্বারের জায়গা দিত, তবে সেই দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রীকে ঘর পাওয়ার জন্য নিজের পুরোনো দফতরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে
হতো না।’’

গৌতমবাবু অবশ্য দফতর নিয়ে বেশি চিন্তিত নন বলে দাবি করেছেন। এ দিন তিনি নব মহাকরণে দফতরের আধিকারিকদের থেকে প্রশাসনিক ক্যালেন্ডার বুঝে নেন। রাজ্য জুড়ে নতুন-পুরোনো পর্যটন কেন্দ্রের রোড ম্যাপ তৈরির নির্দেশ দেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এ দিন বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আগে আলোচনা করব। তাঁর নির্দেশ মতোই পদক্ষেপ হবে।’’ আগামী সোমবার গজলডোবায় পর্যটন হাব নিয়ে বৈঠক রয়েছে বলে গৌতমবাবু জানালেন। তাঁর কথায়, ‘‘নতুন দায়িত্ব। সামনে অনেক কাজ।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজ বুঝে নিতে নতুন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের যাতে সুবিধা হয়, সে কারণে দফতরের সমস্ত শেষ হওয়া প্রকল্প, চলতে থাকা প্রকল্প এবং আগামী প্রকল্পের তালিকা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দফতর বণ্টনের পরে রবিবাবুর সঙ্গে কয়েকজন আধিকারিকের কথাও হয়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দফতরের কাজের পদ্ধতি এবং খুঁটিনাটি বুঝতে যাতে নতুন মন্ত্রীর কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য প্রকল্প ভিত্তিক রিপোর্ট তৈরি করা চলছে। শিলিগুড়িতে এসে সর্বস্তরের আধিকারিকদের নিয়ে মন্ত্রী বৈঠক করবেন, তার প্রস্তুতিও চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন