বেআইনি: ভুয়ো চিকিৎসকের নাম দিয়ে লিফলেট। নিজস্ব চিত্র
• আদতে তিনি সরকারি ফার্মাসিস্ট।
• তার উপরে তিনি শাসক দলের অনুগামী সরকারি ফার্মাসিস্ট সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক।
• সর্বোপরি তিনি সেই সংগঠনের কেউকেটা, যে-প্রোগ্রেসিভ ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হলেন বিধায়ক তথা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি।
ফার্মাসিস্ট সংগঠনের এ-হেন নেতা নিজেকে ডাক্তার হিসেবে জাহির করে চুটিয়ে রোগী দেখলে রুখবে কে? রুখছেও না কেউ। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও বিশ বাঁও জলে!
নিজেকে ডাক্তার হিসেবে তুলে ধরে ওই ফার্মাসিস্ট লিফলেট বিলি করছেন বলে অভিযোগ। অথচ ওই ‘ভুয়ো’ চিকিৎসক এখনও অধরা। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর তদন্ত শুরু করেও তা ফেলে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠছে। শচীন মান্না নামে ওই ফার্মাসিস্টের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই হয়নি। তিনি বহাল তবিয়তে চাকরি করে চলেছেন।
তিনি যে-লিফলেট বিলি করছেন বলে অভিযোগ, তাতে নন্দীগ্রাম মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ফার্মাসিস্ট বলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন শচীনবাবু। সেই সঙ্গে প্রচারপত্রে জানানো হয়েছে, তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে একটি ওষুধের দোকানে রোগী দেখেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভুয়ো চিকিৎসক ধরা পড়া মাত্র স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা নিষ্ক্রিয়। ওই ফার্মাসিস্টকে ছাড় কেন?
স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তার বক্তব্য, শচীনবাবু শাসক দলের অনুগামী সরকারি ফার্মাসিস্টদের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক হওয়ায় তদন্তে গড়িমসি করছে স্বাস্থ্য দফতর। বিধায়ক নির্মল মাজি ওই ফার্মাসিস্ট সংগঠনেরই সভাপতি।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, শচীনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেন নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য-জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা চন্দ্রশেখর মাইতি। সেই তদন্তের রিপোর্ট স্বাস্থ্য ভবনে জমা দেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা তুষার আচার্য। রিপোর্টে তদন্তকারীরা জানান, কে দোষী আর কে নন, সেই ব্যাপারে তাঁরা কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি! তাই অন্য কাউকে দিয়ে তদন্ত করানো হোক।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘আমরা অন্য কয়েক জনকে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছি।’’ তাঁরা কারা বা তাঁরা কবে রিপোর্ট দেবেন, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তাঁর দফতরের অন্য একটি সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, ‘‘কোনও তদন্তই হচ্ছে না। সব ধামাচাপা রয়েছে।’’
শচীনবাবুর দাবি, তিনি নির্দোষ। ‘‘দফতরকে জানিয়ে দিয়েছি, আমাকে ফাঁসানোর জন্য শত্রুরা এই লিফলেট ছাপিয়েছে আর বলে বেড়াচ্ছে যে, আমি ডাক্তার লিখে প্র্যাকটিস করছি,’’ বলেন শচীনবাবু। তবে যে-ওষুধের দোকানের নামে ওই লিফলেট প্রচার করা হচ্ছিল, সেখানকার এক কর্মী বলেন, ‘‘শচীন ডাক্তারবাবুর তো এলাকায় খুব নাম! বাড়িতেও রোগী দেখেন। আমাদের এখানে বসার কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী একটা সমস্যা হওয়ায় তিনি বসবেন না বলে জানিয়ে দেন।’’
সিআইডি তো সারা রাজ্যে ‘ভুয়ো’ চিকিৎসক খুঁজে বেড়াচ্ছে। তারাই বা শচীনবাবুকে ছাড় দিল কেন?
‘‘আমাদের কাছে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগই দায়ের করেননি,’’ বললেন এক সিআইডি-কর্তা। রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল নিজেরা ভুয়ো চিকিৎসকের তালিকা তুলে দিচ্ছে সিআইডি-র হাতে। ওই কাউন্সিলের মাথায় আছেন খোদ নির্মল মাজিই। তা হলে তৃণমূল প্রভাবিত ফার্মাসিস্ট সংগঠনের নেতার নামে ওঠা অভিযোগের তদন্তে এমন গড়িমসি কেন? ‘‘আমরা তদন্ত করছি। কেউ দোষী হলে তিনি যে-গোষ্ঠী বা যে-দলেরই হোন না কেন, ছাড় পাবেন না,’’ বলেছেন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মলবাবু।