মেয়র পদের দৌড়ে নান্টুও, সতর্ক বামেরা

ঢালাও বিছানা পাতা হয়েছে পার্টি অফিসে। একটি ঘরে রয়েছেন সব মহিলা কাউন্সিলর। অন্য ঘরে পুরুষ কাউন্সিলররা। দু-একজন প্রবীণ কাউন্সিলর ছাড়া আর কারও ছাড়পত্র মেলেনি বাড়ি যাওয়ার। সোমবার শিলিগুড়ি পুরবোর্ড গঠন না-হওয়া পর্যন্ত এমনই ব্যবস্থা শিলিগুড়ি সিপিএম অফিসে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পেশের পর নান্টু পাল। ছবি: সন্দীপ পাল।

ঢালাও বিছানা পাতা হয়েছে পার্টি অফিসে। একটি ঘরে রয়েছেন সব মহিলা কাউন্সিলর। অন্য ঘরে পুরুষ কাউন্সিলররা। দু-একজন প্রবীণ কাউন্সিলর ছাড়া আর কারও ছাড়পত্র মেলেনি বাড়ি যাওয়ার। সোমবার শিলিগুড়ি পুরবোর্ড গঠন না-হওয়া পর্যন্ত এমনই ব্যবস্থা শিলিগুড়ি সিপিএম অফিসে।

Advertisement

কেন এত সতর্কতা? শিলিগুড়িতে শোনা যাচ্ছে, ‘ঘোড়া কেনাবেচা’-র চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল। ভোটাভুটির দিন বিপক্ষের কিছু কাউন্সিলরকে ভোটদানে বিরত করার চেষ্টা হতে পারে বলেও কানাঘুষো।

শেষ না দেখে ছাড়বে না, তা শনিবার বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। মাত্র ১৭জন কাউন্সিলর নিয়ে ৪৭ আসনের পুরবোর্ডে মেয়র হওয়ার মনোনয়ন পেশ করলেন তৃণমূল নেতা নান্টু পাল, চেয়ারম্যান পদে রঞ্জন সরকার। ইতিমধ্যেই এক নির্দল-সহ ২৪ জন কাউন্সিলর নিয়ে বামেদের তরফে মেয়র পদে যেখানে মনোনয়ন দাখিল করেছেন অশোক ভট্টাচার্য, সেখানে নান্টুবাবু কী হিসেব কষে জয়ের আশা করছেন, তা নিয়ে জল্পনা থামছে না।

Advertisement

ফলে নিজের শিবিরের সকলকে আগলে রাখতে সতর্ক বাম নেতারা। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত সব কাউন্সিলরদের নিয়ে দলের বৈঠক হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, সোমবার শিলিগুড়ি পুরভবনে পৌঁছনো পর্যন্ত দলের ২৩ জন ও নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ (অমুবাবু) যাতে ‘সুরক্ষিত’ থাকেন তা নিশ্চিত করতে একাধিক ‘টিম’ গড়েছেন বাম নেতৃত্ব।

এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমরা কাউকেই গুরুত্ব দিচ্ছি না। জয়ী হব আমরাই।’’ জীবেশবাবু আরও সুর চড়িয়ে বলেন, ‘‘শহরের মানুষের মেজাজটা তৃণমূলকে মাথায় রাখতে হবে।’’

মাত্র ১৭জন কাউন্সিলর নিয়ে বোর্ড গড়া যে প্রায় অসম্ভব, একান্তে তা মানছেন তৃণমূলের জেলা ও রাজ্যস্তরের অনেক নেতা। অন্দরের খবর, দলের কাউন্সিলরদের একাংশও বিরোধী আসনে বসতে রাজি ছিলেন। কিন্তু নান্টুবাবু দাবি করেন, তিনি বিপক্ষের একাধিক কাউন্সিলরের সমর্থন প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকে মেয়র পদে মনোনয়ন পেশের জন্য অনুমতি দেন দলের নেতৃত্ব। তবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেশ করতে গোড়ায় কেউ রাজি হচ্ছিলেন না। শেষ অবধি রঞ্জনবাবু এগিয়ে আসেন। ঘটনাচক্রে, রঞ্জনবাবু তফশিলি-সংরক্ষিত আসনে জিতেছেন। তাঁর সার্টিফিকেট জাল বলে দাবি করেছেন বামেরা। তা নিয়ে তদন্তও শুরু করেছে প্রশাসন।

নান্টুবাবুর মরিয়া চেষ্টা নিয়ে চলছে টিকা-টিপ্পনী। দলের ১৭টা ভোট নান্টুবাবু পাবেন কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন অনেকে। আবার কারও মন্তব্য, নান্টু একের পর এক দল ছাড়ায় পটু। কিন্তু দল ভাঙানোর খেলায় তো ওঁর অভিজ্ঞতা নেই। শেষ রক্ষা হবে তো?

দীর্ঘদিন বাম কাউন্সিলর থাকার পরে কংগ্রেসে যোগ দেন নান্টু। বিধানসভার ভোটে অশোকবাবুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে হেরে যান। পরে কংগ্রেসের কাউন্সিলর থাকাকালীন তৃণমূলে যোগ দেন। বহুদিন পরে অশোকবাবুর সঙ্গে ফের ভোটযুদ্ধে নামলেন নান্টুবাবু। সব টিপ্পনী উড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশাবাদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন