অনুদান প্যাকেটে মুড়ে আড়াল করে দিতে হয় হয় নাকি।
তৃণমূলের ডজন খানেক এমপি-মন্ত্রী-মেয়র লাখ লাখ টাকা নিচ্ছেন— স্টিং অপারেশনে এই ছবি ধরা পড়ার পরে প্রথমে বলা হয়েছিল জাল ভিডিও। তার পরে বলা হচ্ছে— ঘুষ নয়, অনুদান নিয়েছেন তৃণমূল নেতারা। মঙ্গলবার নতুন একটি ফুটেজ প্রকাশ করে তারই জবাব দিতে চেয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে ভিডিও-হুলে বেঁধা নারদ নিউজ।
নতুন এই ফুটেজটিতে খানাকুলের তৃণমূলের বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ ব্যবসায়ী পরিচয় দেওয়া সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েলকে বলছেন— ওই ভাবে খোলাখুলি টাকা দেওয়াটা ঠিক নয়। সুন্দর করে প্যাকিং করে আড়ালে যেন তাদেওয়া হয়।
তৃণমূলের পক্ষে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টে যুক্তি দেন— ঘুষ নয়, নির্বাচনের খরচ চালানোর জন্য অনুদান নিয়েছেন মন্ত্রী-সাংসদরা। তাঁর দাবি, সব দলই এমন অনুদান নেয়। সম্প্রতি কলকাতায় এসে সাংবাদিক সম্মেলনেও এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল নারদ নিউজের সিইও ম্যাথুকে— ওই টাকাকে কেন ঘুষ বলা হবে, কেন অনুদান নয়?
কলকাতা থেকে ফিরে ইকবাল আহমেদের সঙ্গে তাঁর কথোকথনের একটি ফুটেজ এ দিন প্রকাশ করেছেন ম্যাথু। তাতে দেখা যাচ্ছে, জনৈক মহিলা প্রার্থীকে টাকা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তৃণমূলের ওই বিধায়ক। কিন্তু কী ভাবে?
ইকবাল: আপনি ওই ভাবে খুলে টাকা দেবেন না। ওতে সব দেখা যায়। একটা খামে ভরে দেবেন। একটা ফাইল বানিয়ে তার মধ্যে নোটের বান্ডিলগুলো সাজিয়ে হাতে দেবেন। এই ভাবে খুল্লম-খুল্লা টাকা দেওয়াটা ঠিক নয়।
ম্যাথু: আচ্ছা!
ইকবাল: টাকার বান্ডিলগুলো এ বার থেকে সুন্দর করে প্যাক করে আড়ালে হাতে দেবেন। সবার সামনে টেবিলে রাখবেন না। সকলেরই প্রেস্টিজ আছ! এ ভাবে কাউকে টাকা দিতে নেই।
এ যাবৎ প্রকাশিত ফুটেজ অনুযায়ী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুলতান আহমেদ, শোভন চট্টোপাধ্যায়, সৌগত রায় বা অপরূপা পোদ্দার আফরিনের মতো নেতা-মন্ত্রীদের হাতে ইকবাল আহমেদের নির্দেশেই টাকার বান্ডিল তুলে দিয়েছেন ম্যাথু। ইকবাল নিজেও কয়েক জনকে টাকা দেওয়ার সময়ে হাজির ছিলেন।
যদিও আনন্দবাজার ফুটেজের সত্যতা নির্ণয় করেনি, কিন্তু নারদ নিউজের দাবি, ইকবাল নিজেই তাঁদের পরামর্শ দিয়েছিলেন খামে মুড়ে আড়াল করে নেতা-মন্ত্রীদের টাকার বান্ডিল দিতে। আর এ ভাবে কাউকে অনুদানের টাকা দেওয়া হয় না।