State News

মোদীর ‘খণ্ডিত’ ঐক্য ভাবনা নিয়ে বিতর্ক

ইতিহাসকে তুলে ধরতে এ দিন একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও শোনান মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

দেশের প্রথিতযশা ইতিহাসবিদদের রচনাকে ‘বিকৃত’ বলে দেগে দেওয়ার অভিযোগ বারবার ওঠে সঙ্ঘ পরিবারের দিকে। কলকাতায় ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিংয়ের সংগ্রহশালার উদ্বোধনে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলে গেলেন, ‘‘স্বাধীনতার পরেও ইতিহাসবিদেরা অতীতের বেশ কিছু অধ্যায় এড়িয়ে গিয়েছেন।’’

Advertisement

নিজের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ দিন গেরুয়া শিবিরের ভাষ্যের প্রতিধ্বনি করেই বলেছেন, ভারতে বাইরে থেকে হামলাকারীরা এসেছেন এবং ইতিহাসকে চিরকাল সিংহাসন ও ক্ষমতার লোভে পিতা-পুত্র, ভাই-ভাইয়ের সংঘাত হিসেবে দেখানো হয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের ইতিহাস তা নয়, যা আমরা পরীক্ষার জন্য পড়ি।’’ ভারতের রাষ্ট্রীয় চেতনা ও ঐক্যের কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিহাসবিদদের বড় অংশই যদিও মনে করছেন, মোদী কার্যত এ দিন সঙ্ঘ পরিবারের ইতিহাস-দর্শনকেই ‘নব কলেবরে’ পেশ করেছেন।

ইতিহাস-গবেষকদের অনেকেই মনে করছেন, পিতা-পুত্র ও ভাই-ভাইয়ের হানাহানির প্রসঙ্গে মোদী পক্ষান্তরে সুলতানি ও মোগল যুগের ইতিহাসকেই বলতে চেয়েছেন। কিন্তু সিংহাসনের লোভে সংঘাত তার আগেও ছিল। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের গবেষণা দেখিয়েছে, মৌর্য সম্রাট অশোকের বিরুদ্ধেও সিংহাসন দখলে ভ্রাতৃহত্যার অভিযোগ ছিল। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের লেখাকে যে ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন মোদী, তারও বিরোধিতা করেছেন ইতিহাস-গবেষকদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাসবিদেরা যে ভাবে ভারতের ইতিহাস লিখেছিলেন তার বিরুদ্ধে ভারতের জনজীবনের ইতিহাসের কথা বলেছেন রবি ঠাকুর। সঙ্ঘ পরিবার যে পথে ইতিহাস রচনা করতে চায়, তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ইতিহাস-দর্শন খাপ খায় না। ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়ের মতে, ‘‘রবীন্দ্রনাথ হিন্দুত্ব বলতে যা বুঝতেন, হেডগেওয়ার-গোলওয়ালকরের হিন্দুত্ব তার বিপরীত। রবি ঠাকুরের হিন্দুত্ব প্রেমের, সঙ্ঘের হিন্দুত্ব হিংসার। বরং দেখা যায়, অস্পৃশ্যতা এবং হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব মেটানোর ক্ষেত্রে গাঁধীর সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের মতাদর্শের মিল ছিল।’’ রজতকান্তবাবু এ-ও বলছেন, ‘‘বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের যে চেহারা দেখা যাচ্ছে তা কিন্তু মোদী-শাহের বিরুদ্ধেই তৈরি হচ্ছে। ছাত্র-যুব সমাজ, নাগরিক সমাজ এবং মুসলিমরা তেরঙ্গার নীচে এসে জড়ো হচ্ছেন। সেই তেরঙ্গা কিন্তু মোদীর পতাকা নয়।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘গো ব্যাক মোদী, গো ব্যাক মমতা’, স্লোগান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও

ইতিহাসকে তুলে ধরতে এ দিন একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও শোনান মোদী। তিনি জানান, দেশের পাঁচটি সংগ্রহশালাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা হবে। সেই কাজ শুরু হবে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর দিয়ে। পরবর্তী কালে দিল্লি, চেন্নাই, বারাণসী ও শ্রীনগরের একটি করে সংগ্রহশালাকেও একই কায়দায় গড়ে তোলা হবে। ভিক্টোরিয়ায় বাংলার বিপ্লবীদের নিয়ে বিশেষ গ্যালারি খোলা হবে। ২০২২ সালে রাজা রামমোহনের জন্মের আড়াইশো বছর পালিত হবে। দেশে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হেরিটেজ কনজ়ারভেশন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলার কথা জানান তিনি।

এ দিন কারেন্সি বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে মিলেনিয়াম পার্ক থেকে হাওড়া সেতুর নতুন আলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মিলেনিয়াম পার্ক থেকে গঙ্গা পার হয়ে বেলুড় মঠ যাওয়ার পথে আলোকোজ্জ্বল হাওড়া সেতুর প্রেক্ষাপটে নিজের ছবিও টুইট করেন মোদী। লেখেন, ‘‘রবীন্দ্রসেতুর শোভা দেখুন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন