Mamata Banerjee and Narendra Modi

ফারাক এক মাস, রঙেও ফারাক, তবে সামান্যই, মোদী-দিদিকে একই মুকুট পরতে দেখল মেঘমুলুক

বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন দেশের উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে। মেঘালয়ে প্রচারও শুরু করে দিল তৃণমূল। মমতার মাথায় দেখা গেল খাসিদের ঐতিহ্যবাহী ‘মুকুট’। যা এক মাস আগে দেখা গিয়েছিল মোদীর মাথায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৫
Share:

খাসি পোশাকে মোদী এবং মমতা। নিজস্ব চিত্র।

রাজনৈতিক আক্রমণে যুযুধান। কিন্তু শিরোভূষণে মিলে গেলেন মোদী আর দিদি। মিলে গেলেন নরেন্দ্র মোদী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক এক মাস আগে ১৮ ডিসেম্বর শিলংয়ে গিয়ে যে মুকুট পরেছিলেন মোদী, বুধবার, ১৮ জানুয়ারি সেই মুকুটই দেখা গেল দিদির মাথায়। ফারাক শুধু ‘বর্ডারে’। মমতার মুকুটে হালকা নীলের সঙ্গে সাদা বর্ডার। আর মোদীরটিতে ছিল গাঢ় নীলের সঙ্গে মেরুন বর্ডার।

Advertisement

ফেব্রুয়ারি মাসেই বিধানসভা নির্বাচন মেঘালয়ে। চেরাপুঞ্জি, মৌসিনরামের রাজ্যে এই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে চলেছে তৃণমূল। দলের হাতে কয়েক জন বিধায়ক থাকলেও আদতে গত নির্বাচনে তাঁরা জিতেছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।

মমতা ভোট প্রস্তুতির জন্য আগেই মেঘালয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে। বুধবার তৃণমূলনেত্রী নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিলেন। মাথায় খাসি মুকুট। আপাতদৃষ্টিতে ‘টুপি’ বলে মনে হলেও আদতে কিন্তু এটি ‘মুকুট’। যা খাসি জনজাতিদের পরম্পরার প্রতীক। মমতার মাথায় ছিল কাপড়ের তৈরি নীল মুকুট। তাতে সাদা বর্ডার। রীতি মেনে তার উপরে বিভিন্ন পাখির পালক ঝুঁটির মতো করে বাঁধা। খাসিরা যে এক সময়ে মূলত শিকারি ছিলেন, তারই পরিচয় বহন করে ওই পালক। একই রকম ছিল মোদীর মুকুটও। এমনিতে না পরলেও যে কোনও পরবে পালকওয়ালা এই মুকুট প্রায় বাধ্যতামূলক।

Advertisement

তবে মুকুটে মিল থাকলেও মোদী-দিদির পোশাকে কিন্তু ফারাক থেকে গিয়েছে। পোশাক পরম্পরা অনুযায়ী খাসি পুরুষেরা পরেন হাতকাটা লম্বা কোট। যার নাম ‘জিমপং’। নীচে থাকে থং। মহিলারা পরেন ‘পিন’ নামের ব্লাউজের মতো পোশাক। নিম্নাঙ্গে থাকে অনেকটা লুঙ্গির মতো দেখতে পোশাক। তাকে বলা হয়, ‘কা-জৈনসেম’ বা ‘চুসেম’। ওড়না জাতীয় যে কাপড়টি মহিলারা নেন, তার নাম ‘চুসুত’। মাথায় পাখির পালকওয়ালা মুকুট পরলেও মমতা বুধবার বাঙালি শাড়িই পরেছিলেন। যেমন শাড়ি তিনি পরে থাকেন। এক মাস আগে মাথার মুকুটের সঙ্গে মোদী অবশ্য খাসি পুরুষের পোশাক পরেছিলেন। তা নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেছিলেন অধুনা তৃণমূলের নেতা তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। টুইটারে কীর্তি লিখেছিলেন, ‘‘না নর, না নারী, ইনি শুধুই ফ্যাশনের পূজারী।’’

শুরু হয়ে যায় জোর বিতর্ক। ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর কীর্তির সেই টুইটের পরেই শুরু হয় লড়াই। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা টুইটে অভিযোগ করেন, কীর্তির তাঁর মন্তব্যে মেঘালয়ের সংস্কৃতিকে অপমান করেছেন। এ নিয়ে তৃণমূল যেন দলের অবস্থান জানায়! বিজেপির তফসিলি মোর্চাও মেঘালয়ের মানুষকে অপমান করা হয়েছে অভিযোগ তুলে তৃণমূলের ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করে।

সেই সবের চাপের মুখে টুইটটি মুছে দেন কীর্তি। সঙ্গে তিনি এ-ও সাফাই দেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করতে চাননি তিনি। বরং তাঁর সব রকম পোশাক পরার ফ্যাশনের বিষয়টিই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তখন তৃণমূল কীর্তির পাশে দাঁড়ায়নি। আবার দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই মন্তব্যের বিরোধিতাও করা হয়নি। তবে অনেকে মনে করেন, সেই সময়ে তৃণমূলের উচ্চতর নেতৃত্বের নির্দেশেই টুইটটি মুছে দিয়েছিলেন কীর্তি। বিষয়টি তখনকার মতো চাপা পড়ে যায়। এখন প্রশ্ন— তৃমমূলনেত্রী মমতা কি বুধবার খাসি মুকুট মাথায় তুলে বুঝিয়ে দিলেন, সব রকম রীতি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোই তৃণমূলের নীতি? শুধু মমতা নন, অভিষেকও বুধবার খাসি মুকুট মাথায় ধারণ করেছিলেন। তবে অভিষেকেরও পরনে ছিল সাধারণ পোশাকই। যে পোশাকে তাঁকে সাধারণত দেখা যায়।

মাথায় খাসি মুকুট তুলে নেওয়ার পিছনে দিদি-মোদীর রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে। জনজাতিপ্রধান মেঘালয়ে সবচেয়ে বেশি থাকেন খাসি সম্প্রদায়ের মানুষ। তাই ৬০ আসনের মেঘালয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে খাসি ভোটই ভরসা বিজেপি তথা মোদীর। আবার মেঘালয়ে খাতা খুলতে হলে খাসি সম্প্রদায়ের মনই জয় করতে হবে তৃণমূল তথা মমতাকে। শিরোভূষণ তারই বার্তাবাহী। যে বার্তা বলছে— ভোট চাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন