শপথ: পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে। ছবি: সুজিত মাহাতো
কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। তার পরে কেটে গিয়েছে ছ’টা আর্থিক বছর। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত জানাচ্ছেন, রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে নির্মল বাংলা মিশনের কাজের নিরিখে পুরুলিয়া রয়েছে ২২ নম্বরে। শেষ থেকে দ্বিতীয়। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার জেলায় বৈঠক করতে এসে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব দিব্যেন্দু সরকার বলে গেলেন, ‘‘মনে রাখবেন, আগামী ডিসেম্বরের পরে সরকারি অর্থে আর কোনও বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করা হবে না।’’
জেলায় মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে কাজ চলছে শামুকের গতিতে। সবে লক্ষ্যমাত্রায় ৬০ শতাংশ ছোঁয়া গিয়েছে এখনও পর্যন্ত। নির্মল জেলা হিসেবে পুরুলিয়াকে চলতি বছরের ১৫ অগস্টের মধ্যে ঘোষণা করা হবে বলে ঠিক হয়েছিল। কাজ যতটা বকেয়া, তা দেখে প্রশাসন বুঝেছে ওই সময়ের মধ্যে ব্যাপারটা করা কার্যত অসম্ভব। সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
কিন্তু সেই সময়ের মধ্যেও কি হবে কাজ? প্রকল্পে জেলার বিভিন্ন ব্লকের পরিসংখ্যানই এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে এই প্রকল্পে কাজ শুরুর সময়ে সমীক্ষা হয়েছিল। তখন দেখা গিয়েছিল, ৫ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৮২টি পরিবারের মধ্যে ৯৮,২১৭টি পরিবারে শৌচাগার রয়েছে। লক্ষ্য স্থির হয়েছিল— ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৬৫টি পরিবারে শৌচাগার নির্মাণ করা হবে। বৃহস্পতিবার রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের অতিরিক্ত সচিব দিব্যেন্দু সরকার পুরুলিয়ায় এসেছিলেন এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে। জেলার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সঙ্ঘনেত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এই প্রকল্পের কাজে গতি আনতে স্বনির্ভর দলগুলিকেও সামিল করা হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, যে সমস্ত পরিবারে এখনও শৌচাগার গড়া হয়নি তাঁদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ করবেন স্বনির্ভর দলের মহিলারাই।
এ দিন সঙ্ঘনেত্রী ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের সচিব বলেন, ‘‘এখানে একশো দিনের কাজ, রাস্তাঘাটের কাজের মতো অনেক কিছু ভাল ভাবে হচ্ছে। কিন্তু এই একটা কাজে আপনারা এগোতে পারছেন না। পিছিয়ে থেকে অন্য জেলা পারলেও কেন পুরুলিয়া পারছেন না?’’ জেলার বান্দোয়ান, জয়পুর, পুরুলিয়া ২-সহ আরও কয়েকটি ব্লকের কাজের খতিয়ান দেখে সমালোচনা করেন সচিব। শহরের কাছের ব্লকগুলির কেন এই হাল, প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, আগামী ডিসেম্বরের পরে সরকারি অর্থে আর কোনও বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণ করা হবে না। এর সঙ্গে গ্রামের যে সমস্ত পরিবার এখনও এই তালিকাভুক্ত নয়, সেই পরিবারগুলিকেও এই প্রকল্পে যুক্ত করতে হবে।’’
তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যে কত কাজ সারতে হবে?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাতে এখনও ২,০৯,৭২৯টি শৌচাগার গড়া বাকি। লক্ষ্য ছিল ৫,৩১,৭৮২টি শৌচালয় গড়ার। ছ’বছরে তৈরি হয়েছে ৩,২২,০৫৩টি।
এ দিনের বৈঠকে জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় সবাইকে বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া কাজ শেষ করতেই হবে। আর দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা নেই।’’ বৈঠকে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের কাজটা শেষ করতে হবে। এ জন্য শপথ নিতে হবে।’’
২৩ জেলার মধ্যে পুরুলিয়া ২২ নম্বরে
জেলায় কাজের গড় ৬০.৫৬ শতাংশ
কোন পঞ্চায়েতে কত কাজ হয়েছে?
আড়শা: ৪২.২৭
বাঘমুণ্ডি: ৭১.৬০
বলরামপুর: ৪৮.৬২
বরাবাজার: ৪৫.৫৭
বান্দোয়ান: ৩৪.৯৩
হুড়া: ৯৩.৪৫
জয়পুর: ৩০.৬৩
ঝালদা ১: ৫২.৯৬
ঝালদা ২: ৪৭.০৭
কাশীপুর: ৯৩.০৭
মানবাজার ১: ৩৮.০৪
মানবাজার ২: ৪৯.০৬
নিতুড়িয়া: ৯৫.৩১
পাড়া: ৬৮.৪৪
পুঞ্চা: ৭২.৩৯
পুরুলিয়া ১: ৫৭.০৭
পুরুলিয়া ২: ৪০.১৮
রঘুনাথপুর ১: ৮৬.৬২
রঘুনাথপুর ২: ১০০
সাঁতুড়ি: ৫৯.৩৪
*হিসেব শতাংশে