Dengue

হু-র পরামর্শে রাজ্য কি কান দিচ্ছে, উঠছে প্রশ্ন

হু সুপারিশ করেছে: ডেঙ্গির উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও যে-সব রোগীর রক্তপরীক্ষায় ওই রোগের জীবাণু মিলছে না, তাঁদের উপরেই কড়া নজর রাখতে হবে। ডেঙ্গিরোগীর তালিকায় ওই সব রোগীর নামও গুরুত্ব দিয়ে নথিভুক্ত করে তাঁদের রক্তের নমুনা ফের পরীক্ষার সুপারিশও করেছে হু।

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৬
Share:

মশারি-মিছিল: ডেঙ্গি সচেতনতায় পথে সিপিএম কর্মীরা। খড়্গপুরের মালঞ্চ রোডে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

হাতের সামনে রয়েছে কেন্দ্রের প্রথম শ্রেণির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস বা নাইসেড। কিন্তু ডেঙ্গি মোকাবিলায় তাদের সাহায্য নেয়নি রাজ্য। এমনকী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সুপারিশও তারা মানছে কি না, রোগের দাপট দেখে সেই বিষয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

Advertisement

যেমন হু সুপারিশ করেছে: ডেঙ্গির উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও যে-সব রোগীর রক্তপরীক্ষায় ওই রোগের জীবাণু মিলছে না, তাঁদের উপরেই কড়া নজর রাখতে হবে। ডেঙ্গিরোগীর তালিকায় ওই সব রোগীর নামও গুরুত্ব দিয়ে নথিভুক্ত করে তাঁদের রক্তের নমুনা ফের পরীক্ষার সুপারিশও করেছে হু। কিন্তু রাজ্য সরকার এই সুপারিশ মানছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

রাজ্য ডেঙ্গির তথ্য চেপে দিচ্ছে বলে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। ৪ অক্টোবরের পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকে ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্যই পেশ করেনি পশ্চিমবঙ্গ। ৪ অক্টোবর সেখানে যে-রিপোর্ট জমা পড়েছে, তাতে ডেঙ্গির উপসর্গ থাকা ‘অজানা জ্বর’-এ আক্রান্ত ও মৃতদের কোনও তলিকাই দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য ভবন ওই তালিকা আদৌ তৈরিতে করেছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে হু-র নির্দেশিকা (গাইডলাইন্স ফর ডায়াগনসিস, ট্রিটমেন্ট, প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব ডেঙ্গি, ২০০৯)-য় বলা হয়েছে, কোথায় কোথায় এই রোগ ছড়াচ্ছে, কোথায় তাদের চিকিৎসা হয়েছে, কী ভাবে রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো যায়নি— সেই সব তথ্যের সবিস্তার তালিকা থাকা জরুরি। বিশেষ করে ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকা থেকে সংগৃহীত যে-সব রক্তের নমুনায় রোগজীবাণু ধরা পড়েনি, সেগুলির একাধিক বার পরীক্ষা করা দরকার। রক্তের নমুনা বারবার পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়ের উপরে জোর দিয়েছে হু।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত এক এপিডেমিওলজিস্ট বা মহামারিবিদের মন্তব্য, রক্তপরীক্ষায় রোগের জীবাণু মিলল কি না, তার উপরে নির্ভর না-করে ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় উপসর্গ দেখেই রোগীদের চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত। ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় প্রশাসনকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে সেই সব রোগীর উপরে, যাঁদের উপসর্গ রয়েছে অথচ রক্তপরীক্ষায় জীবাণুর উপস্থিতির নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। তাঁদের তালিকাও তৈরি করতে হবে। কারণ, পরে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি তৈরির সময়ে সেই সব রোগীর তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

যা বলেছে হু

• রক্তপরীক্ষায় রোগ নির্ণয়ের আগেই উপসর্গ দেখে ব্যবস্থা

• ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় যথাযথ তথ্য সংগ্রহ

• তথ্য সংগ্রহের কাজে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য গ্রহণ

• প্রতিটি ডেঙ্গিরোগীর তথ্য আলাদা ভাবে সংরক্ষণ

• নমুনায় রোগ ধরা না-পড়লে সেগুলির পুনঃপরীক্ষা

• রোগ ধরা না-পড়লেও ডেঙ্গির উপসর্গ থাকলেই নামের নথিভুক্তি

• এই ধরনের রোগীর উপরে কড়া নজরদারি

• পরে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে সেগুলো কাজে লাগবে

হু-র পরামর্শ, কোনও সংক্রমণের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজে লাগাতে পারে প্রশাসন। কিন্তু এ রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালের তথ্যই তালিকাভুক্ত করছে না স্বাস্থ্য দফতর। ফলে ডেঙ্গির যথাযথ তথ্য সামনে আসছে না বলে অভিযোগ সরকারি চিকিৎসকদের একটি অংশের। ‘‘আমাদের বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য যাচাই করে দেখে তবেই তা তালিকাভুক্ত করতে হবে। একই ভাবে বেসরকারি ক্লিনিকের রক্তপরীক্ষার রিপোর্টও যাচাই করে নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে,’’ বলেন স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা।

এই যাচাইয়ের কাজটা এখনও শুরুই হয়নি বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে। শুরু হয়নি কেন?

স্বাস্থ্য দফতরের ওই কর্তা বলেন, ‘‘পরীক্ষাগারে সরকারি হাসপাতালের এত নমুনা জমে রয়েছে যে, অন্য নমুনা পরীক্ষার সময়ই মিলছে না।’’ ঠান্ডা পড়লে, ডেঙ্গি পর্ব মিটলে সেই যাচাই পর্ব শুরু হবে বলে জানান ওই কর্তা। অর্থাৎ বেসরকারি হাসপাতালে যাঁরা মারা গিয়েছেন বা সেখানে এবং ক্লিনিকের পরীক্ষায় যে-সব নমুনা ডেঙ্গি বলে চিহ্নিত হয়েছে, এ বছরের তালিকায় সেগুলির অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

মোদ্দা কথা, ডেঙ্গির মতো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে যে-বিষয়টির উপরে হু সর্বাধিক জোর দিয়েছে, এ রাজ্যে সেটাই সব থেকে অবহেলিত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন