অস্ত্র-যোগ নেপালের সঙ্গে, উদ্বেগ শিলিগুড়িতে

নেপালের মাওবাদীদের কিছু বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে বিস্ফোরক বা অস্ত্র সংগ্রহে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এই কাজে তারা শিলিগুড়ি করিডরকে ব্যবহার করা শুরু করেছেন বলেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০০
Share:

নেপালের মাওবাদীদের কিছু বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে বিস্ফোরক বা অস্ত্র সংগ্রহে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এই কাজে তারা শিলিগুড়ি করিডরকে ব্যবহার করা শুরু করেছেন বলেও গোয়েন্দাদের সন্দেহ।

Advertisement

মাস খানেক আগে খোদ শিলিগুড়ি শহর থেকেই মিলেছিল প্রচুর জিলেটিন স্টিক ও ডিটোনেটর। তখন যে তিন জনকে ধরা হয়েছিল তারা সকলেই নেপালের নাগরিক। তাদের সঙ্গে নেপালের বিত্তা মোড়ের এক নাগরিক ফু ফু-র সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পারে। তারপরে গত মাসের শেষে ধরা পড়ে ফরচুন ভুটিয়া এবং রাইডার ভুটিয়া নামের দু’জনকে। তারাও নেপালের বাসিন্দা।

তারপরে পুলিশ জানতে পারে, এদের সকলেরই পূর্ব নেপালের দুর্গম সানখুসভার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সেখানে তাদের নিজেদের বাড়ি রয়েছে। তাদের নিকট আত্মীয়েরা সেখানেই থাকেন। আর এই সানখুসভার কিছু এলাকাতেই বর্তমানে নেপালের মাওবীদের কিছু বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী তাদের অন্যতম ঘাঁটি করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর।

Advertisement

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা শুধু বলেছেন, ‘‘মামলায় নেপাল যোগাযোগ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। বাকিটা নিয়ে তদন্ত চলছে।’’

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ২০০৬ সালের পর পুষ্প কমল দাহাল বা প্রচণ্ডের নেতৃত্বে মাওবাদীরা নেপালে ক্ষমতায় আসে। সাতটি সম-মনোভাবাপন্ন দলকে নিয়ে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল যুদ্ধবিরতি ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করে। ২০১২ সালে দলের তাত্ত্বিক নেতা মোহন বৈদ্যের নেতৃত্বে দল ভেঙে কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল তৈরি করে। ২০১৪ সালে নেত্রা বিক্রম চন্দ বা বিপ্লব দলের নেতাদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে মাওবাদীদের আরেকটি দল তৈরি করেন। ইতিমধ্যে তাঁর দলের তরফে বন্‌ধ, চাকা জ্যাম, নেতাদের সম্পত্তি দখল শুরু হয়েছে।

এর সঙ্গে মাওবাদীদের পিপলস লিবারেশন আর্মি ছেড়েও ছোট ছোট গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তারা অপহরণ, তোলাবাজি শুরু করেছে বলে দাবি। এমনকি, কয়েকটি গোষ্ঠী সরকারের বিরুদ্ধে ফের অস্ত্র ধরার হুমকিও দিয়েছে। কিন্তু, মাওবাদীরা ক্ষমতায় আসার পর পুরানো অস্ত্রশস্ত্র দেশের অস্ত্রাগারে জমা হয়ে গিয়েছে। তাওই এখন নতুন অস্ত্রের খোঁজ পড়েছে।

কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের অফিসারেরা জানান, ওই গোষ্ঠীদের ঘাঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে নেপালের সানখুসভা। আর সেই এলাকার সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে বিস্ফোরক কাণ্ডে ধৃত দাওয়া শেরিং ভোটে, পুজা সুব্বা বা কৃষ্ণ বাহাদুর অধিকারী-সহ পাঁচ জনের।

বিস্ফোরক উদ্ধারের খবর শুনে নেপাল পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের একটি বিশেষ দল শিলিগুড়িতেও এসেছিলেন। তাঁরা জানিয়ে যান, জিলেটিন স্টিক বা ডিটোনেটর উদ্ধারের ঘটনা তাঁদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেমনই, এ রাজ্যের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে চিন্তার কারণ, নতুন করে শিলিগুড়ি করিডরকে সক্রিয় করার চেষ্টা। এতে শিলিগুড়ি বা লাগোয়া এলাকায় বিস্ফোরক মজুত করা হলে যে কোনও সময় বড় মাপের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকছে। মামলায় জানানো হয়েছে, ওই জিলেটিন স্টিক ও ডিটোনেটর মেঘালয় থেকে অসম হয়ে শিলিগুড়ি আনা হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, নেপালের পুলিশের তথ্য অনুসারে ফু ফু-রও গতিবিধি সানখুসভা ছাড়াও কাঁকরভিটা, বিত্তামোড়ে মিলেছে। তার খোঁজে এখন নেপাল পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন