তোমার মন নাই, নেটিজ়েন?

ঝড় আসার খবর মিলতেই দু-তিন দিন আগে থেকে ‘বুলবুল’ শব্দটির সঙ্গে যুক্ত নানা গানের লাইন নিয়ে মিম, ছবি ছড়িয়ে পড়তে থাকে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে। তখনও তার ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১০
Share:

বুলবুল নিয়ে ছড়িয়েছে এমন মিম। তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের দাপটে ইতিমধ্যেই গৃহহীন এ রাজ্যের অজস্র মানুষ। তাঁদের সেই দুর্দশার ছবি-ভিডিয়োও ঘুরছে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের মতো সমাজমাধ্যমের নানা মঞ্চে। কিন্তু সেই সমাজমাধ্যমেই বুলবুল নিয়ে যে ভাবে লঘু রসিকতায় মেতেছেন নেটিজ়েনের একাংশ, তাতে প্রশ্ন উঠেছে তাঁদের সংবেদনশীলতা নিয়েই।

Advertisement

ঝড় আসার খবর মিলতেই দু-তিন দিন আগে থেকে ‘বুলবুল’ শব্দটির সঙ্গে যুক্ত নানা গানের লাইন নিয়ে মিম, ছবি ছড়িয়ে পড়তে থাকে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে। তখনও তার ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করা যায়নি। তবে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই গতিবেগ বাড়ছিল বুলবুলের। ফসলের চিন্তায় ঘুম উড়েছিল চাষিদের। কাঁচা বাড়ির বাসিন্দাদের বুক ধুকপুক বেড়েছিল। এ সব ভাবনা অবশ্য স্পর্শ করেনি নেটিজ়েনের অনেককেই। তাঁরা মশগুল ছিলেন বুলবুল নিয়ে রঙ্গ-রসিকতায়।

ফেসবুকে কেউ লিখেছেন, ‘ডবল বুল থাকতে সিঙ্গল বুল কী করবে’! ভাইরাল হয়েছে ‘আ জা মেরি বুলবুল তেরি ইন্তেজার হ্যায়’ গানটিও। ঝড় আছড়ে পড়ার পরেও রসিকতা থামেনি। মিম বানিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘বুলবুলকে শুধু ভালবেসে বলেছিলাম, নাচ মেরে বুলবুল তো পয়সা মিলেগা। ও দেখছি ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছে।’’ তাঁর জেলার অনেকের ক্ষতি হয়েছে বুলবুলের জেরে। সেই পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির সমাজকর্মী ঝর্না আচার্য প্রশ্ন তুলছেন যাঁরা এমন রসিকতা করছেন তাঁদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়েই। তিনি বলছেন, ‘‘ধান বা আনাজ নষ্ট হলে কী খাব, তা ভাবতে হলে এমন কৌতুক করতে পারতেন না।’’

Advertisement

কৌতুক করেই ফেসবুকে পরিচিত পেশায় ইঞ্জিনিয়ার মহফুজ আলি। ‘মালি’ নামে নিজের পেজ থেকে সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র পোস্ট করেন তিনি। সেগুলি ভাইরালও হয় প্রায়শই। অস্ট্রেলিয়ানিবাসী সেই মহফুজই বলছেন, ‘‘আসলে এখন সকলেই সমাজমাধ্যমে একটা পরিচিতি পেতে চান। তাই কোন বিষয় নিয়ে মজা করা উচিত, আর কোনটা নিয়ে উচিত না, সেই বোধও অনেক সময় থাকে না। এটা নিজেকেই বুঝতে হবে।’’ মহফুজ জানালেন, অস্ট্রেলিয়ায় হালে ফেসবুকে কোন পোস্ট কটা ‘লাইক’ পাচ্ছে তা দেখানোই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রইল। জনপ্রিয় হওয়ার তাড়না রইল না। এটা হলে হয়তো এমন প্রবণতা কমবে।’’

শুধু ইন্টারনেটে রসিকতা করেই থেমে নেই অনেকে। বুলবুলকে কাছ থেকে দেখার ‘রোমাঞ্চ’ পেতে অনেকে পাড়ি দিয়েছেন দিঘায়। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে এমনই এক দল যুবক বললেন, ‘‘আমরা তো গুগল ঘেঁটে দেখে এসেছি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে সেলফি কী ভাবে তুলতে হয়।’’ নিষেধ উড়িয়ে সমুদ্রে নেমে দিঘায় মারা গিয়েছেন কলকাতার এক পর্যটকও।

এমন মনোভাবের পিছনে হালের অনুভূতির অস্থিরতার সংস্কৃতিকেই দেখছেন মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ। তাঁর কথায়, ‘‘সমাজমাধ্যমে এখন দুঃখের খবরের পরেই আর একটা খুশির খবর চলে আসে। তাই কোনও অনুভূতির রেশই থাকে না। আত্মপ্রচার চালানোর চেষ্টাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এ সব তারই ফল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন