নতুন বাইপাস। ছবি: বিকাশ মশান।
এ রাস্তা দিয়ে একবার যাঁরা গিয়েছেন, তাঁরা দ্বিতীয়বার যাওয়ার আগে শঙ্কায় থাকেন। এমনই এ রাস্তার মহিমা!
অথচ এই রাস্তা মামুলি রাস্তা নয়। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক (দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে)। কিন্তু, ঝাঁ চকচকে রাস্তা ধরে যেই না পানাগড় রেলসেতুতে পৌঁছনো, অমনি থমকে যায় গাড়ির গতি। সৌজন্যে পানাগড় বাজার। চার লেনের রাস্তা সেখানে দুই লেন। তার উপর বাজার নেমে এসেছে পথে। তার জেরে হাজার হাজার ট্রাক-লরি-বাস-গাড়ির যানজটে ফেঁসে নাকাল হওয়ার অভিজ্ঞতা কমবেশি প্রতিদিনই হয় যাত্রীদের। এই যাত্রী হয়রানি ঠেকাতেই নানা টালবাহানার পরে তৈরি হয়েছে নতুন বাইপাস। কিন্তু এখনও গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি সেটি। ফলে, পানাগড় বাজারের যানজট ঠেলেই যাতায়াত করতে হচ্ছে সমস্ত গাড়িকে।
কেন বাইপাস চালু হচ্ছে না, তা খোঁজ নিতে গিয়ে সামনে আসছে স্থানীয় প্রশাসন এবং কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের মধ্যে চাপান-উতোর। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরার দাবি, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) সঙ্গে বৈঠক করে তিনি জেনেছেন, সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকড়ীর ওই রাস্তা উদ্বোধন করতে আসার কথা। তাঁর আসা নিশ্চিত না হওয়ায় রাস্তা চালু হচ্ছে না। যদিও মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, জট কেটেছে। সংসদের অধিবেশন ও ব্যক্তিগত কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উদ্বোধনে আসতে পারবেন না গডকড়ী। তবে বাইপাস যাতে শীঘ্রই চালু হয়, সে জন্য তিনি কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্বোধন করতে বলেছেন।
বাবুল নিজেও বলছেন, ‘‘৪ ডিসেম্বর পানাগড় বাইপাসের উদ্বোধন করব। গত মাসেই রাজ্যের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নিয়ে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার পরেও কেন বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে জানি না!’’ একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, কাজ শেষ হওয়ার আগেই উদ্বোধনের একটা রেওয়াজ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ওই রাস্তাতেও অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও জানান, রাস্তা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে টোল ট্যাক্স-সহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন দফতরের অনুমোদন লাগে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।
কেন্দ্রের স্বর্ণ চতুষ্টয় প্রকল্পে ২০০১ সালে কলকাতা-দিল্লি ২ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেনের করা হয়। কিন্তু, দোকান ভাঙা পড়ার আশঙ্কায় পানাগড় বাজারে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ওই এলাকায় প্রায় সওয়া তিন কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করতে বাধা দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও গোলমালের আশঙ্কায় প্রশাসন ওই ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে পারেনি। ফলে, জাতীয় সড়কের বাকি অংশে চার লেন ধরে দ্রুত বেগে ছুটে আসা সমস্ত গাড়ির গতি থমকে যায় পানাগড়ের দু’লেনে। দার্জিলিং মোড় থেকে রেলসেতু পর্যন্ত রাস্তা সামান্য রাস্তা পেরোতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। ওই অংশটি দুর্ঘটনা প্রবণও। বছরে গড়ে আট জনের মৃত্যু হয়।
পানাগড় বাজারে রাস্তা সম্প্রসারণ করতে না পেরে ২০০৯ সাল নাগাদ বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা করেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বায়ু সেনার অনুমতি মিলতে দেরি, জমি পেতে সমস্যা, কখনও জমিদাতাদের সঙ্গে দাম নিয়ে বিতণ্ডা— নানা কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়। শেষে ২০১৪ সালে প্রায় ৮ কিলোমিটার লম্বা বাইপাসের কাজ শুরু হয়। এনএইচএআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৫ অক্টোবর নির্মাণকারী সংস্থা কাজ শেষ করেছে। কিন্তু বাইপাস চালু না হওয়ায় ভোগান্তি চলছেই। দুর্গাপুর থেকে প্রতিদিন গলসি যাতায়াত করেন স্কুল শিক্ষিকা সোনালি রুদ্র। তিনি বলেন, ‘‘পানাগড় বাজারের কথা ভেবে সিঁটিয়ে থাকি।’’ সপ্তাহান্তে কলকাতা যান বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক সৌদীপ্ত বণিকের কথায়, ‘‘আমি রাতে যাই। তখন যানজট আরও বেশি। পানাগড় যেন দুঃস্বপ্ন!’’