কেব্‌লস বন্ধের সিদ্ধান্তে আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরাও

কারখানাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল বাজার। কারখানার সুদিনে জমজমাট ছিল এলাকা। পরিস্থিতি পাল্টানোর পরে সেই রমরমা গিয়েছে, কিন্তু এলাকার অর্থনীতি একেবারে বসে যায়নি।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

রূপনারায়ণপুর শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৮
Share:

কেব্‌লস টাউনশিপের বাজার। ছবি: শৈলেন সরকার।

কারখানাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল বাজার। কারখানার সুদিনে জমজমাট ছিল এলাকা। পরিস্থিতি পাল্টানোর পরে সেই রমরমা গিয়েছে, কিন্তু এলাকার অর্থনীতি একেবারে বসে যায়নি। এ বার হিন্দুস্তান কেব্‌লস কারখানা পাকাপাকি ভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত হওয়ায় সেই আশঙ্কায় ভুগছেন রূপনারায়ণপুরের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

হিন্দুস্তান কেবলস কারখানা ঘিরেই গড়ে উঠেছে রূপনারায়ণপুর শহর। এলাকার অর্থনৈতিক ভিত দাঁড়িয়ে এই কারখানার উপরে। এক সময়ে কর্মীর সংখ্যা ছিল কয়েক হাজার। এখন তা কয়েকশোয় দাঁড়িয়েছে। বুধবার এলাকার সাংসদ তথা কেন্দ্রের ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় জানান, তাঁদের মন্ত্রক এই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারখানা একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে এলাকার আর্থিক পরিকাঠামোও ভেঙে পড়বে বলেই মনে করছে ব্যবসায়ী মহল। তাঁদের আশঙ্কা, যে সব কর্মীরা এখনও রয়েছেন, পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার পরে তাঁদের অনেকেই এলাকা থেকে চলে যাবেন। তার প্রভাব বাজারের উপরে পড়বে।

ব্যবসায়ীরা জানান, শহরের বাজারহাট, দোকানের বেশিরভাগ ব্যবসা নির্ভর করে কেব্‌লসের কর্মীদের উপরে। এখন যদি কারখানাই না থাকে তাহলে কেনাবেচাও স্বভাবতই কমবে। স্থানীয় বণিকসভার সদস্য বিশ্বনাথ রুজের কথায়, ‘‘এখন তবু শ্রমিক-কর্মীরা কয়েক মাস ছাড়া বেতন পান। সেই টাকা বাজারে আসে। কিন্তু কারখানায় ঝাঁপ পড়া মানে সেটাও পাকাপাকি বন্ধ।’’ তাঁরা দাবি তুলেছেন, এই কারখানার জমিতেই নতুন শিল্প হোক। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হোক। তাতে এলাকার অর্থনীতি বাঁচবে।

Advertisement

কেব্‌লস কারখানার যখন রমরমা অবস্থা ছিল তখন সংস্থার আবাসন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কিছু মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে দিয়েছিলেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। সেগুলিতে সব মিলিয়ে কয়েকশো দোকান রয়েছে। দোকানগুলির বিদ্যুৎ ও জলের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয় সংস্থার তরফে। এখন কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তে অথৈ জলে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। বাজার সমিতির সম্পাদক নীলকমল মৌলিক অভিযোগ করেন, এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ মাঝে-মাঝে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ বার কারখানার ঝাঁপ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা রীতিমতো সমস্যায় পড়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ কারখানা বন্ধের প্রভাব এলাকার অর্থনীতিতে পড়বে ও তার জেরে সাধারণ বাসিন্দারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন কেব্‌লসের প্রাক্তন কর্মী অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের আশঙ্কা, কারখানা বন্ধের পরে সংস্থার আবাসন এলাকায় নিরাপত্তা বলে আর কিছু থাকবে না। দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য বেড়ে যাবে। বাসিন্দাদের চলাফেরা করা সমস্যা হবে।

বৃহস্পতিবার সকালেও কর্মীরা কারখানায় গিয়েছেন। তাঁদের অনেকের এখন দাবি, যত দ্রুত সম্ভব পাওনাগন্ডা মেটানোর ব্যবস্থা হোক। তবে ২০০৭ সালের বেতনক্রম অনুযায়ী পাওনা মেটানো হবে জেনে অনেকেই খুশি। কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন আলাদা ভাবে এই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় নামবে বলে নেতারা দাবি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন