রূপান্তরকামীদের জন্য এ বার পৃথক ‘সুলভ’

আর এই ভাবনা থেকেই তাঁর মনে হয়, কোনও আলাদা শৌচালয়ের ঘর তৈরির দরকার নেই। বরং দরকার আলাদা স্বীকৃতির। অন্য নাগরিকদের মতোই যে ওঁদের জন্য ভাবা দরকার, সেইটাই শুরু করা প্রয়োজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০৯:১০
Share:

আইন অনুযায়ী সব সুবিধাই পাওয়ার কথা তাঁদের। রাষ্ট্রের দেওয়া সব সুযোগেই তাঁদের সমান অধিকার মেলার কথা আর পাঁচ জন নাগরিকের মতো। কিন্তু সামান্য সৌজন্য প্রকাশও বহু ক্ষেত্রে হয় না বলে অভিযোগ ওঠে। নানা আন্দোলন, আইন গঠন, আলোচনাসভার পরেও সামাজিক অবস্থানের নিরিখে বিভাজনগুলো বার বার প্রকট। সে কথাই ফের মনে করিয়ে দিল শহরের এক সুলভ উদ্যোগ। বাকি নাগরিকদের জন্য যে ব্যবস্থা হলে কেউ ফিরেও তাকান না, রূপান্তরকামীদের জন্য সেই ব্যবস্থাই উঠে এল শিরোনামে।

Advertisement

এক যুবকের প্রচেষ্টায় অবশেষে শহর কলকাতায় সুলভ শৌচালয়ে করা হয়েছে রূপান্তকামীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। নতুন নির্মাণ নয়, পুরনো শৌচালয়েই পুরুষ-মহিলার পাশাপাশি থাকছে রূপান্তরকামীদের জন্য জায়গা, যা ‘ত্রিধারা’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। একুশ বছরের এক যুবক নিজের চেষ্টায় করেছেন এই কাজ। কলকাতা পুরসভার ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক সুলভ শৌচালয়ে ইতিমধ্যেই ওই যুবক তাঁর দলকে নিয়ে এই ব্যবস্থা চালু করে ফেলেছেন।

দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ওই যুবক শোভন মুখোপাধ্যায় ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় পুরসভা নির্মিত শৌচালয়েই পুরুষ-মহিলাদের মতো আলাদা করে স্টিকার দিয়ে ব্যবস্থা করেছেন রূপান্তরকামীদের ব্যবহারের জন্য শৌচালয়। ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশন থেকে বাঁশদ্রোণী যাওয়ার পথে রয়েছে একটি বড় শৌচালয়। সেখানেই প্রথম আলাদা করে ‘ত্রিধারা’র ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি, ওই ওয়ার্ডেরই পীরপুকুর এবং বড়তলার কিছু সুলভ শৌচালয়েও করা হয়েছে এই ব্যবস্থা। তবে একটি ওয়ার্ডেই থেমে থাকছেন না শোভন এবং তাঁর দল। ১১৩ এবং ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডেও একই ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

শোভনের কথায়, ‘‘রূপান্তরকামীদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে মনে হয়, ওঁদের জন্য কোনও ব্যবস্থা, সুবিধা থাকবে না কেন?’’ আর এই ভাবনা থেকেই তাঁর মনে হয়, কোনও আলাদা শৌচালয়ের ঘর তৈরির দরকার নেই। বরং দরকার আলাদা স্বীকৃতির। অন্য নাগরিকদের মতোই যে ওঁদের জন্য ভাবা দরকার, সেইটাই শুরু করা প্রয়োজন। তিনি জানান, সেই ভাবনা থেকেই শুরু করেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ। কিন্তু অনেক জায়গায় সাড়া মেলেনি। শেষে ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদার রাজি হন।

শোভন আরও জানাচ্ছেন, শুধু ‘স্টিকার’ লাগিয়ে আলাদা ব্যবস্থা করে দিলেই হতো না। তাই শৌচালয়গুলিতে গিয়ে ব্যবহারকারী মহিলা ও পুরুষদের সঙ্গে কথা বলে এবং সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আলোচনা করেই এ কাজ করা সম্ভব হয়েছে।

তাঁর এই উদ্যোগে খুশি কাউন্সিলরও। অনিতাদেবী বলেন, ‘‘ছেলেটির কথা শুনে মনে হল, সত্যিই তো ভাল কাজ।’’ এক জন সাধারণ নাগরিক যে এমন কাজে উদ্যোগী হয়েছেন, তাতেই খুব খুশি নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ এক জন নাগরিক যে এমন ভেবেছেন, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন