ফাইল চিত্র।
দক্ষিণবঙ্গের পরে এক দফা বন্যার মুখে পড়েছে উত্তরবঙ্গ। দুই ক্ষেত্রেই প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপের অতিবর্ষণ। বানভাসি দুই বাংলাকেই তটস্থ করে বঙ্গোপসাগরে ফের জন্ম নিচ্ছে এক ঘূর্ণাবর্ত। উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণ করে বুধবার এ কথা জানায় আবহাওয়া দফতর।
ওই ঘূর্ণাবর্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, নিশ্চিত ভাবে তা জানাতে পারেননি আবহবিদেরা। কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আজ, বৃহস্পতিবার ঘূর্ণাবর্তটি দানা বাঁধবে। তার পরেই বোঝা যাবে, সে বৃষ্টি ঝরাবে কোন কোন এলাকায়।
হাওয়া অফিসের খবর, ঘূর্ণাবর্ত দানা না-বাঁধলেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিহারের মজফ্ফরপুর থেকে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা মালদহের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। তার প্রভাবে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমানের একাংশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
বৃষ্টির দাপট বুধ-সন্ধ্যা থেকেই টের পেয়েছে কলকাতা এবং লাগোয়া জেলা। আবহবিজ্ঞানীরা জানান, অক্ষরেখার টানে সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে এবং তা ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করছে। তার ফলেই এই বৃষ্টি। বর্ষণ চলবে বৃহস্পতিবারেও। দিনভর রোদের পরে সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামলেও ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি কাটেনি। বাড়তি আর্দ্রতার জন্যই এমন ভ্যাপসা আবহাওয়া বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
আরও পড়ুন: ফের ভাঙল বাড়ি, এ বার বড়বাজারে
ভারী বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তরবঙ্গে। দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ বিপর্যস্ত। সড়ক-যোগাযোগও কার্যত স্তব্ধ। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরের আঁতুড়ে বাড়তে থাকা ঘূর্ণাবর্ত নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন অনেকেই। তবে আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলেই যে প্রচণ্ড বৃষ্টি হবে, তা নয়। ঘূর্ণাবর্ত কোথায় তৈরি হচ্ছে, তার অভিমুখ কোন দিকে, তার শক্তিই বা কতটা— এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। উপগ্রহ-চিত্র অনুযায়ী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্তটি দানা বাঁধতে চলেছে। এলাকাটা যদি হয় ওড়িশা উপকূলের লাগোয়া, তা হলে গাঙ্গেয় বঙ্গে বিপদের আশঙ্কা কম। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে গাঙ্গেয় বঙ্গের দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে।
এ বছর বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে কেন?
আবহবিদদের একাংশের ব্যাখ্যা, এটাই বর্ষার স্বাভাবিক চরিত্র। সাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণাবর্তের হাত ধরেই বর্ষা জোরালো হয়। এ বছর রাজ্যে ঝুলি উপুড় করে দিয়েছে বর্ষা। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, ১ জুন থেকে ১৬ অগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে আট শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে উদ্বৃত্ত বর্ষণের মাত্রা ১৪ শতাংশ। বর্ষার যা মতিগতি, মরসুম শেষেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে মনে করছে হাওয়া অফিস।