এই অপমান সহ্য হয় না, স্তন্যদান ছেড়ে শপিং মলে দুধের বোতলেই ভরসা

স্তন্যপান করাবেন কোথায়, ঠিক থাকে না। তাই বাড়ি থেকে আনা বোতলবন্দি দুধেই ভরসা করছেন মায়েরা।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৭
Share:

ব্যবস্থা: শিশুদের জন্য সাউথ সিটিতে দেখা গেল এমন ঘর। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

স্তন্যপান করাবেন কোথায়, ঠিক থাকে না। তাই বাড়ি থেকে আনা বোতলবন্দি দুধেই ভরসা করছেন মায়েরা। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, শুধু স্তন্যপানই (exclusive breast feeding) যদি করাতে চান সন্তানকে, তবে এড়িয়ে চলুন শপিং মল। আর মলে যদি যেতেই হয়, তবে বোতলবন্দি করে নিয়ে যান বুকের দুধ।

Advertisement

সাউথ সিটি মলে বসে সন্তানকে স্তন্যপান করানোয় নিরাপত্তাকর্মীর আপত্তিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্জে উঠেছিলেন এক মা। ওই শপিং মলের সাইটে ঢুকে ঘটনার প্রতিবাদ জানান তিনি। শপিং মলের তরফে পাল্টা পোস্ট করে বলা হয়, বাড়ির কাজ শপিং মলে করার কথা নয়। সেই পোস্ট ঘিরে বিতর্ক-পাল্টা বিতর্কে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। তারই প্রেক্ষিতে এমন কথা ভাবছেন সদ্যোজাতদের মায়েরা।

গত মঙ্গলবার সোশ্যাল মি়ডিয়ায় ওই মায়ের পোস্ট ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক এখনও থামেনি। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার দক্ষিণ কলকাতার চারটি শপিং মল ঘুরে দেখা গেল, সাউথ সিটি মলের নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সেখানে আসা অন্য মায়েরাও। সেই ঘটনার পরে আবার অপমানিত হওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তাঁদের অধিকাংশেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসায় মাঝপথেই ছেদ, চলছে জড়িবুটি

একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্মী টালিগঞ্জের বাসিন্দা মোনালিসা দত্ত সাত মাসের সন্তানকে নিয়ে শনিবার সাউথ সিটি মলে গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি মাস খানেক আগেও বাচ্চাকে নিয়ে এক বার এই শপিং মলে এসেছিলাম। খিদে পেয়ে আমার বাচ্চা কান্নাকাটি করায় অনেক কষ্টে একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ঝাঁ চকচকে শপিং মলের প্রতি তলে শিশুকে স্তন্যপান করানোর পরিকাঠামো থাকা দরকার। তা এখানে নেই।’’ তাঁর সাফ কথা, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার এক মহিলার পোস্ট দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। সে দিন থেকেই ঠিক করেছি, কয়েক ঘণ্টার জন্য শপিং মলে বাচ্চাকে নিয়ে এলে সঙ্গে বোতলে দুধ নিয়ে আসব। এ ভাবে অপমান মেনে নেব না।’’ শনিবার সাউথ সিটি মলে গিয়ে দেখা গেল, ছ’তলা মলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলে শিশুদের জন্য একটি করে ঘর রয়েছে। বাইরে লেখা ‘বেবিস রুম’। সামনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক জন মহিলা রক্ষী থাকছেন। ভিতরে অবশ্য শুধু দু’টি চেয়ার রাখা। শিশুকে নিয়ে কোনও মহিলাকেই সেখানে ঢুকতে দেখা গেল না। নিরাপত্তারক্ষীরা জানালেন, মলের তৃতীয় তলেই ঘটেছিল ঘটনাটি। ঘটনার দিনও কি ঘরটি ছিল এ ভাবেই? অভিযোগকারিণী স্তন্যপান করানোর জায়গা খুঁজলে সেই ঘরের হদিস দেওয়া হল না কেন তবে? তার উত্তর মেলেনি। কর্তৃপক্ষ শুধু জানালেন, প্রতি তলে শিশুদের স্তন্যপান করানোর জন্য জায়গা তৈরি হচ্ছে।

এ দিন কসবার অ্যাক্রোপলিস মলে গিয়েও আর এক মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঝুঁকি নিতে চান না তিনিও। খিদিরপুরের বাসিন্দা নাসরিন জাহানের কথায়, ‘‘সাউথ সিটি মলে যা হয়েছে, তা খুব অপমানজনক। আজ ব্যাগে করে বোতলভর্তি দুধ এনেছি। শিশুর খিদে পেলে যেখানে-সেখানে বসে খাওয়ানো যাবে। সন্তানের খিদের সময়ে কারও চোখ রাঙানি তো দেখতে হবে না!’’ এ দিন বিকেলেই পার্ক সার্কাসের কোয়েস্ট মলে পাঁচ মাসের একরত্তিকে নিয়ে গিয়েছিলেন রুমকি দত্ত। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা রুমকি এখন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘দশ বছর মেলবোর্নে রয়েছি। আমার দু’টি সন্তান। ওই দেশে মায়েরা প্রকাশ্যেই স্তন্যপান করান সন্তানকে। এ নিয়ে কেউ চর্চা করেন না।’’ কোয়েস্ট মলে অবশ্য নির্দিষ্ট ঘর রয়েছে স্তন্যপান করানোর জন্য। তবে রুমকিদেবীর অভিযোগ, ‘‘সদ্যোজাত বাচ্চা, মায়েদের জন্য এখানে যা ব্যবস্থা রয়েছে, তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়।’’

শনিবার বিকেলে ভবানীপুরের এলগিন রোডের ফোরামে গিয়ে দেখা গেল, সাততলা মলের নীচের তলায় একটি ঘরে বাচ্চাদের খাওয়ানোর জায়গা করা হয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয় ওই ঘরেই। তার জন্য রয়েছে ছোট বিছানা। শনিবার এই শপিং মলের তিনতলায় ছ’মাসের বাচ্চাকে নিয়ে ‘বেবিস কর্নার’-এ এসেছিলেন কসবার মহুয়া দাস। সেখানকার চেঞ্জিং রুমে গিয়েই এ দিন শিশুকে স্তন্যপান করান তিনি। মহুয়াদেবীর কথায়, ‘‘প্রতি তলে বাচ্চাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘর থাকলে ভাল হয়।’’ ফোরামের চিফ অপারেটিং ম্যানেজার উজ্জ্বল বলেন, ‘‘শীঘ্রই ফোরামের তিনতলায় বাচ্চা ও মায়েদের জন্য ঘর তৈরি করা হবে।’’ কোয়েস্ট মলের তরফে জানানো হয়েছে, সাততলার শপিং মলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলে বাচ্চাদের ঘর রয়েছে। সাউথ সিটি মলের তরফে জানা গিয়েছে, বিতর্কের পরে অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সে দিনের ঘটনার পরে শপিং মলের সিনিয়র এগজিকিউটিভেরা নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে প্রতিদিন বৈঠক করছেন। মূলত শপিং মলে আসা অতিথিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্যই এই বৈঠক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন