‘জেহাদি’র নাম অর্চনা

ইদানীং একটা শব্দ বার বার ফিরে আসেছে বিভীষিকা হয়ে। আসল অস্তিত্বে নয়, ছদ্ম অস্তিত্ব ধারণ করে গোটা পৃথিবীতে সে শব্দ ত্রাস এখন। সে হল ‘জেহাদ’।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:০০
Share:

ইদানীং একটা শব্দ বার বার ফিরে আসেছে বিভীষিকা হয়ে। আসল অস্তিত্বে নয়, ছদ্ম অস্তিত্ব ধারণ করে গোটা পৃথিবীতে সে শব্দ ত্রাস এখন। সে হল ‘জেহাদ’।

Advertisement

ইসলামে জেহাদের আসল বাখ্যা যা, তার সঙ্গে কোনও মিল নেই বাংলাদেশে, আফগানিস্তানে, তুরস্কে, ইরাকে, সৌদি আরবে, আরও নানান প্রান্তে দৃশ্যমান জেহাদের। তাই ছদ্ম অস্তিত্ব বললাম। আসল জেহাদ অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের হয়ে বিদ্রোহ, ধর্মের হয়ে লড়াই। কিন্তু আজ যা দেখছি, তা ধর্মান্ধতা প্রসারের লড়াই। এই তথাকথিত ‘জেহাদ’ পৃথিবীকে নরক করে তুলতে চায়। সন্ত্রাসীদের মুখে বার বার উচ্চারিত শব্দটা ত্রাসের অন্য নাম হয়ে উঠতে চায়। এরই মধ্যে খবর পেলাম অন্য এক জেহাদের। সে জেহাদ, সে বিদ্রোহ ত্রাস নয়, শান্তির বারিধারা। সে বিদ্রোহ পরিপূর্ণ সভ্যতার প্রতিশ্রুতি এক।

এই ‘জেহাদি’র নাম অর্চনা গৌতম। বিহারের প্রত্যন্ত প্রান্তে নিজের পরিজনদের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ তাঁর। বিয়ের আগে শ্বশুরকূল কথা দিয়েছিল, শৌচালয় বানানো হবে বাড়িতেই। বিয়ে মিটতেই প্রতিশ্রুতি ভাঙার অধ্যায় শুরু। মাসাধিককাল ধরে প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন অর্চনা। স্বামী-শ্বশুর গুরুত্বই দিচ্ছিলেন না। অবশেষে বিদ্রোহ নব পরিণীতার। শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে ফিরে গেলেন নিজের বাড়িতে। পঞ্চায়েতের বিচারসভায় জানিয়ে দিলেন, এমন পরিবারের সঙ্গে জীবন আর কাটাবেন না।

Advertisement

বিদ্রোহ ফলও দিয়েছে। বিচারসভায় ক্ষমা চেয়েছে অভিযুক্ত পরিবার। বাড়িতে শৌচালয় বানানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। অর্চনা অবশ্য তাতেও বদলাননি মত। যে পরিবারকে সভ্যতার প্রাথমিক শর্তগুলো মানতে বাধ্য করার জন্য পঞ্চায়েতি বিচারসভা বসাতে হয়, সেই পরিবারের সঙ্গে জীবন কাটাবেন না অর্চনা। জানিয়েছেন দৃঢ় উচ্চারণে।

বিদ্রোহ এটাই। জেহাদ এ রকমই। অর্চনা গৌতম নিজের জন্য পথ খুললেন, পথ দেখালেন আরও অনেক অর্চনাকে। শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছেই সমস্ত নিজস্বতা বিসর্জন দেওয়ার যে অলিখিত রীতি বহু পরিবারে, তার বিরুদ্ধে জেহাদ করলেন। সফলও হলেন।

এই জেহাদে রক্ত নেই, প্রাণহানি নেই, ত্রাস নেই। কিন্ত সমাজ পরিবর্তনের দুন্দুভিনিনাদ রয়েছে। এমন জেহাদ দিকে দিকে হোক, রোজ হোক। এত বার হোক এ বিদ্রোহ, যেন এ বিদ্রোহের প্রয়োজনই ফুরিয়ে যায় খুব দ্রুত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন