নবান্ন অভিযানে পুলিশি সংঘর্ষের মুখে মহিলারা। — ফাইল চিত্র
নবান্ন অভিযানে পুলিশের বিরুদ্ধে নিগ্রহের অভিযোগ আগেই জানিয়েছিলেন বাম নেতারা। এ বার সে দিনের সংঘর্ষে মহিলা বিক্ষোভকারীদের উপরে নিগ্রহ নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য জানতে চাইল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
নবান্ন অভিযানের পর কলকাতায় এসে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট বলেছিলেন, মহিলাদের উপরে আক্রমণ নিয়ে তাঁরা মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হবেন। সেইমতোই বুধবার সিপিএম এবং সিপিআইয়ের মহিলা সংগঠনের তরফে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডি়জি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। জাতীয় মহিলা কমিশনেও বৃহস্পতিবার অভিযোগ দায়ের করেছে বাম মহিলা সংগঠনগুলি।
কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৭ অগস্ট বামেদের নবান্ন অভিযানে মহিলা বিক্ষোভকারীদের উপরে পুরুষ পুলিশকর্মীরা নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ। সেখানে কোনও মহিলা পুলিশকর্মী ছিল না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর জবাবে বক্তব্য জানাতেই রাজ্য প্রশাসনের ওই তিন শীর্ষ কর্তাকে দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, মহিলা বিক্ষোভকারীদের সামলানোর জন্য মহিলা পুলিশ থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ আক্রমণ করেছে। কমিশনের বক্তব্য, এই অভিযোগ সত্যি হলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হয়েছে।
এ নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের তরফে কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খোলেননি। তবে লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘সে দিন মহিলা পুলিশ রাখা হয়েছিল। তার প্রমাণও রয়েছে। কমিশনের চিঠির উত্তরে সে সবই আমরা জানাব।’’ কলকাতা ও হাওড়ার পুলিশকর্তাদের দাবি, মিছিলকে কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় আটকানো হবে, তা আগেই জানানো হয়েছিল। সেইমতো মিছিলের পথ আটকাতেই বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুড়তে শুরু করেন। বাঁশ-লাঠি নিয়েও আক্রমণ চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই পাল্টা লাঠি চালানো হয়।
বামেরা অবশ্য মনে করছে, কমিশন যে ভাবে রাজ্য প্রশাসনের ব্যাখ্যা চেয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক। ধর্মঘটের দিন বামেদের উপরে শাসক দল ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় মিছিল শুরুর আগে এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের যা কাজকর্ম, তাতে মানবাধিকার শুধু নয়, মহিলা, তফসিলি-সহ জাতীয় স্তরের সব কমিশনেরই সক্রিয় হওয়া উচিত। রাজ্যে এই ধরনের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তো সব এখন নিষ্ক্রিয়!’’
পুলিশকর্তারা আক্রান্ত হয়ে পাল্টা লাঠি চালনার কথা বললেও সে দিনের ঘটনার পরেই বামেদের অভিযোগ ছিল, বিনা প্ররোচনায় বিক্ষোভকারীদের উপরে পুলিশ আক্রমণ করেছিল। তার প্রতিরোধ করেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে ওই দিন কলকাতা-হাওড়ায় একযোগে পাঁচ-ছ’টি জায়গায় পুলিশ বনাম বিক্ষোভকারীদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বেধেছিল। পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছাড়াও জলকামান ব্যবহার করেছিল। পুলিশের লাঠি আঘাতে আহত হন বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী। তাঁদের মধ্যে এক জনকে চিকিৎসার জন্য আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জগমতী সাঙ্গোয়ান বলেন, ‘‘মহিলা পুলিশ ছাড়াই মহিলাদের উপরে হামলা করা হয়েছিল। মহিলাদের শরীরের এমন জায়গাতেও আঘাত করা হয়েছে যে, লজ্জায় তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারেননি। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে মহিলারা আক্রান্ত হলেও তিনি নীরব! জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ করে আমরা পশ্চিমবঙ্গকে সতর্ক করতে চেয়েছি।’’