মূল চক্রীদের চার-পাঁচ জন এখনও অধরা। ভারত বা বাংলাদেশের কোথাও তাদের হদিস নেই। জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ওই পান্ডারা গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় এ মাসেই খাগড়াগড়-কাণ্ডে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করতে চলেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
গত বছরের ২ অক্টোবর বর্ধমানের উপকণ্ঠে খাগড়াগড়ে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণের সূত্রে প্রকাশ্যে এসেছে পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক জিহাদি জঙ্গি-জালের অস্তিত্ব। এনআইএ-তদন্তে এ যাবৎ কুড়ি জন গ্রেফতার হয়েছে। ৩০ মার্চ তদন্তকারীরা খাগড়াগড়-মামলায় আদালতে যে চার্জশিট পেশ করে, তাতে অভিযুক্ত ২১ জন। আর জুলাইয়ের চতুর্থ সপ্তাহে যে পরিপূরক (সাপ্লিমেন্টারি) চার্জশিট দাখিলের পরিকল্পনা হচ্ছে, তাতে প্রাথমিক ভাবে পাঁচ-ছ’জনের নাম থাকবে বলে এনআইএ-সূত্রের ইঙ্গিত।
এবং তাদের অন্যতম হল নদিয়ার মির্জাপুর গ্রামের মতিউর রহমান, যে গত ২৭ জানুয়ারি ধরা পড়েছে। সেই হিসেবে মতিউরকে গ্রেফতারির ১৬০ দিন পেরিয়েছে। প্রসঙ্গত, বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা রুজুর সুবাদে খাগড়াগড়-কাণ্ডে গ্রেফতারির পরে চার্জশিট দিতে ১৮০ দিন (অন্য ক্ষেত্রে যা ৯০ দিন) সময় পাবেন তদন্তকারীরা। এর মধ্যে চার্জশিট না-হলে আদালতে ধৃতের জামিন হয়ে যেতে পারে।
খাগড়াগড়ের মূল চার্জশিটে বলা হয়েছিল, ২ অক্টোবরের বিস্ফোরণের নেপথ্যে পশ্চিমবঙ্গ-অসম-ঝাড়খণ্ডে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সন্ধান মিলেছে, যার পুরোভাগে রয়েছে জেএমবি। এনআইএ-র দাবি: বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করাই ছিল চক্রীদের লক্ষ্য। মূল চার্জশিটে নাম থাকা ২১ জনের আট জনকেই অবশ্য ফেরার হিসেবে দেখানো হয়, যাদের মধ্যে রয়েছে হাতকাটা নাসিরুল্লা, কওসর, মহম্মদ ইউসুফ, তালহা শেখের মতো জেএমবি-র ‘মাথা’রা।
তিন মাস কেটে গেলেও ওই ‘ফেরার’দের নাগাল মেলেনি। এ বার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট কাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হবে?
এনআইএ-র সূত্রের খবর: মতিউর ছাড়াও মুর্শিবাদাদের সমশেরগঞ্জের আবদুল ওয়াহাব মোমিন, নবগ্রামের মহম্মদ ইব্রাহিম শেখ ওরফে লাল্টু ও থানাপাড়ার জহিরুল শেখের নাম সেখানে থাকতে পারে। শিয়ালদহে ওয়াহাব ধরা পড়ে গত ২১ মার্চ, অর্থাৎ মূল চার্জশিট পেশের মাত্র ন’দিন আগে। তাই তার নাম মূল চার্জশিটে দেওয়া যায়নি। ইব্রাহিম পাকড়াও হয় ১৮ এপ্রিল, ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ে। তত দিনে চার্জশিট জমা পড়ে গিয়েছে। জহিরুল অবশ্য গোড়া থেকেই ফেরার। আর মূল চার্জশিট পেশের মাস দুয়েক আগে ধরা পড়া মতিউরের নাম তখন রাখা হয়নি, কারণ গোয়েন্দারা তার বিরুদ্ধে আরও প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। একই ভাবে অসমের বরপেটায় ধৃত শাহনুর আলম ও শাইকুল ইসলামের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হলেও তাদের সঙ্গী রফিকুল ইসলাম সম্পর্কে কিছু ‘চমকপ্রদ’ তথ্য জোগাড় করতে গোয়েন্দারা এত দিন ব্যস্ত ছিলেন।
রফিকুলের নামও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে থাকতে পারে। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের তরিকুল ইসলাম, বীরভূমের নানুরের বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান ও সন্দেহভাজন বাংলাদেশি সালাউদ্দিন সালেহিনের মধ্যে কারও কারও নাম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এনআইএ-সূত্রের ইঙ্গিত।
খাগড়াগড়-মামলায় শেষ গ্রেফতারি গত ১৮ জুন। সে দিন হাওড়া স্টেশনের কাছে নুরুল হক ওরফে নইম এনআই-র জালে ধরা পড়ে। মুর্শিবাদের ডোমকলের বাসিন্দা নইমকে অবশ্য সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে রাখা হচ্ছে না। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আরও প্রমাণ দরকার। গোয়েন্দাদের একাংশ প্রথমে নইমকে বাংলাদেশের রফিক বলে ঠাউরেছিলেন, যাকে হাতে পাওয়ার জন্য লাখ টাকার ইনাম ঘোষণা হয়েছে। পরে ওঁদের ভুল ভাঙে।