ইউসুফের স্ত্রী আয়েষা
খাগড়াগড়-কাণ্ডের অন্যতম চক্রীর হদিস পেতে এখন তিনটি শিশুর খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা।
বিস্ফোরণের পরেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে শিমুলিয়ার মাদ্রাসা পরিচালক ইউসুফ শেখ। তার স্ত্রী আয়েষাও উধাও। তাদের তিন সন্তান কোথায়, তা জানতে গিয়ে ইউসুফের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির কিছু কথায় অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
সোমবার বর্ধমান সার্কিট হাউসে এনআইএ-র ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসার বলেন, “শিশু তিনটি কোথায়, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। পরিবারের লোকজন যে তথ্য গোপন করছেন, তা বোঝা যাচ্ছে। শুধু এখানে নয়, ভিন্ রাজ্যেও খোঁজ চালাচ্ছি।” ইউসুফের দুই ভাই ও শ্বশুরকে জেরার নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
বর্ধমানের মঙ্গলকোটে শিমুলিয়ার পাশেই কৃষ্ণবাটী গ্রামে ইউসুফের বাড়ি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে আয়েষার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ২০০৭ সালে ইউসুফ উত্তরপ্রদেশের এক মাদ্রাসায় পড়তে যায়। ফেরে বছর দুয়েক পরে। তার পরে নদিয়ার করিমপুরের বারবাকপুরে একটি মাদ্রাসায় পড়াতে গিয়েছিল ইউসুফ। ফিরে শিমুলিয়ায় বোরহান শেখের জমিতে নতুন মাদ্রাসা তৈরি করে। আয়েষাও সেখানে পড়াত।
বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা প্রায় নিশ্চিত, শিমুলিয়ার মাদ্রাসাটিতে জেহাদি প্রশিক্ষণ চলত। শিমুলিয়ার কাছেই নিগনে জমি কিনে আরও একটি মাদ্রাসা তৈরির চেষ্টায় ছিল ইউসুফ। পূর্বস্থলী থেকে ধৃত হাসেম মোল্লা এবং বোরহানের সঙ্গে ভাতারেও একটি জমি কিনেছিল সে। সেই জমির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে এনআইএ। ইউসুফ যেখানে মাদ্রাসা চালানো ছাড়া কিছুই করে না, তার কাছে এত জমি কেনা ও বাড়ি তোলার টাকা কোথা থেকে এল তা-ও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।
এনআইএ-র অফিসারদের ধারণা, ইউসুফ আসলে জঙ্গি-চক্রের নানা ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করত। তাকে ধরতে পারলে এই চক্রে কার কী ভূমিকা ছিল, তা অনেকটা পরিষ্কার হবে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে এনআইএ কর্তারা জেনেছেন, বিস্ফোরণের পরে সপ্তাখানেক খোলা ছিল ইউসুফের ফোন। সে নিজেও আশপাশের এলাকাতেই ছিল।
তখন পুলিশ ইউসুফের খোঁজে গেলে তার বাড়ির লোক দাবি করেন, আয়েষাকে নিয়ে সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। তিন ছেলেমেয়েকে তারা বাড়িতে রেখে গিয়েছিল। বাড়ির লোকেরাই তাদের মঙ্গলকোটের পূর্ব নওয়াপাড়ায় মামারবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এনআইএ তল্লাশিতে গেলে তাঁরাই আবার জানান, ইউসুফ-আয়েষা তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই গিয়েছে। পূর্ব নওয়াপাড়ায় ইউসুফের শ্বশুর জামাতুল্লা শেখও দাবি করেন, নাতি-নাতনিদের তাঁদের বাড়িতে পাঠানো হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে গোয়েন্দারা জেনেছেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পরে ইউসুফ ও আয়েষার তিন সন্তানকে কৃষ্ণবাটী ও পূর্ব নওয়াপাড়া দুই গ্রামেই দেখা গিয়েছে। দুই পরিবারের কাউকে এখনও আটক করা হয়নি। তবে প্রকৃত তথ্য জানতে গোয়েন্দারা দু’টি পরিবারকে এক সঙ্গে বসিয়ে জেরা করার কথা ভাবছেন।