প্রেসক্রিপশন যেন বোধগম্য হয়, উদ্যোগী নীতি আয়োগ

প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকদের হাতের লেখার ব্যাপারে কড়া হতে চলেছে নীতি আয়োগ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রেসক্রিপশনে খারাপ হাতের লেখার জন্য ইলাহাবাদ হাইকোর্ট তিন জন চিকিৎসককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৫২
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসকদের হাতের লেখার ব্যাপারে কড়া হতে চলেছে নীতি আয়োগ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রেসক্রিপশনে খারাপ হাতের লেখার জন্য ইলাহাবাদ হাইকোর্ট তিন জন চিকিৎসককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। তার পরেই আয়োগের এই উদ্যোগ।

Advertisement

নীতি আয়োগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সদস্য বিনোদ কুমার পাল দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমরা চিকিৎসক সংগঠনগুলিকে আলোচনায় ডেকেছি। প্রেসক্রিপশন বোধগম্য হতে হবে। এর জন্য হয় চিকিৎসককে স্পষ্ট করে ওষুধের নাম লিখতে হবে, অথবা কম্পিউটারে টাইপ করতে হবে।’’

মেডিকো-লিগাল মামলার ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপশনের গুরুত্ব যথেষ্ট। তা ছাড়া, কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের শর্তেও বলা রয়েছে, প্রেসক্রিপশন বোঝা না গেলে গ্রাহক প্রাপ্য বিমার টাকা পাবেন না। বিনোদবাবুর কথায়, ‘‘এটা ভাল চিকিৎসকের অন্যতম শর্ত। কারণ, প্রেসক্রিপশনে হাতের লেখা বুঝতে না পেরে দোকানদার ভুল ওষুধ দিতে পারেন, রোগী ভুল ওষুধ ভুল নিয়মে খেতে পারেন। তাতে তাঁর মৃত্যুও হতে পারে। অতএব, চিকিৎসকের হাতের লেখা ছেলেখেলার বিষয় নয়।’’

Advertisement

ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের পরেই ইনদওরের এমজিএম মেডিক্যাল কলেজ ঘোষণা করেছে, তারা হবু চিকিৎসকদের হাতের লেখা ভাল করার কৌশল আলাদা করে শেখাবে। দেশে চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ) সম্প্রতি বড় হাতের অক্ষরে বা কম্পিউটারে প্রেসক্রিপশন লেখার পরামর্শ দিয়েছে। সংস্থার সদ্য প্রাক্তন সভাপতি কৃষ্ণকুমার অগ্রবালের কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা যদি এই নির্দেশ না-মানেন, হাতের লেখা নিয়ে বিপদে পড়লে পাশে আর কাউকে পাবেন না।’’ আইএমএ-র রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সকলের কি মুক্তোর মতো হাতের লেখা? অদ্ভুত ভাবে সব ব্যাপারে চিকিৎসকদেরই খুঁত খোঁজা হবে। যাই হোক, আমরাও ডাক্তারবাবুদের শুধু বড় হাতের অক্ষরে ওষুধ লিখতে বলেছি।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সরকারি হাসপাতালে সব প্রেসক্রিপশন কম্পিউটারে চালু করা হবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই তা এখনও চালু করা যায়নি।

চিকিৎসকদের হাতের লেখা কেন খারাপ হয়? মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘আলাদা করে ডাক্তারদের হাতের লেখা খারাপ হয় না। সব ধরনের পেশাদারের মধ্যেই অনেকের হাতের লেখা খারাপ। কিন্তু যেহেতু প্রেসক্রিপশন প্রকাশ্যে আসে, তার উপর রোগীর জীবন নির্ভর করে, ফলে ডাক্তারবাবুদের হাতের লেখা নিয়ে সমালোচনা বেশি হয়।’’

অ্যানাসথেটিস্ট তাপস চক্রবর্তীর হাতের লেখা তেমন ভাল নয়। তিনি বলেন, ‘‘এই বয়সে তো শ্লেট পেনসিল নিয়ে মকশো করে লেখা ভাল করতে পারব না। তার থেকে কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট আউট নেব।’’ ইউরোলজিস্ট অনুপ কুণ্ডুর কথায়, ‘‘বড় হাতের অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখতে শুরু করে দিয়েছি।’’

দক্ষিণ কলকাতার এক নামী চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের হাতের লেখা মুক্তোর মতো। তিনি আবার ছ’-সাত রকম রঙের কালি ব্যবহার করে প্রেসক্রিপশন লেখেন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি তো ১৯৯৬ থেকে কম্পিউটারে প্রেসক্রিপশন করছি। এতে ভুল অনেক কম হয়, আর ডেটা ব্যাঙ্কও তৈরি হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন